ইনসাইড থট

মাই লর্ড, এবার আমরা বিব্রত বোধ করছি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/10/2017


Thumbnail

মাননীয় প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা এখন ঢাকাসহ সারাদেশের `টক অব দ্য টাউন`। সেটা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার সকালে তিনি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমানে চড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পৌছেছেন। সাত সকালে একজন ইন্টারনেট থেকে তার প্লেনের অবতরণের সময়ের স্ক্রিনশট এসএমএস করে পাঠালেন। ততক্ষণে অনেকের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে তিনি কোন শহরে এসেছেন? তার মেয়ে সিডনি না ক্যানবেরা থাকেন? অবশেষে জানা গেলো সিডনি নয়, তিনি ব্রিসবেনে এসেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবার মুহূর্তে তিনি সাংবাদিকদের হাতে একটা বিবৃতি ধরিয়ে দিয়েছেন। এতদিন জেনেছি তিনি অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু যাবার আগে তিনি জাতিকে জানিয়ে গেলেন তিনি অসুস্থ নন, বরং বিব্রত। ঠিক যাবার আগে কেন তিনি বললেন তিনি সুস্থ আছেন? কেন আগে বললেন না? দেশ থেকে ফেসবুকের ইনবক্সে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন এক ছোট ভাই। তার প্রশ্ন, যেখানে মিডিয়া জানল না, আপামর দেশবাসী জানল না, সেখানে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমেদ, রিজভী কিংবা জয়নুল আবেদীনরা কীভাবে জানতেন প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন? আমারো তাই মনে হয়েছে। কিসের ভিত্তিতেই বা বিএনপির আইনজীবী নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের হুমকী দিচ্ছিলেন? তবে কি বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে মাননীয় প্রধান বিচারপতি কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন?

প্রস্থানকালে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন,

তিনি বিব্রত তাই বিদেশ চলে যাচ্ছেন। তাঁর আশা অচিরেই সব ঠিক হবে। তার এ কথায় কেমন যেন খটকা লাগে! তিনি যদি পরিস্থিতি সামাল দিতেই প্রস্থান করেন, তবে বিমানে ওঠার ঠিক আগেই কেন বোমা ফাটিয়ে মাঠ গরম করে গেলেন? সব ঠিক করার জন্য তার নীরব থাকাই কি শ্রেয় ছিল না? এর আগে তিনি ভারতীয় এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার না দিয়ে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না। আবার সেই তিনিই সাংবাদিকদের হাতে লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে গেলেন তিনি অসুস্থ নন।

প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা নিয়ে যখন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তখন ঢাকার পত্রিকায় প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন কী তাঁর প্রতি সহকর্মী বিচারপতিদের আস্থার সংকট নিয়েও পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসব খবর মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। প্রকাশিত এসব সংবাদের কিয়দংশও যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে নৈতিকতার প্রশ্নে তাঁর আর প্রধান বিচারপতিরপদে আসীন থাকাটা মানায় না। পদত্যাগ না করে তবু তিনি ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে বেড়াতে গেছেন।

এদিকে তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কম্যুনিটির মধ্যে নানান কানাঘুষা শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকালীন তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। মেয়ের বাসায় অবস্থানকালীন তিনি জামায়াত-বিএনপির অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বাংলাদেশের সরকারের বিরূদ্ধে কোনো রকমের অপতৎপরতায় যুক্ত হন কী না, সেটা নিয়েও নানারকমের কথাবার্তা হচ্ছে। অথচ প্রধান বিচারপতির মত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদাধিকারী কারও বিরুদ্ধে এধরনের কোনো অভিযোগ উঠুক তা কারও কাম্য নয়।

এই লেখাটি যখন লিখছি, তখন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে বিদেশ যাবার প্রাক্কালে কিছু প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে এক বিরল বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরূদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা উঠেছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরূদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন এবং এর স্বপক্ষে বিভিন্ন দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিরা বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের ব্যাপারে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেয়ে তাঁর সঙ্গে আর কোনো বেঞ্চে বসতে অপারগতা জানিয়ে দেন। ফলশ্রুতিতে পদত্যাগের কথা বলেও তিনি ছুটি নিয়ে দেশত্যাগ করেন। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে সরকারবিরোধী এক বিশাল ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি জড়িত। তবে এ যাত্রায় নিজস্ব অসংখ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশত্যাগ করলেও তিনি সরকারবিরোধী চক্রান্তসমূহ থেকে দূরে সরে থাকবেন বলে মনে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকতে হবে।

পাশাপাশি বলতে চাই, মাননীয় প্রধান বিচারপতি, মাই লর্ড। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপনাকে ঘিরে যেসব আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি হিসেবে এবার আমরা কিন্তু আসলেই বিব্রতবোধ করছি!

 
ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। কবি ও সাধারণ সম্পাদক, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭