কালার ইনসাইড

সিনেমা নেই, এফডিসিতে তাহলে কী হয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/10/2017


Thumbnail

এই চিত্র এখনকার সময়ে অচেনা, গেটের সামনে মানুষের ঢল। এক নজর প্রিয় তারকাকে দেখার অপেক্ষা। ঠিক কবে এমন মানুষের ঢল দেখেছেন তা বলতে পারবেন? হয়তো কারও মৃত্যু অথবা বিশেষ কোনো দিন হলে কিছুটা ভিড় দেখা যায়। কারণ তখন যে তারকাদেরও আনাগোনা থাকে। বাকি সব দিন ফাঁকা। অচেনা এক স্থান। যেখানটায় তারকাদের বসবাস সেখানকে ঘিরে তো সাধারণ মানুষেরও এক ধরনের অনুভূতি কাজ করবে। কিন্তু ভিতরে যেমন ফাঁকা, তেমনি বাহিরের একই চিত্র।

একটা সময় এফডিসির ভেতরের রাস্তায়ও ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতো উৎসুক মানুষ। ফ্লোরগুলোর পাশ দিয়ে পার হওয়ার সময় ভেতর থেকে মারপিটের ঢিসুম ঢিসুম শব্দ, কিংবা কান্নার শব্দ কানে আসে না। ঝরনা স্পটের পানিও আগের মতো আর ঝরে না। সুইমিং পুলের চিরচেনা সেতুটিও নতুন নতুন গানের সঙ্গে সাজে না। হ্যাঁ, সিনেমা তৈরির এই কারখানায় এখন আর সিনেমার শুটিং-বাতি জ্বলে না প্রতিদিন। এফডিসির চিত্রটা অনেকখানিই বদলেছে।

দশ বছর আগেও এফডিসির বিভিন্ন ফ্লোর, চত্বর মিলে একই দিনে একই সঙ্গে ১০ থেকে ১৫টি ছবির শুটিং হয়েছে। একটা সময় এসে সেই সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকে। বর্তমান সময়ে সপ্তাহে এক কিংবা দুইটা ছবির শুটিং হয়। কোনো কোনো সময়ে মাসে এমন চিত্রের দেখা মেলে।

চেনা- অচেনার এফডিসিতে এখন সিনেমার শুটিংয়ে বদলে বিজ্ঞাপন, টিভি অনুষ্ঠান, গানের ভিডিওর শুটিং হয়। ফ্লোর গুলো সরব এসব নিয়ে।

সেদিনকার একচক্করে যা দেখা গেল, সচরাচর সন্ধ্যা নামার পর থেকেই এফডিসিতে লোকজন তেমন দেখা যায় না। মাঝে মাঝে শুটিং হলেও বড়জোর রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত চলে।

কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল এফডিসি সরগরম। ক্যান্টিনের পাশের ঘরেই চলছে ঢিশুম-ঢুশুম, শুটিং চলতে থাকায় ভেতরে যাওয়া বারণ। পরিচালক সমিতি পেরিয়ে ২ নং ফ্লোরের সামনেই দেখা গেলো মাহিয়া মাহি ও বাপ্পিকে। মাহী জানালেন, গাজী জাহাঙ্গীর পরিচালিত ‘প্রেমের বাঁধন’ ছবির শুটিং করছেন তারা।

ভেতরে দেখা যায়, মহল্লার মতো বিশাল সেট। দোকান পাট কতকিছু। এফডিসিতে এতবড় সেট সচরাচর দেখা যায় না। একটু সামনে আগালেই দেখা গেল তরুণ কন্ঠশিল্পী ফাহিম ও নবাগত নায়িকা মেঘলাকে। তারা একটি লাল গাড়িকে ঘিরে ধরে নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন।

ভাবলাম এটাও হয়তো কোন নতুন সিনেমার শুটিং। কিন্তু না জানা গেল এটা ফাহিমের একটি গানের ভিডিও। নির্মাণ করছেন সিনেমার পরিচালক সৈকত নাসির।

মান- অভিমান- দ্বন্ধ- নিষেধাজ্ঞা এফডিসিকে করেছে আরও স্থবির। শাকিব খান কিছুদিন আগে এফডিসিতে ফিরল। অপু বিশ্বাসও তার সিনেমার শুটিং করলেন। শুটিংয়ের বাতি কিছুটা জ্বলতে শুরু করলো। শাকিব ভারতে চলে গেলেন। অপুর শুটিং নেই।

মাসে বড়জোর ৮ থেকে ১০ দিন সিনেমার শুটিংয়ের বাতি জ্বলে এফডিসির ফ্লোরগুলোতে। তাহলে বাকি দিনগুলোতে কি বসে ছিল ফ্লোরগুলো?

জানা যায়, ‘বিভিন্ন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। আর এভাবেই টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে দখল হয়ে যাচ্ছে এফডিসির আঙিনা। এফডিসির মোট নয়টি ফ্লোরের মধ্যে পাঁচটি ফ্লোরই বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ঈদ এলে তো সেটা আরও বেড়ে যায়। প্রতিটা স্টুডিও চ্যানেলগুলো মাস হিসেবে ভাড়া নিয়ে রেখেছে। কোন ফ্লোর তো বছর হিসেবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিয়ে রেখেছে।’

তাহলে সিনেমা? সিনেমার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এফডিসিতে শুটিং খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমান সময়ে বছরে বড়জোর ৫০-৬০ টি ছবি নির্মাণ হয়। বেশির ভাগ ছবিরই বাজেট কম। তাও মুক্তির পর টাকা উঠে আসছে না। তাই অনেক পরিচালকই খরচ বাঁচাতে এফডিসির বাইরে শুটিং করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুটিং না থাকলে ফ্লোরগুলো খালি পড়ে থাকে। তখন ভাড়া দিলে সমস্যা কোথায়।’

প্রতিবছরই ফ্লোর ভাড়া বাড়ে। অধিক ভাড়ার কারণে যখন সিনেমার শুটিং বাইরে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ফ্লোরগুলো টেলিভিশনের দখলে চলে যাচ্ছে। চ্যানেলগুলোর কাছে খরচটা বড় বিষয় নয়। কারণ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর নিয়ে অনুষ্ঠানগুলো তৈরি হচ্ছে।’

 

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭