ইনসাইড টক

`পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিৎ`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/06/2021


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, অন্তত গ্রামে যেখানে করোনা নাই বা সংক্রমণের মাত্রা একেবারেই নিম্ন এসকল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিৎ। এসব এলাকায় আগে শুরু করলে এখন যে গ্যাপটা হয়ে গেছে সেটা হতো না। এটি পূরণ করার জন্য হলেও অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামে শুরু করা উচিৎ। 

করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং শিক্ষা কার্যক্রমের নানা দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। পাঠকদের জন্য ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান।

ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষামন্ত্রীও একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএইচ (মাস্টার্স অব পাবলিক হেলথ) করা।  তিনি পরিস্থিতিটি বুঝেন। আসলে যদি গত ৩০০ বছরের বড় বড় মহামারিগুলো পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সাথে সংক্রমণের হারের একটি পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। এটি কিন্তু ঐতিহাসিক গবেষণাতেই দেখা গেছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢালাওভাবে খোলাটা ঝুঁকিপূর্ণ।  কিন্তু আমরা মনে করছি আর কতদিন এভাবে চলবে। 

তিনি বলেন, আমি সব জায়গায় বলেছি যে, আমাদের সংক্রমণের পরিমাণ সারাদেশে একরকম না।  আমাদের যে উপজেলা এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলো আছে সেখানে করোনার সংক্রমণ অনেক কম। যদিও আমরা এমনিতেও একটি বৈষম্য তৈরি করে ফেলেছি।  ঢাকাসহ অন্যান্য বড় বড় শহরে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। ছাত্ররাও যোগদান করছে সেই সব ক্লাসে। কিন্ডার গার্টেন স্কুলেও অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে।  সমস্যা হয়ে গেছে গ্রামে। গ্রামে তো এইসব নেটওয়ার্কও নাই আবার ডিভাইসও নাই। ফলে এই বৈষম্যটা তৈরি হয়ে গেছে। এই বৈষম্যটা নিরষণের জন্য হলেও অন্তত গ্রামে যেখানে করোনা নাই বা সংক্রমণের মাত্রা একেবারেই নিম্ন এসকল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেখানে করোনাও নাই লেখাপড়াও নেই সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা উচিৎ। এসব এলাকায় আগে শুরু করলে এখন যে গ্যাপটা হয়ে গেছে সেটা হতো না। এটি পূরণ করার জন্য হলেও অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামে শুরু করা উচিৎ। 

তিনি বলেন, আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচটি ক্লাস।  এই পাঁচটি ক্লাস একদিনে আসবে না। সপ্তাহে পাঁচদিন পাঁচ শ্রেণীর ক্লাস হবে। আজকে যদি ওয়ান আসে তাহলে অন্য শ্রেণীর কেউ আসবে না।  ওয়ানের যারা আসবে তাদের স্কুলে যে কয়টি কক্ষ আছে সেই কয়টিতে সমান ভাগ করে বসাতে হবে এবং সব কয়জন শিক্ষক ওইদিন ওয়ানের ক্লাসই নিবেন ওই দিন। তাদেরকে এক সপ্তাহের কাজ দিয়ে দেওয়া হলো। আর গ্রামে যারা শিক্ষক আছেন তারা তো গ্রামেই থাকেন। ইচ্ছে করলে তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে পারেন।  এভাবেই প্রতিটি শ্রেণীভিত্তিত এক এক দিক এক এক শ্রেণীর ক্লাস নিতে হবে। আর প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভিভাকদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রাখতে হবে। এভাবে আমাদের অন্তত শুরুটা করা উচিৎ।  টিকা দিয়ে কমপ্লিট করতে আমাদের এক-দেড় বছর সময় লাগবে আর করোনাও সহজে যাচ্ছে না। অতএব শিক্ষকদের টিকা দিয়ে স্কুলগুলো খুলে দেওয়া এটি আমার পরামর্শ।

করোনার চেয়ে নির্বাচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ সিইসি`র এমন বক্তব্যের বিষয়ে আলোকপাত করে শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জানি না তিনি কি অর্থে বা কোন অর্থে বলেছেন এই কথা। এরকমভাবে মন্তব্য করার দরকার নেই। কোনটার থেকে কোনটা ভালো বা গুরুত্বপূর্ণ এটি তুলনা করার দরকার নেই। তিনি যদি বলতেন যে, নির্বাচন করা জরুরী, সেটা হতে পারতো।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করােনার মধ্যেও নির্বাচন হয়েছে। আমেরিকায় তো প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনও হয়ে গেল।  আর নির্বাচন ছাড়াও তো সংক্রমণ হচ্ছে।  আমার কাছে মনে হয়, তার বলার মধ্যে একটু সমস্যা হয়ে গেছে।  শিক্ষা বা নির্বাচন করোনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এভাবে বলার দরকার নেই।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কোনো না কোনোভাবে চালু করতেই হবে।

তিনি বলেন, রোটেশন করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলগুলো খুলতে হবে। অল্পবয়সী বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম।  শিক্ষদের টিকা দিয়ে নিতে হবে। আর বাচ্চাদের বিষয়টি রোটেশন আকারে হবে। ক্লাসগুলো রোটেশন করে নিলে কম সংখ্যক বাচ্চা স্কুলে উপস্থিত হবে। ফলে ঝুঁকি অনেক কম থাকবে।  বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এগুলো বাচ্চাদের মানানো সহজ হবে। বরং মানবে না উপরের দিকের শিক্ষার্থীগুলো।  তারা সবাই একজায়গায় আড্ডা দিবে। এক সঙ্গে বসে সবাই গান বাজনা করবে। সমস্যা হলে এদের নিয়ে হবে। বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা হবে না। আগে এদের নিয়েই আমরা শুরু করি।  তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা হলেও শুরু করা যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭