ইনসাইড আর্টিকেল

ইতিহাসের বিরল সাক্ষী বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/10/2017


Thumbnail

ইতিহাসের বিরল সাক্ষী হয়ে এখনো সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়িটি তৎকালীন জমিদারদের আভিজাত্যেরই বহি:প্রকাশ। কারুকার্যখচিত মনোমুগ্ধকর প্রতিটি ভবনের দেয়াল দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা কতটুকু সৌন্দর্য প্রিয় ও রুচিশীল ছিলেন। এই জমিদার বাড়ি ৫ একর ৩২ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর সুউচ্চ ভবন, দৃষ্টি নন্দন বিশাল দিঘি, ধ্বংসাবশেষ পুকুর ঘাটলা আজো সৌন্দর্যের আভাস ফুটিয়ে তোলে।

সুউচ্চ জমিদার বাড়ির প্রবেশ মুখে রয়েছে বিশাল দুটি সিংহদ্বার, যা পেরোলেই খোলা চত্বর। তারপরই রয়েছে জমিদার বাড়ির মূল ভবন। জমিদার বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে চারটি বিশাল ভবন, বন্দীশালা, গোলাঘর, রংমহল, দরবার হল, অন্দর মহল। আরও আছে অন্দর মহলের শানবাঁধানো চার ঘাটলা বিশিষ্ট একটি দিঘী ।



জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় থানাধীন বিনোদপুর ছিল বালিয়াটি জমিদারদের পূর্ব নিবাস। মহেশরাম সাহা নামে ছোট্ট এক কিশোর নিতান্তই ভাগ্যের অন্বেষণে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি আসেন এবং জনৈক পানের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকরি নেয়। পরবর্তীতে ওই বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে শশুরের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী হন। মহেশ রামের ছেলে ঘনেশ রাম লবণের ব্যবসা করে আরও উন্নতি লাভ করেন। ঘনেশরামের ঘরে গোবিন্দরামসহ চার ছেলে জন্ম গ্রহণ করে। গোবিন্দরাম বালিয়াটিতে বিয়ে করে এখানেই বসবাস শুরু করেন। গোবিন্দরামের চার ছেলে যথাক্রমে আনন্দরাম, দধিরাম, পন্ডিতরাম ও গোপালরাম। এই চার ভাই প্রথমে একসাথে এবং পরে পৃথক পৃথক ভাবে ব্যবসা শুরু করেন। উক্ত চার ভাই থেকেই বালিয়াটি গোলাবাড়ি, পূর্ব বাড়ি, পশ্চিমবাড়ি, মধ্যবাড়ি ও উত্তর বাড়ি নামে ৫টি জমিদার বাড়ির সৃষ্টি হয়।



আনুমানিক ১৭৯০ সালে চার ভাইয়ের মাধ্যমেই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে সপরিবারে ভারত চলে যান জমিদার। এরপরেই পরিত্যাক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে নেয়। পরে ২০০৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং তাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জমিদার বাবুরা বেশির ভাগ সময়ই রংমহলে কাটাতেন। রংমহলে তারা সুর, সরাব আর নর্তকীদের নৃত্যের ঝংকারে মগ্ন থাকতেন। বর্তমানে রংমহলের কক্ষটিতে শোভা পাচ্ছে জমিদারের ব্যবহার্য বিভিন্ন আসবাব পত্র। রংমহলে রাখা কাচের আয়না ও শ্বেত পাথরে দুটি গাভী খুব সহজেই সকলের দৃষ্টি কাড়ে।



জমিদার বাড়ি সর্ম্পকে স্থানীয় প্রভাষক সমরেন্দু সাহা লাহোর জানান, ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর এই জমিদার বাড়ির দায়িত্ব অধিগ্রহন করে। তারপর তারা পূর্বের আদলেই এটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। প্রতিনিয়তই এখানে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসে। জেলা শহর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং এটিকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হলে এখানে আরও প্রচুর পর্যটক আসবে। সেই সঙ্গে সরকারও পাবে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব।



বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে দায়িত্বরত প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রতিনিধি সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, জমিদার বাড়িতে দিন দিন দর্শনাথীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখানে এখন বিভিন্ন নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে ২০১০ সালে ১২ জুন জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে ধারণ করা হয়েছিল ইত্যাদির একটি বিশেষ পর্ব। ইত্যাদির ওই বিশেষ পর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, দেশে খুঁজে পাওয়া জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে বালিয়াটিই আয়তনের দিক থেকে সবচাইতে বড়।

ইতিহাসের বিরল সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কাছে দাবি জানায় স্থানীয়রা ।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭