কালার ইনসাইড

রাজাকার? উত্তরটা এ প্রজন্ম জানতে চায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/10/2017


Thumbnail

ঘটনার পুনরুত্থান: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে প্রয়াত চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানকে ‘রাজাকার’ মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। ইতিমধ্যে বক্তব্যের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে।

ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে খান আতাউর রহমান প্রসঙ্গে একটি পোস্ট দেন,‘বিশিষ্ট চলচ্চিত্রনির্মাতা ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে অপারগ হয়েছিলেন। যে ৫৫ জন বুদ্ধিজিবী ও শিল্পী ১৯৭১-এর ১৭ মে মুক্তিযুদ্ধকে ‘আওয়ামী লীগের চরমপন্থীদের কাজ’ বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিলেন দু:খজনক ভাবে খান আতাউর রহমান তার ৯ নম্বর সাক্ষরদাতা ছিলেন। @ ১৭মে ১৯৭১ দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকা দ্রষ্টব্য।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার ড.নীলিমা ইব্রাহীমকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্তানিদের প্রচার কার্যে সহযোগিতাকারীদের শনাক্ত করার জন্য। ১৯৭২-এর ১৩ মে নীলিমা ইব্রাহীম কমিটি যে তালিকা সরকারকে পেশ করেন সে তালিকায় ৩৫ নম্বর নামটি খানআতাউর রহমানের। তালিকাভুক্তদের সম্পর্কে কমিটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তালিকাভুক্ত শিল্পীদের ছয়মাস পর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ পুনর্বিবচনার সুপারিশ করা হয়। দ্রষ্টব্য - বাংলাদেশ বেতার তথ্য মন্ত্রনালয়ের নং জি ১১। সি-১। ৭২। ১৬/৬/৭২

একথা অনস্বীকার্য যে খান আতাউর রহমান একজন গুণী শিল্পী। তাঁর সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব কালে তাঁর চলচ্চিত্র সমূহ আমাদেরঋদ্দ্ব ও উজ্জিবীত করেছে । যেমন ‘সোয়ে নাদীয়া জাগো পানি’, ‘নবাব সিরাজদৌলা’ সহ অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আবার আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান, শহীদউল্লাহ কায়সারের মতো শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের স্বীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এবং শাহাদাত বরণ করেছেন।….’

নাসির উদ্দীন ইউসুফের বক্তব্যের রেশ ধরে পাওয়া যায় - তৎকালীন যে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী ১৯৭১-এর ১৭ মে মুক্তিযুদ্ধকে ‘আওয়ামীলীগের চরমপন্থীদের কাজ` বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছিলেন, দুঃখজনক-ভাবে খান আতাউর রহমান তার ৯ নম্বর সাক্ষরদাতা ছিলেন।

৫৫ জন বুদ্ধিজীবী! শিল্পী! ৯ নম্বর সাক্ষর দাতা! বইয়ের নাম- ‘একাত্তরের দালাল ও ঘাতকেরা কে কোথায়’ ইন্টারনেটে ই-বুক আকারে প্রকাশিত বইটির ১৪২থেকে ১৪৫ পাতা পর্যন্ত লেখা রয়েছে পুরো বিষয়টি এবং উক্ত ৫৫ জনের পেশাসহ নাম।

আমাদের বাকি কথা হবে শিল্পী তথা বিনোদন জগত থেকে উক্ত ৫৫ জনের মধ্যে ঠিক কত জনের নাম রয়েছে সেই তালিকায়, সেই প্রসঙ্গে। হিসেব হচ্ছে ২৪ জন। তাঁরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে। নামের ক্রমানুসারে দেখা যায়….

বইয়ের লিংক..

https://view.publitas.com/liberationwarbangladesh/ekaattrer-ghaatk-o-daalaaleraa-ke-kothaayy/page/72

২. প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, নাট্যকার

৬. নূরুল মোমেন, নাট্যকার।

৯. খান আতাউর রহমান, চিত্র পরিচালক।

১০. শাহনাজ বেগম, গায়িকা।

১২. ফরিদা ইয়াসমিন, গায়িকা।

১৩. আব্দুল আলীম, পল্লী গায়ক।

১৪. আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম, চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক।

১৫.এ এইচ চৌধুরী, পরিচালক ও প্রযোজক।

১৭. মুনীর চৌধুরী, নাট্যকার।

১৯. খোন্দকার ফারুখ আহমেদ, গায়ক।

২০. এস এ হাদি, গায়ক।

২১. নীনা হামিদ, গায়িকা।

২২. এম এ হামিদ, গায়ক।

২৩. লায়লা আঞ্জুমান্দ বানু, গায়িকা।

২৫. বেদার উদ্দিন আহমেদ, শিল্পী।

২৬. সাবিনা ইয়াসমিন, গায়িকা।

২৭. ফেরদৌসি রহমান, গায়িকা।

২৮. মোস্তফা জামান আব্বাসী, গায়ক।

৩৫. ফররূখ শীয়র, নাট্যকার।

৩৯. ফতে লোহানী, চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা।

৪২. মবজলুল হোসেন, নাট্যকার।

৪৭. আলী মনসুর, নাট্যশিল্পী।

৫৪. ফওজিয়া খান, গায়িকা।

৫৫. লতিফা চৌধুরী, গায়িকা।

এরকম ৫৫ জন যারা প্রত্যক্ষভাবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, তারা পরিস্থিতির শিকার পাকিস্তানি জান্তাদের পক্ষের বিবৃতিতে সাক্ষর দিয়েছিলেন। বাস্তবিক তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তাদের সন্তান ও পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। যেমন মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তা মীমাংসিত। তাঁর সন্তানরা সারাজীবন দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। গায়িকা শাহনাজ রহমতুল্লাহর ছোট ভাই জাফর ইকবাল একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

এ সম্পর্কে খান আতা জীবদ্দশায় ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। ‘এখনো অনেক রাত’ ছবির মহরত অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খান আতাউর রহমান বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালীন আমি একটি বিবৃতিতে সই করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সই করার আগে সেখানে আরেকটি সই দেখতে পাই। তাৎক্ষণিক তাকে ফোন দিই ‘আপনি সই করেছেন দেখছি ওরা অস্ত্রসহ এসেছে, আমি কি করব? টেলিফোনের ওপাশ থেকে জবাব আসে দিয়ে দেন। আমি সই করি। বিশ্বাস না হলে আজকে আমার মহরত উদ্বোধন করতে আসা কবি সুফিয়া কামালকে জিজ্ঞাসা করুন। (মাহবুব আজাদ রচিত খান আতাউর রহমান। বাংলাএকাডেমি। প্রকাশকাল ২০০১)।

১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্য যখন ঢাকায় হামলা করে তখন খান আতা গুলিস্তান অফিসে ইস্ট পাকিস্তান প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির বৈঠক করছিলেন। আক্রমণের কথা শুনে ইস্ট পাকিস্তানের স্থলে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে করেন বাংলাদেশ প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি। সভায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জহির রায়হান ও আলমগীর কুমকুম উপস্থিত ছিলেন। জহির রায়হান কিংবা আলমগীর কুমকুম নিশ্চয়ই একজন রাজাকারের সঙ্গে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের পর খান আতার আরও অনেক নিদর্শন রয়েছে যা বাংলাদেশের সপক্ষে।

‘জাগোহুয়া সাভেরা’ থেকে শুরু করে ‘জীবন থেকে নেওয়া’ পর্যন্ত তার সংস্কৃতি ভ্রমণ আমাদের সামনে তাকে তুলে ধরবে সহজেই।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭