নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 18/06/2021
কমিটি বিতর্ক যেন থামছেই না হেফাজতের। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কর্তৃত্ব গ্রহণ করে তিনি শফী পন্থীদের হেফাজত থেকে বের করে দিয়েছিলেন, পুরো কর্তৃত্ব নিয়ে ছিলেন হেফাজতের। এরপর তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে একটি নতুন কমিটি গঠন করেন যে কমিটিতে তিনি নিজেকে হেফাজতের আমির হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই কমিটিতে হেফাজতের উগ্রবাদীদের স্থান ছিল বেশি। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোট, জামায়াত এবং উগ্র মৌলবাদী দলের নেতৃবৃন্দকে হেফাজতের কমিটিতে ঢুকানো হয়েছিল। আর এই কমিটি গঠিত হবার পর থেকেই তারা সরকারবিরোধী একটি অবস্থান গ্রহণ করেন যার নেতৃত্বে ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। জুনায়েদ বাবুনগরীর উস্কানিতে এবং হুমকিতে সেই সময় ভাস্কর্য ইস্যু তৈরি করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা করে হেফাজত মাঠে নামে। সেই ভাস্কর্য ইস্যু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্তিমিত হলেও হেফাজত আবার নতুন ইস্যু তৈরি করে সরকারকে চাপে ফেলার জন্য।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসেন। সেই আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতের তাণ্ডব সৃষ্টির চেষ্টা করে। এখানেও সরকার সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিএনপি-জামায়াত এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের শক্তিশালী অংশ হেফাজতকে সেই সমঝোতায় যেতে দেয়নি। বরং তারা ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালায়। এরপর সরকার আস্তে আস্তে কঠোর অবস্থানে যায় এবং হেফাজতের উগ্রবাদী নেতা মামুনুল হক, আজিজুলসহ বিভিন্ন দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করে। এরপর হেফাজত পিছু হটে এবং হেফাজত তাদের কমিটি পুনর্বিন্যাস করার স্বার্থে জুনায়েদ বাবুনগরী কমিটি বিলুপ্ত করে দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, হেফাজতের এই সমস্ত অপকর্মের মূল হোতা জুনায়েদ বাবুনগরী। আর নিজে বাঁচার জন্যই তিনি সেসময় কমিটি বিলুপ্ত করেছিলেন। কিন্তু এই কমিটি বাতিল বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হলেও সেই কমিটিও হেফাজতের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ১১ সদস্যের এই কমিটি গঠন করার পরপরই হেফাজতের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এমনকি কমিটির অনেক সদস্য এই কমিটি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। ফলে জুনায়েদ বাবুনগরী নতুন সংকটে পড়েন।
হেফাজতের নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পর কমিটি নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়। এই কমিটির অন্তত ৮ জন সদস্য নিজেকে হেফাজতের কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে জানিয়েছেন এবং তাদেরকে না জানিয়েই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নতুন কমিটিতে বিতর্কিত কাউকে রাখা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে রাখা হয়নি। কিন্তু এই কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক ব্যক্তি বিশেষ করে জামাত পন্থী, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সহ বিভিন্ন উগ্রবাদী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ হেফাজতের কমিটিতে আছেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল যে আহমদ শফী পন্থীদের এখনো কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানী আলোচনায় এসেছেন এবং তিনি হেফাজতকে পুনঃসংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। বিভক্ত হেফাজতের ঐক্যের জন্য চেষ্টা করছেন জিহাদী সহ কয়েকজন নেতা। আর এই প্রেক্ষিতে হেফাজতের নতুন কমিটির উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে গত কয়েকদিনে হেফাজতের কিছু নেতৃবৃন্দ আলাদাভাবে বসেছেন এবং তারা জুনায়েদ বাবুনগরীকে বাদ দিয়ে জিহাদী এবং অন্যান্য অবিতর্কিত সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এই প্রক্রিয়া হলে হেফাজতের বর্তমান কমিটিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে। তবে বাবুনগরী পন্থীরা বলছেন এরকম সিদ্ধান্ত না হলে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গনের মুখে পড়বে হেফাজত।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭