ইনসাইড আর্টিকেল

ইতিহাসের মহাশিশু: শেখ রাসেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2017


Thumbnail

সে ছিল বাঙালির এক রাজপুত্র। তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বেগম ফজিলাতুনন্নেসা। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান ছিল, শেখ রাসেল। তাই সে ছিল সবার আদরের ধন। সবাই তার আবদার পুরণ করার চেষ্টা করতো। ১০ বছরের ছোট্ট রাসেলের কোঁকড়া চুল, মায়া মায়া চেহারা। ডাগর দুটি চোখ। দু‘চোখ জুড়েই হরেক স্বপ্নেরা খেলা করতো সারাদিন। ফুল পাখি গাছ-পালা তার ছিল ভীষণ প্রিয়। হয়তো মনের অজান্তেই চুপি চুপি তাদের সঙ্গে কথা বলতো শিশু রাসেল। পাখিরা তাকে কি গান শোনাতো ? জানতে বড়ো ইচ্ছে করে আজ।

১৯৬৪ সালের ১৮অক্টোবর ঢাকার চিরচেনা ৩২ নং সড়কের বঙ্গবন্ধুর ভবনে জন্মগ্রহন করে রাসেল। নতুন শিশুটির আগমনে বাড়িতে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে যায়। বড় চার ভাই-বোনের পর রাসেলের জন্ম সবাইকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। শেখ রেহানার জন্মের সাত বছর পর রাসেলের জন্ম একটা ‘উৎসব’ হয়ে ওঠে। কে তাকে কোলে নেবে, কে তাকে আদর করে চোখে কাজল পরাবে, কে পাউডার মাখাবে- এসবের মধ্যে দিয়েই একটু একটু করে রাসেল বড় হতে থাকে।

এর মধ্যে আবার পিতা শেখ মুজিবও কারাবরণ করতে থাকেন। জেনারেল আইয়ুব খানের চন্ডনীতি ও দু:শাসনে সারা দেশ তখন বিক্ষোভ আন্দোলন গড়ে উঠেছে। আর শিশু রাসেল মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে যেত পিতাকে দেখতে। পিতার আদর স্নেহ ও ভালাবাসা এভাবেই তাকে পরিপুষ্ট করে তোলে। বাড়িতে ভাই-বোনদের হাতে সে ছিল পুতুল। তারা তাকে সেভাবেই আদর করতো, সাজাত, ছবি তুলতো, খাওয়াতো আর তার সাথে খেলা করতো। শিশু রাসেল ছিল সবার চোখের মনি এবং রূপকথার রাজপুত্তুর। এছাড়া ভাবীরাও ভীষন আদর করতো রাসেলকে। আর মা ছিল তার একমাত্র আশ্রয়। তার কাছেই যত আবদার, তার সাথেই যত অভিমান। মায়ের আঁচলের ছায়ায় রাসেল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেন পিতাকেও স্বপ্নে দেখতো। রাসেল- এ নামটি বাবার দেওয়া।

বাবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত লেখক-দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল। বাবা জানতেন তার এই ছোট্ট ছেলেটি ও একদিন আপন প্রতিভায় দীপ্ত হয়ে উঠবে। না, রাজনীতি নয়- সে হোক অন্য কিছু। লেখক, দার্শনিক কিংবা বড়ো বিজ্ঞানী অথবা বিশ্ব শান্তির নতুন কান্ডারি। বাবার জানাটা কি মিথ্যে ছিল? কি করে মিথ্যে হয়? এই বাবাই তো বলেছিলেন ‘এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ তিনি সব জানতেন। জানতেন একদিন এদেশ মুক্ত হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালি বিশ্ব দরবারে মহিমান্বিত হয়ে উঠবে। তাইতো হয়েছে। তাহলে তাঁর ছোট্ট ছেলেটি রাসেলের বেলায় তার ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যে হবে কেন? বাবা যেখানে গিয়েছেন সঙ্গে নিয়েছেন রাসেলকেও। জাপান, ভারত, যুগোশ্লাভিয়া- রাসেল ঘুরেছে বাবার সঙ্গে। রাসেল বাইরের পৃথিবী আগেই জেনে নিক, এটাই ছিল বাবার প্রত্যাশা।

রাসেল সে সময় পড়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে। মাঝে মাঝে রাসেল স্বপ্নমাখা দু‘চোখ মেলে তাকাতো নি:সীম আকাশের দিকে। দৃষ্টি যেন ছুটে যেত অসীম নি:সীমে। কল্পনার তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে দুরন্ত পঙ্খীরাজের পীঠে চেপে উড়ে যেত স্বপ্নপুরীর কোন দেশে। তার নিষ্পাপ হাসি, মিষ্টি কথা যে কারো হৃদয় কেড়ে নিত এক নিমিষে। শিশুরা যে স্বর্গের দূত, তার প্রমাণ মিলত রাসেলের নিস্কলঙ্ক অবয়ব দেখে। অক্টোবর মাস শেখ রাসেলের জন্ম মাস। আজ বেঁচে থাকলে শেখ রাসেল ৫৪ বছরের পূর্ণ মানুষ হতো। হয়তো বার্ট্রান্ড রাসেলের মতো কিংবা তার মতোই হতো- যেমনটি তার বাবা প্রত্যাশা করেছিলেন। রাসেল বড় হলে কী হতো আমরা তা জানি না। ঘাতকের দল আমাদের তা জানতে দেয়নি।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাড়িটা কি আজো কাঁদে রাসেলের শোকে? ভাবতেই দু’চোখ ভিজে যায় জলে। আমাদের কাছে একটি বিশেষ দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের সেই কালরাত। শিশু রাসেল মায়ের কোল ঘেষে ঘুমিয়ে ছিল। হয়তো স্বপ্ন দেখছিল এক সুখী রাজকুমারের মতো। কিন্তু তা ছিল দু:স্বপ্ন। মানুষ নামের কতিপয় মুখোশধারী নিষ্ঠুর ঘাতক তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল। মা-বাবার সঙ্গে সপরিবারে নিহত হলো শিশু রাসেল। আমরা বিশেষভাবে এদিনটি পালন করে থাকি। দিনটি এদেশের শিশু কিশোরদের কাছে যেমন শোকের, তেমনি বেদনারও বটে।

রাসেল আমাদের কাছে একটি নিষ্পাপ শিশুই রয়ে গেছে এবং থাকবে চিরদিন। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর-তরুণদের কাছে ভালবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক স্বত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনা সম্পন্ন মানুষরা শেখ রাসেলের বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই দেশবাসী এখন শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার। আমরা শেখ রাসেলকে আজও ভুলিনি, ভুলবো না কোনদিন। ইতিহাসের মহাশিশু হয়েই শেখ রাসেল বেঁচে থাকবেন আপামর গ্রাম-বাংলার সবার হৃদয়ে। তার জন্মদিনে আমাদের হৃদয়ের অর্ন্তস্থল থেকে জানাই গভীর ভালোবাসা।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭