ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া কি করবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/06/2021


Thumbnail

গতকাল ৫৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর বেগম খালেদা জিয়া তার ফিরোজার বাসায় চলে গেছেন। ফিরোজার বাসায় থেকেই তিনি পরবর্তী চিকিৎসাগুলো নিবেন বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। দুদিন আগেও বিএনপি নেতারা বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার কিডনি, লিভার এবং হার্টের অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য যে সবসময় লাগামহীন এবং চরমপন্থার বক্তব্য তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। কারণ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের ৪৮ ঘন্টা পর বেগম খালেদা জিয়া তার বাড়িতে ফিরে গেলেন। বেগম জিয়ার পরিবারের সূত্র থেকে বলা হচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল। তার যে বাকি চিকিৎসা সেই চিকিৎসা তিনি বাসায় থেকেই নিবেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিয়েছেন এরইকম একজন এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুস্থতা রয়েছে তার সবই বার্ধক্যজনিত এবং খুব জটিল কিছু নয়। আর এরকম বয়সে এই ধরনের রোগ-শোক থাকাই স্বাভাবিক। বেগম খালেদা জিয়াকে এখন রোগ-শোক নিয়ে থাকতে হবে। আর এইরকম মতামতের প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার আপাতত বিদেশে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সূত্র বলছে যে, আগামী সেপ্টেম্বরে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ছয় মাস মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা এই সময়টুকু অপেক্ষা করবেন এবং তারপর তারা নতুন করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবেন। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন বলেছেন যে, এখন সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি এবং এবং যে নিষেধাজ্ঞা সেই পরিস্থিতির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়াটা তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। কাজেই এখন বেগম জিয়া বাড়িতেই যে চিকিৎসা নেবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত।

বেগম খালেদা জিয়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে যখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে তখন একটি নতুন প্রশ্ন সামনে এসেছে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত। বেগম খালেদা জিয়া কি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থাকবেন নাকি তিনি অবসরে যাবেন নাকি এখন যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকবেন। এই প্রশ্নগুলো বিএনপির নেতাকর্মীদের। তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার একটি পরোক্ষ ভূমিকা না থাকলে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরেই বিএনপি আবর্তিত। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির রাজনীতিতে মূল ব্যক্তি বেগম জিয়া। কিন্তু বেগম জিয়া ২০০১ সালের পর থেকে দলের ভিতরে আস্তে আস্তে কোণঠাসা হতে শুরু করেন। বিশেষ করে তার ছেলে তারেক রহমান বিএনপিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছেন এবং আস্তে আস্তে দলের পুরো কর্তৃত্বই তিনি গ্রহণ করেছেন। আর এটি বিএনপির ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দীর্ঘ দিনের পুরনো নেতারা পছন্দ করছেন না। তারা মনে করছেন যে, তারেক জিয়া দলকে ডুবাচ্ছেন এবং তারেক জিয়ার কারণে বিএনপি`র আজকে এই অবস্থা। এরকম প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার কিছুটা হলেও ভূমিকা প্রত্যাশা করেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন তারা মনে করে তারা বলেছেন যে বেগম খালেদা জিয়া কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না এবং এটি বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই বলে তারা জানিয়েছেন।

বেগম জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন যে, কোনো রকম মুচলেকার নয় বা সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার জন্য। কাজেই, বেগম খালেদা জিয়ার যে রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল যে, বেগম জিয়া যে রাজনীতিতে নেই এটির ব্যাপারে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিবেন। এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতারা যেমন এ প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তেমনি বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া কৌশলগত কারণে তার রাজনীতিতে অবসর গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি যদি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন তাহলে যেমন বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার তিনি যদি ঘোষণা না দেন তাহলে তার বিদেশ যাওয়ার শেষ সম্ভাবনাটুকু নাকচ হয়ে যাবে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া এখন ফিরোজায় থেকে নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে নিজের চিকিৎসা নিতে চান। এটি আগামী কিছুদিন বেগম খালেদা জিয়ার গন্তব্য বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭