ইনসাইড বাংলাদেশ

গ্রামীণ জনপদের আস্থায় ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2017


Thumbnail


মেজো ছেলের পাসপোর্টের ভেতরের দরকারি পাতাগুলোর ছবি তুলে মাস তিনেক আগে কুয়েতে ছোট ছেলের কাছে পাঠিয়েছেন সায়েদ মাতবর। এরইমধ্যে ছেলের বিদেশ যাওয়ার প্রায় সব ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের প্রতি আস্থার কারণ বলতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি।

গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদেনি মন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই চায়ের দোকানে বসে এই প্রতিবেদকের কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বয়সে প্রবীণ সায়েদ মাতবর জানালেন, শ্রমিক হিসেব তাঁর মেজো ছেলের বিদেশে যাওয়ার প্রায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন শুধু ফ্লাইটের তারিখ পড়ার অপেক্ষা।

কথার প্রসঙ্গে তিনি বললেন, পাসপোর্টের এইটুকু কাজের জন্য সাত হাজার টাকা চেয়েছিল ‘আদম অফিস’। পরে বাড়ির কাছে কুমার ভোগ ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে তা পাঠিয়েছিলেন প্রায় বিনা খরচে। কারণ ঢাকায় আসতে যেতে যা খরচ হতো, এখানে তাও খরচ হয়নি তাঁর।

উপস্থিত মাজহারুল ইসলাম বললেন, সাম্প্রতিক ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর মেয়ের শ্বশুর বাড়ি জেলার শ্রীনগরের আটপাড়ায়। মেয়ের জামাই আছেন কর্মস্থল লালমনিরহাটে। হাইকোর্টে তাঁদের একটি মামলা আছে। আইনজীবীর সহকারী খবর পাঠিয়েছেন, পরদিন মামলা আদালতে উঠবে। ষাট হাজার টাকা নিয়ে যেন এর আগেই পৌঁছে যান আইনজীবীর চেম্বারে। তবে মাজহারুল ইসলাম নিজ ইউনিয়ন মেদেনি মন্ডলের তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে বিষয়টি বলেছেন। তারা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট দেখে তাঁকে আশ্বস্ত করলেন। তিনিও মেয়েকে নিশ্চিন্ত করলেন, ওইদিন যেসব মামলা আদালতে উঠবে তাতে তাদের মামলা নেই। তাই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আর নিজেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ বয়স্ক মানুষটিকে মেয়ের প্রয়োজনে অসুস্থ শরীর নিয়ে অযথাই ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে হতো। অথবা রাজধানী থেকে দূরের জেলা লালমনিরহাট থেকে তাৎক্ষণিত মেয়ের জামাইকেই আসতে হতো ঢাকায়।

সবমিলে এমন নানা অভিজ্ঞতায়  গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে আজ আস্থা ও ভরসার ঠিকানা ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশে বা বিদেশে বসে নানাজন নানাভাবে পাচ্ছেন ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের সহযোগীতা।

মেদেনি মন্ডল ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. রাকিব হোসেন বললেন, গড়ে প্রতিদিনই এখান থেকে ৮-১০ জন বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়ে থাকে। তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া হলেও সবচেয়ে বেশি কাজ হয় জন্ম নিবন্ধনের। তবে জন্মসদন নেয়ার বিষয়টি এখন অনেক জটিল হওয়ার কারণে, সেবা গ্রহীতার সংখ্যাও কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তাছাড়া তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন রকম সনদ প্রদান, ই-মেইল পাঠানো বা পড়া, ইন্টারনেট ব্যবহার, ছবি তোলা, অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি ফরম পূরণ, জমির খতিয়ানের আবেদন ও সরবরাহ, মোবাইল ব্যাংকিং, জীবন বীমা, বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ, বিমানের টিকিট করা, পরীক্ষার ফলাফল জানাসহ বিভিন্ন সেবা দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও ইউএনডিপির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক যৌথভাবে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর দেশব্যাপী ৪ হাজার ৫০১ টি ইউনিয়নে তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। ১৩ ধরনের সেবা দিয়ে শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে নানামুখী আরও সেবা দিয়ে এই আস্থা অর্জন করেছে তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো।

বাংলা ইনসাইডার/এমএএম/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭