ইনসাইড বাংলাদেশ

কালভার্ট বন্ধে ৬শ একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2017


Thumbnail

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নে একটি কালভার্ট বন্ধ করায় ১০ গ্রামের প্রায় তিনশ কৃষক বিপাকে পড়েছেন। জলাবদ্ধতায় পড়েছে ৬০০ একর কৃষিজমি। এর ফলে জমিতে ইরি ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল আবাদ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানালেও এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাউটিয়া-চরগড়পাড়া সড়কের ডাউটিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত কালভার্টটির এক প্রান্তে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে ওই এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। কালভার্টের অপর প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে মাটির রাস্তা। কালভার্টটি বন্ধ করার কারণে বড় ডাউটিয়া, রমনপুর, বাগজান, কড়চাবাঁধা, মুলজান, রৌহাদহ, শুশুন্ডা, ডাউলি, খানপুর, চরগড়পাড়া গ্রামের মধ্যেকার ৬০০ একর আবাদী জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অভিযোগ, গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন গতবছর সরকারি টাকা খরচ করে মাটির রাস্তা নির্মাণ করেই ওই কালভার্টের এক প্রান্তে বন্ধ করে দিয়েছেন। আর তারই ইন্ধনে ওই এলাকার দুলাল প্রামাণিকসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং ওই কালভার্টটির পানির প্রবেশ মুখে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বন্ধ করেছেন। এই কারণে ৬শ একর জমিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাচ্ছে না। এছাড়া খাল দখল করে বসত-বাড়ি নির্মাণ করার ফলে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে সেখানকার পানি পঁচে নানাধরণের রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে।

এসব বিষয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ডাউটিয়া গ্রামের কৃষক মো. মোয়াজ্জেম খান। একই তারিখে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অনুরূপ অভিযোগ করেন একই গ্রামের আরেক কৃষক মো. মুনছের আলী।

ডাউটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক ও ডাউটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ খান বলেন, ডাউটিয়া বাজর সংলগ্ন এলাকায় কালভার্ট বন্ধ করার ফলে প্রায় ৬০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এতে প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক মারাত্মকভাবে বিপাকে পড়েছেন। এসব জমিতে ফেব্রুয়ারি-জুন মাসে ইরি, জুলাই-অক্টোবর মাসে রোপা আমন ও পাট এবং নভেম্বর-জানুয়ারি মাসে সরিষা, ভুট্টা, গম, আলু, বেগুন, পটল, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়। কিন্তু ওই কালভার্টটি বন্ধ করার পর শুধু ইরি ছাড়া অন্যান্য ফসলের আবাদ করা যাচ্ছে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অভিযোগকারী মুনছের আলী বলেন, তিনি তার ৭ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তার ধান পচে গেছে। এই আবাদ করতে তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার মতে, এই ৭ বিঘা জমিতে ৭০ মন ধান হলে তিনি তা বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা আয় করতে পারতেন।

অভিযুক্ত মেম্বার দেলোয়ার হোসেন বলেন, জনগণের চাহিদার কথা চিন্তা করেই ওই স্থানে মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কালভার্ট বন্ধ হয়ে ৬শ একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, এটা তিনি বুঝতে পারেননি।

অভিযুক্ত দুলাল প্রামানিক ও জসিম উদ্দিন বলেন, খাল ভরাট করে সবাই বাড়ি-ঘর তৈরি করেছেন। সবাই ভেঙ্গে দিলে তারাও ভেঙ্গে দিবেন বলেন জানান। কালভার্টটির মুখ কংক্রিট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে যাতে সেখানে পানি ঢুকে নতুন মাটির রাস্তা ভেঙ্গে না যায়।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, তিনি তদন্ত করার জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জেতী প্রুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭