ইনসাইড বাংলাদেশ

‘নো লস, নো প্রফিটে’ চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/10/2017


Thumbnail

মরণব্যাধী একটি রোগ। যার নাম শুনলেই গা শিউরে উঠে। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করে। ক্যানসার। মরণ ঘাতক ক্যানসারের চিকিৎসায় বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেওয়ায় উত্তরায় অবস্থিত আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্যানসারের চিকিৎসায় অগ্রদূত হাসপাতাটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ক্যানসার নিয়াময়ে প্রথম তালিকায় রয়েছে মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, এর পরেই রয়েছে ১৫ তলা বিশিষ্ট ৫০০ শয্যার আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালটি। সেবা কার্যক্রম ও ক্যানসার বিষয়ের নানাদিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালটির পরিচালক, মেডিকেল সার্ভিসেস এবং রেডিয়েশন অনকোলজি (ক্যানসার) বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান চৌধুরীর। 

আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে কবে থেকে জড়িত? 

অনেক আগে থেকেই এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত। তবে ২০১৬ সাল থেকে আমি পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করি। সর্বশেষ হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল সার্ভিসেস এবং রেডিয়েশন অনকোলজি (ক্যানসার) বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। 

বাংলাদেশে অনেক ক্যানসার হাসপাতাল রয়েছে সেই তুলনায় আপনাদের হাসপাতালের বিশেষত্ব কী? 

বাংলাদেশে যে সমস্ত হাসপাতালগুলো রয়েছে অধিকাংশই হাসপাতাল আর্কিটেকচার ডিজাইন অনুযায়ী করা হয়নি। অর্থ্যাৎ পরিবেশের সঙ্গে মানানসই নয়। সেই হিসেবে আমাদের হাপাতালাটি অনেক এগিয়ে রয়েছে। এখানে সুস্থ্য পরিবেশের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকটি স্খানেই নির্ধারিত স্পেস রাখা হয়েছে। হাসপাতালের চেম্বার গুলো কেমন হওয়া উচিত, রোগী ঢুকতে পারবে কিনা, হুইল চেয়ার ঢুকতে পারবে কিনা রোগীদের জন্য ওয়ের্টিং রুম কেমন হবে বারিসিপসন রুমের জন্য কতটুকু জায়গা থাকবে, সবকিছু মিলিয়ে যদি বলি আমাদের হাপাতালে পর্যাপ্ত স্পেপ গুলো রেখেই এটা নির্মাণ করা হয়েছে। ক্যানসারপেশেন্ট অন্যান্য স্বাভাবিক পেশেন্টের মত নয় । তারা অনেক সমস্যা নিয়ে আসে। সেই পেশেন্ট গুলোর জন্য একাটা ভালো পরিবেশ দরকার। সেই বিষয়গুলো দৃষ্টি রেখেই হাসপাতালটা করা হয়েছে। দেশে বিদ্যমান অনেক হাসপাতালই দেখবেন যে হোটেলকে কনভার্ট করে তৈরি করা হয়েছে, আবার এরকম দেখা যাবে যে বাসা করা হয়েছিল সেটিকেও হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। কিন্ত আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে সেই অর্থে অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমাদের হাসপাতালে মোট ৫০০শ বেড রয়েছে। যার মধ্যে শুধু ক্যানসার রোগীদের জন্য ৩০০শ বেডই নিধারিত।বাংলাদেশ অনেক হাসপাতাল ক্যানসারের চিকিৎসা করে। এর মধ্যে অধিকাংশ হাসাপাতালেই শুধু নামে মাত্র ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

একজন রোগীর সেবার ক্ষেত্রে আপনারা কতটুকু সহযোগী?

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালের পরে সবচেয়ে বড় নন প্রফিট অর্গানাইজেশন হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা রোগীর সেবাটাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে টাকাটাই প্রধান নয় সেবাটাই প্রধান। এখানে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনো ফি নেওয়া হচ্ছে না। নামে মাত্র একটা চার্জ নেওয়া হচ্ছে। সর্বগুলো চার্জের ওয়ান থার্ড নেওয়া হচ্ছে। অর্থ্যাৎ অন্য হাসপাতালে কোনো রোগী ১০০ টাকায় যে সেবা পাবে আমরা ৩০ টাকায় সেই মানের সেবা দিচ্ছি। শুধু মেশিন মেইনটেইন চার্জ, কর্মচারীর বেতন এবং আনুসাঙ্গিক বিল সেটাই নেওয়া হয়। নো লস নো প্রফিট অঙ্গিকার নিয়ে আহসানিয়া মিশনহাসপাতাল রোগীদের উন্নতমানের সেবা দেওয়া হচ্ছে। 

ক্যানসারের পরীক্ষা- নিরিক্ষা করার জন্য আপনা কি ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন? 

আমাদের রেডিয়েশন অনকোলজি (ক্যানসার) বিভাগে বিশ্বমানের প্রযুক্তির দ্বারা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি ও ব্রে-থেরাপিরমাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কেমোথেরাপির জন্য এখানে রয়েছে বিশ্বমানের সিরিঞ্জ পাম্প, মেডিসিন ও ইনজেকশনের ব্যবস্থা। রেডিও থেরাপিতেকনভেনশনাল থ্রিডিসিআরটি, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন,আইজিআরটি, আইএমআরটি, এসআরএস, এসআরটিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করাহচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালটিতে রয়েছে ইমারজেন্সি বিভাগ যেখানে ২৪ ঘন্টায় রয়েছে দায়িত্বর ডক্টররা। মহিলাদের জরায়ু ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রয়েছেউন্নমানের লিনাক মেশিন। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিতে এখানে ব্রেকি থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে ক্যানসার রোগীদের ব্রেকিথেরাপির জন্য সময় লাগে ১৫/২০ ঘণ্টা, সেখানে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে উত্তরাস্থ আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে বিশ্বের সর্বাধুনিকপ্রযুক্তিতে মাত্র কয়েক মিনিটেই এই থেরাপি প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে। 

অসহায় দুস্থ রোগীদের জন্য আপনারা কী ধরেন সুবিধা দিচ্ছেন? 

আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৩০ পারসেন্ট রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া আমাদের অন্যান্যহাসপাতালের তুলানায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়েও কম খরচে চিকিৎসা দিচ্ছি । যেটাবাংলাদেশে বিরল । এতো কম মূল্যে আর কোথাও ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের অধিকাংশ রোগীই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারেরতারা দেশের বাইরে যেয়ে চিকিৎস্যা নিতে পারে না । আবার অনেকের চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ নেই। সেই অর্থে তাদেরকে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা দিয়ে আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে। 

ক্যানসার সচেতনতার জন্য আপনাদের কোনো ধরনের ক্যাম্পেইন করছেন কিনা?

আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যানসার উপরে ক্যাম্পেইন চলছে। বিশ্ব ব্রেস্ট ক্যানসার ২০১৭ উপলক্ষে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে আগামী ৩১ শেঅক্টোব পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কিত সকল পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ৩০ পারসেন্ট পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিভার্সিতে ব্রেস্ট ক্যানসারনিয়ে সচেতনামূলক প্রগাম করে থাকি। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছি।

হাসপাতাল নিয়ে আপনাদের মিশন?

আমাদের মিশন হচ্ছে স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসারের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। এবং আমাদের চিন্তাভাবনা হলো উত্তরা এলাকা বা এর আশেপাশের তিন থেকে চার মিলিয়ন রোগীকে যেন ক্যানসারের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারি আমরা সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

[প্রতিবেদনটিতে হাসপাতাল সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ফিজিশিষ্ট মোহাম্মদ শাহীন মিয়া।]

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭