ইনসাইড হেলথ

করোনায় পথহারা বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/06/2021


Thumbnail

আজ বৃহস্পতিবার করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের সর্বাত্মক ‘শাট ডাউনের’ প্রস্তাব দিয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে, এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। এর ফলে করোনা মোকাবেলায় নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। করোনা মোকাবেলার সর্বময় ক্ষমতা কার? জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের -এই প্রশ্ন আবার উঠেছে। আর এর ফলে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে পথ হারিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোন কৌশল নেই, কেবলমাত্র আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা গণনা এবং মৃত্যুর সংখ্যা গণনা ছাড়া করোনা নিয়ে কোন কার্যক্রম নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখার যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে সেই কৌশলও কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে কি হবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ করোনাতে যেন কোন কৌশলহীন। আর করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে:

১. করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই: বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কৌশলগত দক্ষতা দরকার সেই কৌশলগত দক্ষতার ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে যখন ভারতীয় বেরিয়ে এলো তখনই সীমান্ত এলাকাগুলোতে লকডাউন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। বরং এখন যখন করোনা পরিস্থিতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তখন লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। এই লকডাউনের আগেই সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন এই লকডাউনগুলো কতটুকু কার্যকর করা হবে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউনের নামে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চলছে অথচ সবকিছুই স্বাভাবিক। এ রকম পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে এই কৌশলগত ত্রুটি একটি বড় সমস্যা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২. সমন্বয়হীনতা: করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে পথ হারিয়েছে তার প্রধান কারণ হলো সমন্বয়হীনতা। কোন কাজ কে করবেন সেই ব্যাপারে কোন সমন্বয় নেই, পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা বলা হচ্ছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী লকডাউন সম্পর্কে ঘোষণা দিচ্ছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দর্শকের আসনে বসে আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের যে সমন্বয় সেই সমন্বয়ের অভাব প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

৩. টিকা সংকট: বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলার জন্য গণটিকা কর্মসূচি চালু করেছিল। গণটিকা কর্মসূচি হলো করোনা মোকাবিলায় একমাত্র উপায় যেটি বিশ্বব্যাপী এখন স্বীকৃত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ একপাক্ষিক টিকা নীতির ফলে এখন টিকা সংকটে ভুগছে। কবে টিকা পাবে সে নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট আশার বাণী কেউ শোনাতে পাচ্ছেন না।

৪. হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সংকট: করোনা সংক্রমণ যতই বাড়ছে ততই হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল এবং চিকিৎসার উপকরণ নেই। সেখানকার পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। যখন প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে গেল তখনই যদি বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিত তাহলে পরিস্থিতি এরকম হত না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী গত বছরে করোনা মোকাবেলার জন্য প্রতিটি জেলায় আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। যার ফলে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সামনে কি হবে সে নিয়ে এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

৫. চিকিৎসা উপকরণের সংকট: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর এখন চিকিৎসা উপকরণের সংকট দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সিএমএইচডি’তে অধিকাংশ জরুরী চিকিৎসা উপকরণেরই মজুদ শেষ বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, করোনা টেস্টিং কিটের সংকট দেখা দিয়েছে, রেমিডেসিনের ইনজেকশনের সংকট রয়েছে, সংকট রয়েছে ভেন্টিলেটরের।

আর এরকম পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে কি অবস্থা হবে সেটি নিয়ে শঙ্কিত। করোনা মোকাবিলার জন্য দরকার একটি মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নেতৃত্ব হওয়া উচিৎ যেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর তার তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা এবং যে কর্মপরিকল্পনা করোনা মোকাবেলার একটি সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেবে। কিন্তু তেমন কিছু বাংলাদেশ প্রায় গত দেড় বছরে করতে পারেনি। যার ফলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ যেন এখন পথ হারিয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭