ইনসাইড বাংলাদেশ

‘ভাই ছবি তুলবেন না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/10/2017


Thumbnail

ওভার ব্রিজে ওঠার শুরুতেই পথচারীদের দুর্ভোগ শুরু। দুটি সিঁড়ির মাঝেই তিন থেকে চার জন ভিক্ষুক বসা। তাঁরা সাধারণ ভিক্ষুক নয় প্রফেশলান। পথচারীদের পা ধরে একরকম জোর জবরদস্তি করেই টাকা নিচ্ছেন। ওভারব্রিজটির অধিকাংশ জায়গায় দখলে নিয়েছে হকারদের একটি দল। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করতেই একজন বলে ওঠে ‘ভাই ছবি তুলবেন না।’

বলছিলাম রাজধানীর ব্যস্ততম ফার্মগেট ওভারব্রিজটির কথা। ৭ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির ৩ ফুট জায়গা হকার আর ভিক্ষুকদের দখলে। বিচ্ছিন্নভাবে দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্রিজ দখল করে বসছে হকাররা। গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিন রাজধানীর ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজ গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

ওভারব্রিজটি দখল করে মার্কেটের দোকানের মতো পসরা সাজিয়ে বসেছে হকাররা। এদের মধ্যে কেউ ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসে আছেন, কেউ বিক্রিকরছেন মোজা, চাবির রিং, মানিব্যাগ, কেউ আমড়া, মুঠোফোনের ব্যাগ, কেউ বাচ্চাদের খেলনা, চুড়ি-ক্লিপ-লিপস্টিক,ভ্যানিটি ব্যাগ, ইমিটেশনের গয়না, বেল্ট, ব্রাশসহ হরেক রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।  সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫টির বেশি দোকান বসেছে এই ওভারব্রিজে। প্রতি প্রান্তে রয়েছে ভিক্ষুকের উপস্থিতি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় হওয়ায় পথচারীদের কেউ কেউ জটলা পাকিয়ে এসব জিনিস দেখছে, কিনছে। এতে ওভারব্রিজের ওপরে ভিড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এইভিড়ের  সুযোগ কাজে লাগিয়ে পকেটমাররা  তাঁদের  পকেট ভারি করছেন।

শুধু ওভাব্রিজ উপরেই অংশেই নয় ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে সিঁড়ি ঘিরে  বসানো হয়েছে হেডফোন-চার্জার, অশ্লীল ছবি ও গানের সিডি বিক্রেতাদের কাঠের চৌকি। মাঝেমধ্যে এসব সিডি বিক্রেতাদের ইশারা কিংবা ডাকাডাকিতে রীতিমতো বিপত্তিতে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এ জন্য অনেক পথচারীর অভিযোগ, ফার্মগেট ফুট ওভারব্রিজে উঠতে গিয়ে এসব বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বলেই পাশের আল রাজি হাসপাতালের সামনেরক্রসিং হয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয় অনেকে।

কেন ওভারব্রিজ দখল করে মানুষের অসুবিধা করছেন জানতে চাইলে ওভারব্রিজের ওপর  চশমা বিক্রেতা রব্বানী বলেন , ‘আমরা অনেক দিন থেকেইএখানে এসব বিক্রি করি। এতে তো মানুষের সমস্যা হয় না, তারাই তো কেনে। ’পুলিশ তাঁদের কিছু বলে কি না জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

ওভারব্রিজে মানিব্যাগ বিক্রেতা রমজান মিয়া বলেন, ‘আমার এখানে দুইটি দোকান আছে, ওভাব্রিজ হওয়ার পর থেকে  এখানে  মানিব্যাগ বিক্রি করি’ কাউকে কোন টাকা দিতে হয়।‘ এমন  প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দোকান প্রতি ২০০ টাকা করে দিতে হয়। কে কারা এই টাকা নেয় তা কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওজন মাপার দোকানদার বলেন, ‘এখানে লাইনম্যান আছেন, যাঁরা টাকা তোলেন। এ ছাড়া পুলিশও আমাদের কাছ থেকেচাঁদা নেয়। না দিলেই দোকান উঠিয়ে দেয়। এ জন্য বাধ্য হয়ে দেওয়া লাগে।’

আরেকজন ব্রাশ বিক্রেতা জানান, ‘রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারা চাঁদা নিয়ে ব্রিজটিতে হকারদের বসার অনুমতি দেন। এর একটি অংশকয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার পকেটে যায়। দোকানপ্রতি চাঁদার হার দৈনিক ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। কেন চাঁদা দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্রিজে বসতেহলে তো ভাড়া দিতেই হয়। আমিও প্রতিদিন দিই।’

ফার্মগেট সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের সংবাদ পেলে আগেভাগেই চলে যায় হকাররা। দুই-এক দিন পর আবার ব্রিজ দখল করে।’

ফার্মগেট পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে এইসব বিষয়ের সমাধান জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো কথা বলেনি। বরং তারা চুপচাপদাঁড়িয়ে থাকে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএ/জেডএ 

Save

Save



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭