ইনসাইড টক

`মশা নিধনে সারা বছরই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিৎ`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/07/2021


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ডেঙ্গু যখন শুরু হয় তখন তরিঘড়ি করে। আসলে মশা নিধনে সারা বছরই এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। জনগণকেও নিজের দায়িত্বে নিজের ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে।

করোনার মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ, ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং করণীয় নানা দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ`র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমানে করোনা অনেক বেড়ে গেছে পাশাপাশি ডেঙ্গুও বেড়ে যাচ্ছে। মূলত মে মাস থেকে ডেঙ্গু শুরু হয় এবং আগস্ট বা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। এবার হঠাৎ করে বাড়ার কারণ হচ্ছে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গায় জমা পনির সৃষ্টি হয়। আর যেখানেই জমা পানি থাকে সেখানেই মশা ডিম পারে। ঘরের মধ্যেও যদি জমা পানি রাখেন যেমন বাথরুমে, বালতিতে, ফ্রিজের নিচে, এসির পানি, বারান্দায় ফুলের টবে, ছাদের ওপরে বাগানে জমা পানিতে মশা ডিম পারে। নির্মাণাধীন ভবণ যেখানে আছে সেখানে পনি দেয় সেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে। যেকোনো খানে যদি পরিত্যাক্ত কোনো পাত্রও থাকে কোনো ক্যান, বোতল, চিপস এর খোসা, ডাবের খোসায় পানি জমে থাকলে সেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে। অনেক সময় দোকানের পাশে টায়ার পড়ে থাকে সেখানে জমা পানি হলেই এবং পরিস্কার পানি হলেই এডিস মশা ডিম পাড়ে। যেকোনো একটা মশা হলে সেখান থেকে শত শত হাজার হাজার মশা জন্ম নেয়। এগুলো সব ডেঙ্গুবাহিত মশা।

তিনি বলেন, এই মশা বাইরেও কামড়ায় সাধারণত এই মশা ঘরে কামড়ায়। এই মশাকে গৃহপালিত মশাও বলা হয়ে থাকে। এই সুন্দর সুন্দর ঘর, দালান কোঠায় এই মশাগুলো লুকিয়ে থাকে। এইভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্ত দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে। প্রথমে লক্ষ্য রাখতে হবে ডেঙ্গু এবং করোনার লক্ষণ প্রায় একই। দুইটাই তো ভাইরাস। সবগুলোতেই জ্বর, কাশি, গলা ব্যাথা থাকে। তবে ডেঙ্গুতে প্রচন্ড শরীর ব্যাথা হয় এর সাথে গিরায় গিরায় ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, চোখের পেছনে ব্যাথা হয়। এরপর ৪-৫ দিন পরে গায়ে র‍্যাশ হতে পারে, লাল এলার্জির বা ঘামাচির মতো হয় এবং ৪-৫ দিন রক্তবমি হয় এবং প্লাটিলেট কমতে পারে। এটাকে বলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। যেমন নাক দিয়ে রক্ত, রোগী ব্রাশ করলে রক্ত, বমি করলে রক্ত, পায়খানার সঙ্গে রক্ত, কালো কালো রক্ত বের হতে পারে অথবা মেয়েদের অসময়ে পিরিয়ড শুরু হলো এটাও ডেঙ্গুর লক্ষণ। 

প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, এই জিনিষগুলো করোনাতে হয় না। করোনাতে ঘ্রাণ নষ্ট হয়, রুচি নষ্ট হয় যদিও ডেঙ্গুতেও রুচি নষ্ট হতে পারে। করোনাতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অতোটা থাকে না। আবার এমন রোগী পাওয়া যাচ্ছে যে, করোনা এবং ডেঙ্গু এক সঙ্গে হচ্ছে। দুটিই ভাইরাস হওয়ার কারণে একসঙ্গে হতে  পারে। সমস্যা হলো ভাইরাস হলেও করোনা হলো একটি অদৃশ্য শক্তি সেটা দেখা যায় না। আর ডেঙ্গু সহজেই বোঝা যায় এটি এডিস মশার কামড়ে হয়। এই হলো সমস্যা। জনগণকে খেয়াল রাখতে হবে যে, দুটি পাশাপাশি হতে পারে। এ কারণে যে কারোর জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে র‍্যাশ বা রক্তক্ষরণ নিয়ে বসে না থেকে অবশ্যই ডাক্তারের ইমিডিয়েট পরামর্শ নিবে। প্রয়োজনে দুটি টেষ্টই করাতে হবে। করোনা টেষ্টও করাতে হবে এবং ডেঙ্গু টেষ্টও করাতে হবে। করোনাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, টিকা নিতে হবে। আর ডেঙ্গুতে দেখতে হবে এই এডিস মশা যেনো না জন্মাতে পারে। এই মশা যেনো বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সে জন্য কোথাও যেনো জমা পানি না থাকে। ঘরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ড্রেনের মধ্যে পানি যেনো না জমে, ফুলের টবে ৫ দিনের বেশি যেনো জমা পানি না থাকে। ঘরের চতুরপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ঘরের বাইরে যেখানে জমা পানি থাকে এটি তো সিটি করপোরেশন এবং প্রশাসনের কাজ। এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেনো কোথাও জমা পানি না থাকে। জমা পানি থাকলেই মশা ডিম পাড়বে। আসলে এই ডেঙ্গু যখন শুরু হয় তখন তরিঘড়ি করে। আসলে মশা নিধনে সারা বছরই এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। জনগণকেও নিজের দায়িত্বে নিজের ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। এই মশা দিনে কামড়ায়। দিনে ঘুমালে যেনো মশারিটা টেনে ঘুমায়। ছোট বাচ্চারা যেনো হাফ প্যান্ট না পরে ফুল প্যান্ট পরে। এই মশা খোলা জায়গায় কামড় দেয় বেশি। সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজেকে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে। তাহলেই কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। আর যদি কারোর হয়েই যায় তাহলে তার জ্বর উঠলে শুধু প্যারাসিটামল খাবে। প্রচুর পানি খাবে। নিজেরা প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো পেইন কিলার খেতে পারবে না। পেইন কিলার খেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিটা বাড়বে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ করোনা হয়ে সিরিয়াস হয়ে অনেকে ডাক্তারের কাছে আসে সেটাতেও সমস্যা আবার ডেঙ্গুতে যদি রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায় তাহলেও সমস্যা। তখন দেখা যায় যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ডেঙ্গু যেহেতু হচ্ছে সেহেতু যে কোনো রক্তক্ষরণ কোথাও থেকে হলেই আর ঘরে বসে থাকা যাবে না। তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতেই হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭