ইনসাইড বাংলাদেশ

জটিল সমীকরণে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/07/2021


Thumbnail

সম্প্রতি ইসরায়েলের তৈরি হয়েছে স্পাইওয়ার পেগাসাস নিয়ে সারাবিশ্বে যখন তোলপাড় তখন দেখা যাচ্ছে যে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়টি প্রভাবশালী দেশ ইজরায়েলের এন এস কোম্পানির কাছ থেকে এই পেগাসাস কিনেছে। আড়িপাতার এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় সাধারণত মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সরকারবিরোধী লোকজনের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। আর এর মাধ্যমে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো এখন ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্কে একধাপ এগিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, এই দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। সৌদি আরব যেকোনো সময় ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে এখন ইসরাইলের নানারকম আলাপ-আলোচনার খবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুটি সমস্ত মুসলিম দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে থাকবে।

তুরস্ক এবং মালয়েশিয়া ছাড়া প্রভাবশালী মুসলিম সবগুলো দেশই তখন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে। আর এই সম্পর্ক স্থাপন বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের এক জটিল সমীকরণ তৈরি করবে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইসরাইলকে কূটনীতিক স্বীকৃতি দেয়নি এবং বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে উল্লেখ করে যে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের সাথে কোন রকম কূটনীতিক সম্পর্কে জড়াবে না বাংলাদেশে। কিছুদিন আগে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরাইল কথাটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে কোনো কোনো মহল জল ঘোলা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এটি করা হয়েছে আমাদের পাসপোর্টের সুবিধার জন্য কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ তার অভিমতের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে বাংলাদেশের উপর কি চাপ পড়বে? এরকম প্রশ্ন এখন উঠছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল নিয়ে একটি নতুন কূটনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। মনে করা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ইস্যুতে যে আগ্রাসী কূটনীতি গ্রহণ করেছিল সেখান থেকে জো বাইডেনের সরকার সরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত প্রকাশ্যেই ইসরায়েলের পক্ষে কথা না বললেও ইসরাইলের ব্যাপারে তাদের মৌলিক অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অন্যদিকে সৌদি আরবও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ইসরাইলের প্রতি নমনীয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের ন্যায্য অধিকারকে সমর্থন করে অন্যদিকে বাংলাদেশ উগ্রবাদী জঙ্গিবাদকে পরিহার করে। আর এ কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আলাদা মর্যাদার এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের শান্তি রাষ্ট্রের মডেল। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ইসরাইলের সঙ্গে কি করবে? যদি সৌদি আরব শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়, বাণিজ্যিক সম্পর্ক করে তাহলে বাংলাদেশ কি করবে? কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বাংলাদেশে তার অবস্থান নিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম দেশগুলোর ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করে যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। বিশেষ করে সৌদি আরবের এরকম স্বীকৃতির পর যদি অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকেও এ ধরনের চাপ দেওয়া হয় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দিয়ে সেখানে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা হলেও জটিল হতে পারে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন। কারণ, এই দুইটি দেশ বাংলাদেশের অভিবাসনের অন্যতম বাজার। কাজেই এই জটিল সমীকরণে বাংলাদেশের কূটনীতি কিভাবে সফল হয় সেটি দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭