নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 22/07/2021
ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্ব মানের দল হয়ে উঠার পর থেকে প্রতিপক্ষকে এখন পর্যন্ত অনেকবার ধবল ধোলাই করেছে টাইগাররা। ২০০৬ সালে সর্বপ্রথমবার ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ কেনিয়াকে ৪-০তে হারিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে যেকোন প্রতিপক্ষকে ১৪ বার ধবলধোলাই করলেও দেশের বাহিরে তা এসেছে মাত্র দুইবার। টাইগাররা সর্বশেষ ধবল ধোলাই করেছিল ২০০৯ সালে দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ক্যারিবিয়ানের সেই সফরে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজটা জেতে বাংলাদেশ। আর সব মিলিয়ে দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেছে মোটে দুইবার। এর আগে ২০০৬ সালে প্রথমবার কেনিয়া সফরে কেনিয়াকে।
সেই হিসাবে ২০০৯ সালের পর যে দেশের বাইরে ওয়ানডে সিরিজে কোন প্রতিপক্ষকেই আর ধবলধোলাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্ত পবিত্র ঈদুল আযহার দিনেই স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে উইকেটে হারিয়ে হারারে থেকে ঈদ উপহার পাঠিয়েছেন তামিমরা।
এদিকে আগে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুটা অবশ্য খুব ভালো হয়নি। নবম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেটের দেখা পান সাকিব আল হাসান। সাময়িক বিপদ কাটিয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরের সাথে ৩৬ ও ডিওন মায়ার্সের সঙ্গে ৭১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে টেনে তোলেন রেগিস চাকাভা। টেলর ২৮ ও মায়ার্স আউট হন ৩৪ রান করে। সুবিধা করতে পারেননি ওয়েসলে মাধেভেরে, তিনি মুস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন ৩ রানে। তবে শেষদিকে সাইউদ্দিনের উপর চড়াও হন সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ১১২ রান। ৪৯ বলে ফিফটির স্বাদ পাওয়া রাজা ৫৪ বলে ৫৭ ও ৩৮ বলে অর্শধতক করা বার্ল ৪৩ বল খেলে ৫৯ রানে আউট হলে লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা স্কোর বোর্ডে তেমন প্রভাব রাখতে পারেননি। এতে ৫০তম ওভারে অল-আউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ে ২৯৮ রানের পুঁজি পায়।
বল করতে নামার আগে একাদশে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। দুইটিই বোলার। মিরাজের পরিবর্তে দীর্ঘ ৫ বছর পরে দলে সুযোগ পান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। শরিফুল ইসলামকে বসিয়ে চোট কাটিয়ে ফিরে আসেন পেসার মুস্তারিজুর রহমান। মাঠে ফিরেই ৩ উইকেট নিয়ে নেন মুস্তাফিজ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের শিকারও সমান ৩ উইকেট। তবে তিনি ৮ ওভার বল করে ৮৭ রান দিয়ে পেসার আল আমিনকে হটিয়ে সবচেয়ে বেশি রান দেয়ার রেকর্দ নিজের করে নেন।
২৯৯ রানের টার্গেটে স্বাগতিকদের বাংলাওয়াশ করতে বাংলাদেশ দল দায়িত্বশীল ব্যাট করে চলে। বিনা উইকেটে ১১ওভারে ৬৫ রান তোলার পরে হুট করেই তামিম ব্যাটে ঝড় তুলেন। টেন্ডাই চাতারার এক ওভারেই নিয়ে নেন ১৯ রান। প্রথমে পুল করে ছয়ের পর তামিম মেরেছেন দুটি চার- প্রথমটি পাঞ্চ করে, পরেরটি স্ল্যাশ করে কাভার পয়েন্ট দিয়ে। সাবধানী শুরু করা বাংলাদেশের দুই ওপেনার তবে সময় বাড়তে থাকলে রানের চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করে। মাত্র ৪৬ বলে তামিম তুলে নেন সিরিজে নিজের প্রথম অর্ধশতক। অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যান লিটন ৩২ রানে মারুমানির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে উঠার দিনে সাকিব আল হাসান ব্যক্তিগত ৩০ রান করার পরে পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরে গেলে দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় হয় দ্বিতীয় উইকেটের পতন।
দলীয় ৩০তম ওভারে টেন্ডাই চাতারাকে চার মেরে ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। মাইলফলক গড়তে তুলতে আটটি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন দেশ সেরা এই ওপেনার। মাত্র ৮৭ বলেই মাইলফলকে গেলেন তিনি। গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ওয়ানডেতে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। হারারে স্পোর্টস ক্লাবে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম শতক। এর কিছুক্ষণ পরেই পানি-পানের বিরতিতে যায় টাইগাররা। ফিরে এসে ডোনাল্ড তিরিপানোর বলে খোঁচা দিয়ে থার্ডম্যানের দিকে খেলতে চেয়ে আউট হয়ে যান পেছনে। ৯৭ বলে ১১২ রান করে ফিরে যান এই ওপেনার। এর ঠিক পরের বলে কট-বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহও। তিরিপানোর বলে ইনসাইড-এজড হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই নীচু মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে নুরুল হাসান সোহান এবং মোহাম্মদ মিথুন ভরসা জুগিয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। একমাত্র মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটিটা ছাড়া সব গুলো জুটিই পেরিয়েছে পঞ্চাশ রানের। সর্বশেষটি নুরুল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুনের জুটি টাইগারদের জয়ের বন্দরে অনেকটাই পৌছে দেয়। কিন্ত সেই জুটির পরপরেই ওয়েসলি মাধভেরেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে একেবারে সীমানার কাছে টেন্ডাই চাতারার তালুবন্দি হয়ে ৫৭ বলে ৩০ রান করে ফিরে যান মিঠুন। ভেঙে যায় নুরুলের সঙ্গে তাঁর ৬৪ রানের জুটি। তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬ ওভারে ৩০ রান। আফিফ হোসাইন মাঠে নেমে ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করলে জয় থাকে শুধু সময়ের অপেক্ষায়। দলীয় ৪৮তম ওভারে ছুকা মেরে স্কোর সমান করার পরে লুক জঙ্গির বলে সিংগেল নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পরে বিদেশের মাটিতে আবারও কোন দলকে ধবলধোলাই করে টাইগাররা।
অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সাকিব। অন্যদিকে পুরো সিরিজে বোলিং এবং ব্যাটিংতে দুর্দান্ত থাকা সাকিব হয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজ। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার তিন ম্যাচের সিরিজে ৮ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১৪১ রান করেন।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭