ইনসাইড থট

কেন কাঁদলেন বেগম জিয়া…

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/10/2017


Thumbnail

অক্টোবর মাসের এক দুপুরে আদালতে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়া কাঁদলেন। কিন্তু তাঁর কান্না আমাদের স্পর্শ করতে পারল না। নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগার প্রকোষ্ঠে বসে লিখেছিলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে মানুষ অশ্রু চায় না, প্রতিজ্ঞা চায়, দৃঢ়তা চায়।’ ম্যান্ডেলা বিচারের আদালতে দাঁড়িয়ে কাঁদেননি, হেসেছেন, বিজয়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন, বলেছেন, ‘জয় নিকটবর্তী।’ জাতির পিতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জবানবন্দিতে কাঁদেননি, বরং দৃঢ়চিত্তে বাঙালির বিজয় বার্তা ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারেও কাঁদেননি। বরং হাসিমুখে বিচারকে বলেছেন, ‘প্রহসন।’ বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীও ক্যাঙ্গারু আদালতে দাঁড়িয়ে কাঁদেননি। বরং বলেছেন, ‘ এই প্রহসনের বিচারের জবাব দেবে জনগণ।’

আবার স্বৈরাচারী এক নায়ক মিলোসেভিচ, আদালতে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন, কেঁদেছিলেন মার্কোস, পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলেছিলেন।

তাই, বেগম জিয়ার কান্নায় আমার প্রশ্ন হলো, কেন তিনি কাঁদলেন, মামলার ভয়ে, নিজের দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই দেখলাম, নেলসন ম্যান্ডেলা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কিংবা শেখ হাসিনা নিজেদের জন্য কখনো হাহুতাশ করেননি।

তারা বরং কেঁদেছেন জনগণের কথা ভেবে, জনগণের দুর্দশায়। নেলসন ম্যান্ডেলার দৃঢ়চিত্ত মানসিকতা ভেঙ্গে পড়ে ট্রুথ কমিশনের রিপোর্ট পড়ে। যেখানে কালো মানুষের ওপর চালানো বর্বরতায় তিনি অস্থির হয়ে পড়েন, কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জাতির পিতার স্বাধীন দেশে এসে পাকিস্তানি বর্বরতার বিবরণে কেঁদে ফেলেন। এই সেদিন শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিবরণ শুনে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ, রাজনৈতিক নেতারা কাঁদেন মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়। নিজের জন্য কাঁদেন সেই সব রাজনীতিক যারা ‘ক্ষমতা’ কে শোষণের হাতিয়ার মনে করেন। বেগম জিয়ার কান্না কোন গোত্রের, তা বিচারের ভার পাঠকের।

বৃহস্পতিবারও বেগম জিয়া একঘণ্টা আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এই জবানবন্দি দেওয়া তাঁর আইনগত অধিকার। কিন্তু একঘণ্টায় তিনি কি বললেন, তাঁর বাড়ি হারানোর কথা বললেন, বললেন তাঁর ওপর নানা মামলার কথা। শেখ হাসিনাকে ভাগ্যবানও বললেন। কিন্তু তিনি যেটি বললেন না, কেন এই পরিস্থিতি হলো। এই অক্টোবরেই বেগম জিয়া নিজেই তাঁর পরিণতির পথরেখা তৈরি করেছিলেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত ক্ষমতা দখল করে যে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সেখানেই তিনি ‘গণতন্ত্র’কে প্রহসন বানানো শুরু করেছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরেই ক্ষমতা আকড়ে রাখার জন্য বিএনপি-জামতের উন্মত্ততা জাতিকে হতবাক করে দেয়।

বেগম জিয়া কি ভুলে গেছেন, বিচারপতি কে এম হাসানকে কীভাবে প্রধান বিচারপতি করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তার জন্য সংবিধান পরিবর্তন পর্যন্ত করেছিল বেগম জিয়ার সরকার।

বেগম জিয়া কি ভুলে গেছেন, কীভাবে বিচারপতি আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিলেন। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ‘কৌতুকখানা’ বানিয়েছিলেন। বেগম জিয়া কি ভুলে গেছেন, ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডব, যেদিন বিএনপি-জামাত প্রতিপক্ষের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করেছিল?

বিএনপি চেয়ারপারসন, আপনি ভুললেও কীভাবে এদেশের জনগণ ভুলবে আপনার ড. ইয়াজউদ্দিন নাটকের কথা।

তারপর, আপনার পাঁচ বছরের শাসনামলে হাওয়া ভবনের অপকর্ম, আপনার সুপুত্রের দৌরাত্ম্য, লুটপাট। পাঁচ বছরে আপনি যে আমাদের অর্থনীতিকে ফোকলা বানিয়েছিলেন, তা কি করে ভুলে গেলেন।

আদালতে আপনি বলছেন, শেখ হাসিনা ‘ভাগ্যবান’। আপনার এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। ভাগ্যবান জন্যই আপনার পুত্রের গ্রেনেড হামলার ভয়ংকর নীলনকশা থেকে শেখ হাসিনা বেঁচে যান। আদালতে দাঁড়িয়ে সত্যপাঠ করে আপনি কি বলতে পারবেন, এই হামলায় তারেক জিয়া এবং আপনার হাত ছিল না? শেখ হাসিনা ভাগ্যবান জন্যই আপনার দলের পরিকল্পিত ১১টি এবং সবমিলিয়ে ২১টি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে যান। শেখ হাসিনা ভাগ্যবান, এজন্যই তিনি আপনার প্রয়াত স্বামীর অংশীদারিত্বে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নৃশংসতা থেকে বেঁচে যান।

বেগম জিয়া, আপনিও কি কম ভাগ্যবান? আপনার বিলাসবহুল জীবনের আয়ের উৎস নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না। অক্টোবরে এত হত্যার বিচার কেউ চায় না। আপনার ক্যাডারদের হাতে ধর্ষিত ফাহিমা, মাহিমা, পূর্নিমারা আপনার বিচার চায়না। এখনো এদেশে আইন সবার জন্য সমান নয়, তাহলে আপনাকে হয়তো অক্টোবরের হত্যা, সন্ত্রাসের দায়েই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের মুখোমুখি হতে হতো। বেগম জিয়া, তাই কান্নার আগে একটু যদি কান পাততেন তাহলে শুনতেন ২০০১-২০০৬ সালে হাজারো মানুষের কান্না, আর্তনাদ। তখন আপনি নিশ্চয়ই লজ্জিত হতেন।

 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭