ইনসাইড বাংলাদেশ

ভারত কেন বারবার কথা বদল করছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/07/2021


Thumbnail

বাংলাদেশ টিকা নিয়ে প্রথম চুক্তি করেছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে। ত্রিপাক্ষিক এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টিকা পাঠাচ্ছে না ভারত। ইতিমধ্যে টিকার জন্য অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। অর্থ পরিশোধের পর এই টিকা না পাঠানো শুধুমাত্র ব্যবসায়িক রীতি-নীতির বরখেলাপ নয়, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থীও বটে। কিন্তু ভারত এ ব্যাপারে কোনো জুতসই ব্যাখ্যা দিচ্ছিল না। প্রথমদিকে ভারতের অবস্থান ছিল এরকম যে এ নিয়ে কোনো কথাই বলছিল না ভারত। অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে যে সমস্ত দেশের সঙ্গে ভারত চুক্তি করেছিল তার কোনো দেশেই সেরাম টিকা পাঠাতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে ভারতের করোনা মহামারী ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নিজেদের দেশের চাহিদা মেটানোর জন্যই ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধ করেছে। যদিও সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ভারত বাংলাদেশের জন্য যে টিকা পাঠানোর কথা সেটি তাদের কাছে আছে ভারত সরকার অনুমতি দিলেই তা পাঠানো হবে। 

মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তার এই সফর ছিল। সেই সময় তিনি কিছু টিকা উপঢৌকন হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। তখনও ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশ টিকা পাবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ফিরে যাওয়ার পর দেখা গেল যে টিকা নিয়ে আর কেউ কোনো কথাবার্তা বলছে না। বাংলাদেশ কিছুদিন দেনদরবারের চেষ্টা করল তারপর উপায়ান্তর না দেখে বাংলাদেশ বিকল্প পথের সন্ধান পেল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে টিকা আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক ডোজ দিয়েছিল। দ্বিতীয় ডোজ পায়নি তাদের জন্য সুখবর আসছে। জাপান থেকে অক্সফোর্ডের টিকা বাংলাদেশে আসছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ফাইজারের টিকা এসেছে। এসেছে মডার্নার টিকা এবং রাশিয়ার টিকাও বাংলাদেশে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনসন এন্ড জনসনের টিকাও বাংলাদেশে চলে আসবে এমনটাই আশা করছেন বিভিন্ন মহল। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আর ভারতের দিকে তাকিয়ে নেই। 

টিকার জন্য বাংলাদেশ বিকল্প উৎসের সন্ধান করেছে এবং সে ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় যে এখন ভারতই বারবার টিকা নিয়ে কথা বলছে এবং সেই কথাগুলো তারাই আবার বদল করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ঈদের আগে ভারত গেলেন বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। যাওয়ার আগে তিনি বললেন, বাংলাদেশ যেন দ্রুত টিকা পায় সে ব্যাপারে তিনি কথা বলতে যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশকে টিকা দেয়া হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। এর কদিন পর গতকাল তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে যেন সুর পাল্টে দিলেন। তিনি বললেন যে, ভারতের নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরই বাংলাদেশকে টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কেনই তিনি দ্রুত টিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে সে কথা বললেন আবার কেনই তিনি চাহিদা পূরণ না হলে বাংলাদেশকে টিকা দেওয়া হবে না সে কথা বললেন। এ ধরনের পরস্পর বিরোধী কথা বলার কারণ কি? 

এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কূটনীতিকরা বলছেন যে, ভারত আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা নার্ভাস এবং উদ্বিগ্ন। কারণ তারা মনে করেছিল যে, বাংলাদেশের বোধহয় টিকার অভাবে একটা ধরনের হতাশা তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, বাংলাদেশ টিকার বিকল্প উৎসের সন্ধান করেছে। তবে ভারত টিকা নিয়ে এত বেশি কথা বলছে এবং পরস্পর বিরোধী কথা বলছে তার প্রধান কারণ হিসেবে কূটনীতিকরা মনে করছেন যে, টিকা নিয়ে চীনের আধিপত্য। বাংলাদেশের বিকল্প উৎসের প্রধান উৎস এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। কারণ বাংলাদেশে গণটিকা কর্মসূচি করা হবে মূলত চীনা ভ্যাকসিন দিয়ে। আর এ কারণেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো প্রগাড় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি যদি হয় সেটি ভারতের জন্য এক উদ্বেগের খবর বটে। তাছাড়া ভারতের টিকা রপ্তানি বন্ধ বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এটি ভারতের অজানা নয়। আর এ কারণেই একেক বার একেক কথা বলে ভারত যেন আত্মগ্লানি লাঘবের চেষ্টা করছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭