ইনসাইড বাংলাদেশ

কোন টিকা কে পাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/07/2021


Thumbnail

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে টিকা সংকট কেটে গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল এক পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন যে ২১ কোটি টিকা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় নাগাদ আসবে। যে সমস্ত টিকা বাংলাদেশে আসছে তার মধ্যে রয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, ফাইজারের টিকা, মর্ডানার টিকা, জনসন এন্ড জনসনের টিকা এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকা। এই টিকাগুলোর একেকটি একেক রকম। কিছু কিছু টিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, কিছু কিছু টিকা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে প্রশ্ন উঠলো, কোন টিকা কে পাবে? ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ফাইজারের টিকা অভিবাসীদের, প্রবাসী বাঙ্গালীদের দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অভিবাসন প্রত্যাশী কিছু মানুষ ফাইজারের টিকা দিয়েছেন।

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফাইজারের টিকা ঢাকার বাইরে যাওয়া সম্ভব না। কারণ, মাইনাস ৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় যেটি ঢাকার বাইরে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। কাজেই ফাইজারের টিকা ভবিষ্যতে এলেও যে সেটি ঢাকার বাইরে যাওয়া যাবে না সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। মর্ডানার টিকাও একইরকম। এখনো সরকার মর্ডানার টিকাগুলোই দেওয়া শুরু করছে। মর্ডানার টিকাগুলো ঢাকাতেই দিচ্ছে। ঢাকার বাইরের চীনের সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত হলেও ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে এই টিকা অনুমোদিত নয়। ফলে এই টিকা নিয়েও একজন নাগরিকের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সিনোফার্মের টিকার কার্যকারিতা ৮০ শতাংশের নিচে। এরকম অবস্থায় এ টিকা ব্যাপকভাবে দিয়েও কতটুকু লাভ হবে সে নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। অবশ্য এর মধ্যে জনসনের টিকা এসেছে। জনসনের টিকা ১ ডোজ টিকা। কিন্তু এরও কার্যকারিতা কম। তবে এই টিকা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত। আর স্পুটনিক-ভি টিকাকে অনেক কার্যকর করা বলা হয় কিন্তু স্পুটনিক-ভি টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এখন পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। তবে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত টিকাগুলোর মধ্যে হচ্ছে স্পুটনিক-ভি টিকা।

বিভিন্ন রকমের টিকা ব্যবস্থাপনা এবং কাকে কোন টিকা দেওয়া হবে সেটি এখনই নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এবং তিনি টিকা নিয়ে একটি সুস্থ কর্মপরিকল্পনা এখন থেকে তৈরি করতে হবে। কারণ এর আগে দেখা গেছে যে, সেরাম ইন্সটিটিউটের টিকা যখন বাংলাদেশে এলো তখন সেই টিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়নি। যার ফলে প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ দ্বিতীয় ডোজের টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। সেই ১৮ লক্ষ মানুষ এখনও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পায়নি। আশার কথা হলো যে, জাপান থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা এসেছে সেই টিকা দিয়ে হয়তো কিছু মানুষের প্রয়োজন মেটানো যাবে। বাকি প্রয়োজন মিটানোর জন্য আমাদের কোথাও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ ভারত ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর তারা বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশগুলোকে টিকা রপ্তানি করবে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, খুব সহসা সেরাম ইন্সটিটিউটের টিকা পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

টিকার জন্য আমাদের মূলত নির্ভর করতে হচ্ছে চীনা টিকা, জনসন এন্ড জনসনের টিকা এবং রাশিয়ার টিকা। এই টিকাগুলো কোথায় কিভাবে কাকে দেয়া হবে তার একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা দরকার। এখন টিকা নিয়ে নিবন্ধন চলছে। কিন্তু গ্রামের হতদরিদ্র মানুষেরা নিবন্ধনের আওতায় আসছে না। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ যে নিবন্ধন করেছেন তা শহরকেন্দ্রিক এবং নিবন্ধনের জন্য তার তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। কিন্তু দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষেরা এই তথ্য প্রযুক্তির আওতায় এসে নিবন্ধিত হচ্ছেন না। তাছাড়া তাদের নিবন্ধনের আগ্রহ কম। এজন্যই বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর মত করোনার টিকাদানেরও একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার যে কর্মসূচির আওতায় সকলেই টিকা দিতে পারবে। না হলে বাংলাদেশেও টিকা বৈষম্য সৃষ্টি হবে। নাগরিক শিক্ষিত মানুষজন টিকা নেবে কিন্তু গ্রামের মানুষজন টিকার প্রবেশগম্যতা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সে বিষয়টি এখনই নজর দেয়া দরকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭