ইনসাইড থট

একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা শুরুই করতে পারলাম না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/07/2021


Thumbnail

বাংলা ইনসাইডারের যারা নিয়মিত পাঠক তাদের হয়তো মনে থাকবে আমি এই লেখাসহ তিন থেকে চারবার একই বিষয় লিখে চলেছি এই জাতীয় শোকের মাসে। কিন্তু এতে কোন সফলতা আমি অর্জন করতে পারিনি এবং যতদিন সফলতা অর্জন না করি আর আল্লাহ আমাকে জীবিত রাখেন অবশ্যই আমি এই বিষয়টি নিয়ে প্রতি জাতীয় শোকের মাসে একই কথা বারবার লোককে জানানো আমার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করবো। সেই সাথে এই দায়িত্ব পালন করে যাবো। আমি ভূমিকায় বলতে চাই যে, এই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেটা শুরু করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, তার এই বিচার কার্যতা কিন্তু  প্রসার লাভ করে। একটি দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপান্তর করার পেছনে, পেছন থেকে নিজের নাম না চেয়েও যে মহীয়সীর অবদান আছে এবং আমি জেনেই বলছি তিনি হচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তেমনিভাবে যখন শাহবাগে ছাত্র যুবক সকলে মিলে আন্দোলন গড়ে তুলে সেই আন্দোলনেও কিন্তু পেছন থেকে শক্তি যুগিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। স্বাভাবিক কারণেই তাই আমার এই লেখায় প্রধান উদ্দেশ্য হবে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এখন মূল বিষয়ে আসি, জননেত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টার সফলেই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী জাতির পিতা সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং তার নিকটাত্মীয়দের হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও কিছু আসামী এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে এবং তাদের দেশে এনে বিচারের রায় যাতে কার্যকর হয় সেই প্রচেষ্টা চলছে। তবে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে যে হত্যা করা হলো এর পেছনে ষড়যন্ত্রকারী কারা, সেটা বের করা। অন্ততপক্ষে তাদের এখনো কিছু লোক জীবিত আছে, যার বিভিন্ন উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করতে পারে। এই কাজটিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা পেছন থেকে সাহস যোগালে এ কাজটি সম্ভব হবে। আমি কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলছিনা, আমি ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমার হাতেও কিছু প্রমাণসহ বলছি যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যুদ্ধকালীন সময়ে একজন পাকিস্তানি কর্নেল চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে, জিয়াউর রহমান সাহেব খুব ভাল কাজ করছেন। সেই চিঠির কপি যদি কোন কমিটি হয় আমি সেই কমিটির হাতে অর্পণ করতে পারবো। এদেশের অন্যতম সবচেয়ে বুদ্বিভিত্তিক সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর তার একটা লেখায় এটি উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটি একটি উদাহরণ।

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে যে, এটা ইতিহাসের অংশ যে জাসদ যখন গঠন হয় তখন জাসদ প্রথম সভায় প্রকাশ্যে বলে তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সরকারের পতন ঘটানো। অর্থাৎ তারা প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেয় যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার সরকারকে পতন ঘটাতে হবে। কেননা যারা জাসদ গঠন করেছিলেন তাদের উপরের দিকের প্রায় সকলেই বঙ্গবন্ধুর সাথে কাজ করেছিলেন এবং তারা এতদিন বঙ্গবন্ধুর শিষ্য হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সুতরাং তারা জানতেন যে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে পতন ঘটাতে হলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এমনকি এটা প্রমাণিত সত্য যে, সর্বহারা পার্টি বঙ্গবন্ধু সরকারের অনেক নেতাকেই হত্যা করেছে এবং বঙ্গবন্ধুকেও হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সর্বহারা পার্টির যারা নেতা ছিলেন তাদের সাথে সিরাজুল আলম খান, যিনি ষাটের দশকের আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তিনিও তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। একটি বিষয়ে আমরা তখন হয়তো অন্ধ ছিলাম বা বুদ্ধি ছিলনা তাই বুঝতে সক্ষম হইনি যে, সিরাজুল আলম খান সাপের মুখেও চুম খেতেন এবং ব্যাঙের মুখেও চুমো খেতেন। তার বড় প্রমাণ হচ্ছে সে সময়ে সকলে জেলে গেলেও তিনি কিন্তু কোন না কোন ভাবে জেলের বাহিরে থাকতেন। তখন আমরা এই দৃষ্টিতে সিরাজুল আলম খানকে মূল্যায়ন করতাম যে, তিনি জেলের বাহিরে থাকার কারণেই আমাদের আন্দোলনের সফলতা আসছে, আমরা মনের জোর পাচ্ছি এবং তার নির্দেশে অনেক কাজ করতে পারছি। তিনি অনেক সময় আওয়ামীলীগের নামে প্রেস চিঠি লিখে আমাদের দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন তখনকার আওয়ামীলীগের অফিস সেক্রেটারি তার সই নিয়ে। সুতরাং তখন অবশ্যই তার অবদান ছিল। কিন্তু তিনি কিছুদিনের মধ্যেই যখন ছাত্রলীগে গুরুত্ব পান সাথে সাথেই উপদলীয় রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সুসংগঠিত করেন, যা আর কোন ছাত্রনেতা করেননি। তিনি প্রথমেই তার তথাকথিত নিউক্লিয়াস যেটা বলেন সেটা আসলে একটা সম্পূর্ণ বাকোয়াস। এটা হলো তার গ্রুপিং যে ধাপ, সেটিরই অংশ। কারণ, জনগণ এই নিউক্লিয়াসের কথা শোনা শুরু করলো একাত্তর বাহাত্তর সালে, আর তারা নিউক্লিয়াস করলেন বাষট্টি সালে।

একষট্টি সালে আমিও ছাত্রলীগে ছিলাম। উনারা বলেন, যাদেরকে বলা হয়নি তারা জানবে কিভাবে? আরে, ছাত্রলীগের বড় বড় নেতারা কেউই জানলো না তাহলে ওরা কয়েকজন কিভাবে জানবেন! অর্থাৎ তারা যাদের নিয়ে উপদল করতেন, গ্রুপিং করতেন, সেই গ্রুপিংয়ের কয়েকজন শুধুমাত্র জানতেন। কিন্তু এই আন্দোলনের সাথে সাথে তার গ্রুপিং স্ফীত হতে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সময়েও তাদের তিনি গ্রুপিং থেকে আলাদা হননি। পেছন থেকে গ্রুপিং অর্গানাইজড করেছেন এবং সেই গ্রুপিংকারীদের নিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুকে শেষ করে দেওয়ার জন্য তারা দল গঠন করে। গণতান্ত্রিক ভাবে দল গঠন করে গণতান্ত্রিক ভাবে সরকার পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই প্রথম থেকে করেনি। তাদের বক্তব্য, কার্যক্রম এবং আরো মনে রাখতে হবে যে, সেই সিরাজ শিকদারের সাথে কর্নেল তাহেরেরও যোগাযোগ ছিল, মেজর ডালিমের যোগাযোগ ছিল এবং এদের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের যোগাযোগ ছিল। তাহলে এদের সাথে আর সিরাজুল আলম তো নিজেই সিরাজ শিকদারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি এখনো জীবিত আছেন। যা মোস্তফা মহসীন মন্টু তিনি নিজেই জানেন। এভাবে বিভিন্ন জন এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, যারা এই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পেছনে যে ষড়যন্ত্র করেছেন, এই ষড়যন্ত্র কারা কারা করেছে, সিভিলিয়ান কারা ছিল, আর্মির কারা ছিল। যদিও এমনকি কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, ডেপুটি হাই কমিশনার হোসেন আলী মুক্তিযুদ্ধের প্রথমে বাংলাদেশের সমর্থন করে মনোবল বাড়িয়ে আমাদের অনেক উপকার করেছেন। তিনিও পরবর্তীতে তার কার্যকলাপে অনেক প্রমাণ আছে যেখানে প্রমাণিত হয় তিনি বঙ্গবন্ধুর আর শুভাঙ্কাখী ছিলেন না। এইভাবে আমরা কারো ক্যারেক্টার এসাসিনেশন করতে বলছি না, কারও ক্যারেক্টার হরণ করতে বলছিনা। কিন্তু অবশ্যই একটি কমিটি গঠন করতে হবে যেখানে যারা নির্মোহ-ভাবে এই বিষয়গুলোকে তুলে ধরবেন এবং তার পরবর্তীতে সরকারকে দিবেন। সরকার সেটাকে কিভাবে ব্যবস্থা নিবেন সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে, আমাদের জীবদ্দশায় যেভাবে চতুর্দিকে করোনায় মৃত্যু এবং একের পর এক বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি তাতে আমাদের জীবিতকালে এটা দেখে যেতে পারব কিনা সেটা নিয়ে আমার মনেও সন্দেহ হয়েছে। একথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যদি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ বিষয়ে  মনোযোগী হয়ে তার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্বের দ্বারা এই কাজটি শুরু না করেন তাহলে বাংলার মাটিতে কোনদিনও যারা পেছন থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা চিরকাল অধরাই থাকবে এবং ইতিহাসেও তারা তাদের মনগড়া ইতিহাস রচনা করে যাবে। শোকের মাসের প্রথমেই আবার মনে করিয়ে দিতে চাই কারা পেছনে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই এদের নাম প্রকাশ্যে আশা উচিৎ প্রমাণসহ। যারা এই কাজটি সঠিক ভাবে করতে পারবেন তারা কিন্তু একে একে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এখনো যারা আছেন তাদের দিয়েই কাজ হবে, এটা অবশ্যই দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের চেয়ে ভালভাবে অবহিত। কেননা তিনি প্রত্যেকটি কাজেই এমনকি এই কঠিন করোনার সময়েও তার একক চেষ্টায় আমরা এই ঝড়ঝাপটা সহ বিরাট দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্রও পাড়ি দিতে সক্ষম হচ্ছি। সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে যারা রয়েছে তাদেরকেও উন্মোচিত করতে পারবো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭