নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 30/07/2021
স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সারা পৃথিবীতেই করোনা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটা ভিন্ন এই মুহূর্তে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে একটা মহা সংকটের দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি। কারণ, পৃথিবীর কোনো দেশে ডেঙ্গু এবং করোনা একসাথে নেই। আমাদের দেশেই ডেঙ্গু এবং করোনা একসাথে সামাল দিতে হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগী দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ডেঙ্গু এবং করোনা -এই দুইটি একসাথে চিকিৎসা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর দুটি ব্যাপার। একটি হলো যে, এইটার ব্যবস্থাপনা। আমরা জানি কোভিড ব্যবস্থাপনা সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গত ১৬ মাসে একটা পর্যায়ে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি। ডেডিকেটেড হাসপাতাল হয়েছে। আর সংক্রমণের উর্ধ্বগতির জন্য সেটাই এখন সামলানো যাচ্ছে না। আর ডেঙ্গু রোগী প্রতিদিন যে ১০০-২০০ করে যেটা ভর্তি হচ্ছে, এটার আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা যদিও সরকার ইতিমধ্যে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিন্তা করছে, কিছু হাসপাতাল ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করছে এবং সেভাবেই চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও আমি মনে করি এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সেখানে জনবলের সমস্যা, সেখানে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও জটিলতা হবে। কারণ, ডেঙ্গু এবং করোনা অনেকের একসাথে হচ্ছে। সেই রোগীর চিকিৎসায় খুব জটিলতা দেখা দিবে এই কারণে যে এ ব্যাপারে ডাব্লিউএইচও (WHO) এর ঐরকম কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু বাস্তবতায় এমন কিছু মেডিকেশন আছে যেটা ডেঙ্গুর জন্য প্রযোজ্য আবার করোনার জন্য সেটি জটিল। সুতরাং এই সমস্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর জটিলতা আছে।
বাংলাদেশে একদিকে করোনার উর্ধ্বমুখী সাথে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ, অন্যদিকে কঠোর লকডাউনেও গার্মেন্টস-কলকারখানা খুলতে চান পোশাক শিল্পের মালিকরা। চলমান এই পরিস্থিতিতে করণীয় কি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।
অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ঈদের পরে কঠোর লকডাউনের দুই সপ্তাহ এগোচ্ছে। কিন্তু এখনও সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি গত ৮ থেকে ১০ দিন যাবৎ সংক্রমণের হার ২৮ থেকে ৩০ এর মধ্যেই আছে। লাগামটা টেনে ধরা হয়েছে এটা মনে হচ্ছে, কিন্তু এই ৮ দিনের যে বিধিনিষেধ শিথিল ছিল ঈদের সময় সেটার প্রভাব কিন্তু আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আমরা লক্ষ্য করতে পারব। এই শঙ্কাটা কিন্তু রয়েছে। ঠিক এই সময়টায় যেহেতু সংক্রমণ আশানুরূপভাবে কমে আসে নি, আবার ওই আটদিনের প্রতিফলন প্রথম সপ্তাহে আসবে। এই সব মিলিয়ে এখন যদি আবার গার্মেন্টস মালিক বা কলকারখানার মালিকরা যদি সবকিছু খুলতে চায় এবং অন্যদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও আমরা যেরকম জনসাধারণের চলাচল দেখেছি, আর যদি এগুলি খুলে দেওয়া হয় তাহলে আসলেই আমাদের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এটা বলা মুশকিল। তবে এটা আমরা আশঙ্কা করছি যে, একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আমাদের তো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আসলে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়েই কিন্তু সরকার এগোচ্ছে। একে তো করোনার চিকিৎসা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেখানে জনগণ বিধিনিষেধ মানে না, চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা আছে, রাজনৈতিক দলের সমালোচনা আছে, এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র আছে, আবার ডেঙ্গু করোনা একসাথে। সব মিলিয়ে কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই সরকার এগোচ্ছে। সেই জায়গায় আমার মনে হয় জীবন-জীবিকা বিবেচনা করে, মানুষের জানমালের বিবেচনা করে এই মুহূর্তে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সাথে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব বলেন, তবে আমি মনে করি এখানে একটা আশার আলো আছে, সরকারের শুভ উদ্যোগ আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি হবে ৭ আগস্ট থেকে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলে সেখানে টিকা দেওয়া যাবে। জনপ্রতিনিধিদের সেখানে জেলা-উপজেলায় সম্পৃক্ত করা হবে। ইউনিয়ন ওয়ার্ডে করোনা প্রতিরোধ ও প্রচারণা কমিটি করা হবে। রাজনৈতিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব দিয়েছেন সহযোগিতার জন্য। এটা আসলে আমি মনে করি একটা আশার আলো। যেহেতু টিকার জটিলতা কেটে গেছে। আমরা এই বছরের মধ্যেই ২১ কোটি টিকার একটা আশ্বাস পেয়েছি, সেটা আসা শুরু হয়ে গেছে। সেই জায়গায় যদি সপ্তাহে ৬০ লক্ষ করে টিকা দেওয়া হয়, যেহেতু আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। সেইসাথে জনসাধারণ যদি টিকাদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে তাহলে আমি মনে করি যে এটা একটা সফলতার দিকে যাবে। পাশাপাশি মাস্ক পরার ক্যাম্পেইনটাও এর সাথে যুক্ত করতে হবে। আমার মনে হয় সরকার প্রয়োজনে কাপড়ের মাস্কের একটি মডেল তৈরি করে যেন জনসাধারণ ধুয়ে আবার পরতে পারে এবং সরকার যদি এটা সাপ্লাই করে, প্রচার করে এবং মাস্ক বিতরণ করে সেইসাথে জনপ্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বিত্তশালীরা সবাই যদি এগিয়ে আসে এই ক্যাম্পেইনে তাহলে আমার মনে হয় একটা সুবিধাজনক অবস্থানে আসা যাবে।
অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, মশা নিধন, প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদি করছে। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের ভ্যাকসিনের সুযোগ নেই। ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন পৃথিবীতে আবিষ্কার হয়েছে এবং ১১টি দেশে এর অনুমোদন আছে। কিন্তু এই ভ্যাকসিনের চর্চা হচ্ছে না। কারণ, প্রথমবার ভ্যাকসিন দিলে জটিলতা তৈরি হয়। একবার যাদের ডেঙ্গু হয় তাদেরকে দেওয়া হয়। এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। ৪টি স্ট্রিং ডেঙ্গুর। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন এটার কোন আশার আলো দেখায় না। সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, ডেঙ্গু এবং করোনা -দুই ক্ষেত্রেই আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মশা নিধন এবং আমাদের মাস্ক পরা। এগুলো দিয়ে যদি জনসাধারণ নিজেরা সুরক্ষা থাকে এবং সরকারে নির্দেশনা মেনে চলে তাহলেই আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টিকাদান কর্মসূচীর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা আশা করি করোনা এবং ডেঙ্গু, দুই ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণের সফলতার দিকে যাব বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭