ইনসাইড বাংলাদেশ

না কমছে করোনা, না চলছে অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 31/07/2021


Thumbnail

বাংলাদেশ গত ১৪ এপ্রিল থেকে থেমে থেমে লকডাউন চলছে নানা রকমের লকডাউন। কখনো কঠোরতম লকডাউন, কখনো আবার শিথিল লকডাউন। এ সমস্ত লকডাউন না মানছে মানুষ, না মানছে করোনা। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ৩০ শতাংশের আশেপাশে। আর মৃত্যুর হার ২০০ ওপরে যেন স্থিতিশীল হয়ে আছে। অর্থাৎ এই লকডাউনে করোনা কমছে না। সাধারণত বলা হয়, একটি এলাকায় যখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে লকডাউন করা হয়। লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের চলাফেরা বন্ধ করা, যেন সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য লকডাউনই একমাত্র সমাধান। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে। কিন্তু তাই যদি হবে তাহলে ১৪ এপ্রিল থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত লকডাউনেই তো করোনা সংক্রমণ কমার কথা। কিন্তু তা কমছে না। কমছে না এই কারণে যে, যেভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে তা সমন্বয়হীন, জগাখিচুড়ি এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। যার ফলে মানুষ এসব লকডাউন মানছে না। এই লকডাউন না মানার ফলে করোনাও কমছে না। আবার এই সমস্ত লকডাউনে ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। ধুকে ধুকে চলছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো, নানারকম সংকটে পড়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। যেমন- ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউনে বিভিন্ন দোকানপাট শপিংমল বন্ধ ছিল, বন্ধ ছিল গণপরিবহন। এই সময় পর্যটন খাতও প্রায় পুরোটা সময় বন্ধ ছিল। ফলে এই লকডাউনে এই সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষ এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। এদের অনেকেই এক গভীর অনিশ্চয়তায় এবং অর্থনৈতিক দৈন্যতাকে বরণ করে নিয়েছে। বাংলাদেশের গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে তার শিক্ষকরা এখন বেতন-ভাতার অভাবে অন্যান্য পেশা বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বেঁচে থাকার জন্য তাদের অমানবিক কাজকর্মও করতে হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় আমরা অর্থনীতিতে প্রণোদনা দেই না কেন একটি গভীর সংকট ক্রমশ বাড়ছে।

ব্র্যাকের গবেষণায় বলা হচ্ছে, দেড় কোটি নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে যদিও সরকার এই তথ্য অস্বীকার করেছে। অবশ্য সরকারের কাছে হালনাগাদ এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত নেই। সরকার এটিকে মানে না মানে অর্থনৈতিক সংকটে যে নিম্ন আয়ের এবং মধ্যবিত্ত মানুষ দিশেহারা তা বলাই বাহুল্য। থেমে থেমে লকডাউন, আধা লকডাউন, আধা সবকিছুর ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মুখে থুবড়ে পড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫০ থেকে ২০ শতাংশ লোকবল কমানো হয়েছে। বেসরকারি খাতে চাকরিজীবী অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। এর ফলে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ফলে বাংলাদেশে এমন একটি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে কোনটাই হচ্ছেনা। এই যে লকডাউন বারবার করে ঘোষণা করা হচ্ছে, তার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এটি বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যেমন কোন কাজে দিচ্ছে না, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রেও হোঁচট খাচ্ছে। আর এজন্যই সাধারণ মানুষ মনে করেন যে, আমাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউনের লুকোচুরি গল্পকে আমাদের বাক্সবন্দী করতেই হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি সত্যি সত্যি লকডাউন চাই কিনা। সত্যি সত্যি লকডাউন চাইলে লকডাউনের মত লকডাউন দিতে হবে। আর যদি না চাই তাহলে লকডাউনকে লকডাউন করে আমাদের স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দিতে হবে। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়গুলোকে সামনে এনে আমাদের করোনা মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে এখন যেভাবে এই লকডাউনের খেলা চলছে তা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আত্মঘাতী হিসেবে বিবেচিত হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭