ইনসাইড বাংলাদেশ

শুরু হলো শোকের মাস আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/08/2021


Thumbnail

বাঙালি জাতির শোকের মাস আগস্ট আজ থেকে শুরু হলো। এ মাসেই বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত, ঘৃণিত এবং বর্বরোচিত এক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, যা বাংলাদেশ তো বটেই সমগ্র পৃথিবীতেই এক ন্যক্কারজনক বর্বরোচিত ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনের মহানায়ক, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাঙালির নিরন্তর প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথিকৃৎ, বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, মানবতার শত্রু, প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে এই আগস্টেই নিহত হন। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর থেমে থাকেনি এই ঘাতকচক্রের চক্রান্ত। ২০০৪ সালে এই আগস্ট মাসের ২১ তারিখেই ঘাতকরা জন্ম দেয় আরেকটি কালো অধ্যায়ের। এই আগস্ট মাসেই আরো কিছু ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম। সব মিলিয়ে আগস্ট মাস, জাতীয় শোকের মাস।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট শেষ রাতে (১৫ আগস্ট) ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসায় নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করে। তাকে সপরিবারে নিঃশেষ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, সদ্য বিবাহিত পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে সেখানেই হত্যা করা হয়। নির্মম ঘাতকদের হাত থেকে বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় তার ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। এছাড়া ওই দিন ৩২ নম্বরের বাড়িতে কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও হত্যা করা হয়। বিশ্ব ইতিহাস এটি একটি নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা বাঙালি জাতি। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে ছিলেন তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। তাই তারা এই নির্মম ও ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে বেঁচে যান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি এই ঘাতক গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে জারি করে এক ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন, যা আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার এই কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোকের মাস আগস্টে আরও একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এবং কলঙ্কিত ঘটনার জন্ম দেয় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এবং ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় ন্যাকারজনক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এইদিনও ভাগ্যক্রমে নেতাকর্মীদের ভালবাসায় বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সহধর্মীনি আইভি রহমান সহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৪ জনকে হত্যা করা হয়, যা এই শোকের মাসকে আরও শোকাবহ এবং কলঙ্কিত করে তোলে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭