ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/08/2021


Thumbnail

জাতীয় শোকের মাস আগস্ট। অবশ্য জাতির পিতার কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকার কারণের জন্যে শুধুমাত্র শোকের মাসেই আমরা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা এবং তার পরিবারকে স্মরণ করিনা। এখন আমরা বর্তমানে সারা বছরই বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে করি এবং নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা শুরু করেছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারার অন্তরালে রোজনামচা যারা সঠিকভাবে পড়েছেন তারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল বিষয়টি সম্পর্কে অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবেন।

আমি এবং আমার সৌভাগ্য হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে প্রায় ষাট বছরেরও বেশি সময় জানার। এ কারণেই অনেক ঘটনা এবং অনেক স্মৃতি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে আমার আছে যেটা আমি ছাড়াও অনেকের লেখনীতেও এসেছে। সৌভাগ্য হয়েছে আমার বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রায় এগারো বছর বঙ্গবন্ধুকে জানতে পেরেছি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর পেয়েছি, সেটি জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা। আমি যে এফআরসিএস লাভ করি এতেও শতকরা একশত ভাগ বঙ্গবন্ধুর অবদান। বঙ্গবন্ধু আমাকে তখন চিকিৎসকদের বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা ছিল, কেননা নতুন দেশ হওয়াতে বাংলাদেশ গড়ার জন্যে চিকিৎসকদের প্রয়োজন ছিল। বঙ্গবন্ধু আমাকে এফআরসিএস করতে আমার নিজ খরচে তিনি অনুমতি দেন এবং আল্লাহর অশেষ রহমত যে আমি এফআরসিএস করে দেশে ফিরেছি। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ আমার যে, গিয়েছি বঙ্গবন্ধু যখন পরিচালনা করছেন তখন আর যখন ফিরেছি তখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা দেশ পরিচালনা করছে। বঙ্গবন্ধুর একটি স্মৃতি শুধু আমি বলব যারা কাছে মিশেছেন তাদের হয়তো অনেকেই দেখেছেন যে বঙ্গবন্ধু, তার জন্য যারা সামান্য কিছু যেমন তার গাড়ির দরজাটাও যদি খুলে দিয়ে থাকে, চিরকাল বঙ্গবন্ধু তাকে স্নেহ করেছেন। এরূপ মহামানব বিশ্বে খুব কমই দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে দেশ দিয়েছেন, আমাদেরকে ঠিকানা দিয়েছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে বেশিদিন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ দেয়নি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিকটাত্মীয়সহ হত্যা করা হয়। এখানে আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতার কিছু বিষয়ও উল্লেখ করতে চাই।

বঙ্গবন্ধু জীবনে জেল খাটাটা ছিল মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি কখনও মাথা নিচু করতেন না। সে কারণেই একের পর এক তাকে কারার অন্তরালে রেখেছে, জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কারার অন্তরালে ছিলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়টি হচ্ছে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর জীবনটা ছিলো অন্যধরণের। যদিও আসল মনোভাব বোঝা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু এটা বোঝা যেত বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীদের জন্য জীবন দিতে সবসময় প্রস্তুত ছিলেন। যখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাবার জন্যই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়, তখন আওয়ামী লীগের সভা থেকে শুরু করে সমস্ত কাজগুলো বঙ্গমাতা মোটামুটি তাঁর নখদর্পণে রেখে যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নিয়েছেন। অনেক ইতিহাস বঙ্গমাতার এখনো সাধারণের অজানা। যেমন: একটি উদাহরণ হিসেবে বলি যে রাজসাক্ষী কামাল উদ্দিন, উনি বৈরী হলেন অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে অস্বীকার করে বরং কোর্টে জানালেন তাকে অত্যাচার করেই সাক্ষী করা হয়েছে। তখন এই কামাল উদ্দিনকে এবং তার স্ত্রীর ভাই সুলতান উদ্দিন আহমেদকে -এই দুইজনকে অসম্ভব রকমের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করে প্রায় মৃত্যুর পর্যায়ের অবস্থাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারা স্থানান্তরিত করে। কিন্তু সমস্ত লোকজনের জানার বাইরে। কিন্তু এই বিষয়টিও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জানতে পারেন। আমি মাঝেমাঝেই আগরতলার সেই দুঃসময় বঙ্গমাতার ওখানে ফাঁকে ফাঁকে যেতাম। তিনি একদিন আমাকে বললেন যে, কামাল উদ্দিন এবং সুলতান উদ্দিনকে এরকম অত্যাচার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কোথাও রাখা হয়েছে তবে তাদের কোথায় রাখা হয়েছে বা কি এই বিষয়ে তিনি কোনরকম বা উনার কোন ইচ্ছা আছে জানার কোথায় কে, কোনভাবে কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না বা কারো সাথে আলাপ করে না। কামাল উদ্দিনের বাসা মগবাজারের কাছাকাছি ছিলো। তিনি খুঁজে সেখানে যেয়ে তাঁর পরিবারে কোন প্রয়োজন থাকলে উনার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব জানাবে এবং নিজে করবে। আমি তখন থেকেই কামাল উদ্দিনের বাসায় যাই এবং সেখানে একটি খুব উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো যে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যিনি সাক্ষী দিচ্ছেন তাঁর কন্যা কামাল উদ্দিনের বাসায় এসে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছেন। সম্ভবত কামাল উদ্দিনের তারা পরিচিত বা দুঃসম্পর্কের কোন আত্মীয় ছিলো। সেই কিশোরী তখন এই যে নাম করা পরিচালক চাষী, চাষীর সাথে তাদের এই মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে মেয়ের বাপের খুব আপত্তি ছিলো, এই কারণে কামাল উদ্দিনের বাসায়। কামাল উদ্দিনের স্ত্রীর নাম ছিল হাসিনা। হাসিনা আপা তখন এই মহিলাকে দিয়ে তাঁর পিতা যাতে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে সাক্ষী কঠিনভাবে না দেয় সে ব্যাপারেও লক্ষ রাখেন এবং আমাকে ওই কিশোরীর পরিচয় কাউকে বলতে নিষেধ করেন। তারপরে আমার হাসিনা আপার সাথে একদম আত্মীয়স্বজনের মত সম্পর্ক হয় এবং সাথে সাথে এটিও আমার কাছে পরিষ্কার হয় যে হাসিনা আপা জীবিত থাকতে কামাল উদ্দিন সাহেব বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে কোন সাক্ষী দেবেন না।

আমার এখন যে চিন্তাটি তখন ঠিকমত বুঝিনি, বঙ্গমাতা কিন্তু কাজটি করেছিলেন একইসাথে যাতে বঙ্গবন্ধুর দুর্দিনে সাক্ষী না দিলে এই পুরো কেসটি দুর্বল হয়ে যাবে এবং অন্যদিকে অন্য সাক্ষীদেরও যাতে থিংক চেঞ্জ না হয়। এইভাবে বঙ্গমাতার অনেক ইতিহাস আছে। স্বাভাবিকভাবে তাই শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধুর সাথে সাথে বঙ্গমাতার সাথে আমার যে স্মৃতি সেগুলি মনে পড়ে। সময় এবং সুযোগমত এ সম্বন্ধে আমি আলাদাভাবে আমার এ সকল স্মৃতি লিখবার ইচ্ছা আছে। আল্লাহ সুযোগ দিলে সেটা আমি করবো। শুধু শোকের মাসে দোয়া করি আল্লাহ যেন বঙ্গবন্ধুর, বঙ্গমাতা এবং তাঁর সাথে তাঁর পরিবারের সবাই এবং নিকটাত্মীয় যাদেরকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল তারা যেন বেহেস্তে স্থান পান। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ যেন দীর্ঘ হায়াত দেন এবং এই সুস্থ জীবনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখেন যাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন সেই স্বাধীন বাংলাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সোনার বাংলায় পরিণত করেন। তিনি ইতিমধ্যে সোনার বাংলায় পরিণত করার দিকে অনেক অগ্রসর হয়েছেন কিন্তু আরও অনেককিছু এখনও করতে হবে। আমাদের সকলের দোয়া তাই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতি যে আমরা সকলেই যেন একতাবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার প্রতিটি আদেশ, নির্দেশ, আকাঙ্ক্ষা শতভাগ পূর্ণ করার চেষ্টা করি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭