বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল দেশের মানুষের মুক্তি, সবার জন্য বাসযোগ্য, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে গর্ব করার মতো অনেক অর্জন থাকলেও বৈষম্যহীন ও সবার জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এই ব্যর্থতার কারণে সবচেয়ে বড় অবহেলিত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ অন্যতম। যাদের চিরাচরিতভাবে হিজড়া বলে আমাদের সমাজে সবাই চেনেন।
এবারের ঈদে অনাগ্রসর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নির্মিত হয়েছে একক নাটক ‘মোমের পুতুল’। এর গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনায় ছিলেন মুহাম্মদ মিফতাহ্ আনান।
‘মোমের পুতুল’ নাটকটি গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) গ্লোবাল টিভির ইউটিউবে প্রাচার হয়। ঈদের নির্মিত নাটকগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রমী গল্পের এই নাটকটি রয়েছে আলোচনায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখলেই দেখা যাচ্ছে ভূয়াসী প্রশংসা। প্রতিটি চরিত্রের অনবদ্য অভিনয় দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে অভিনেতা শামীম হাসান সরকারের অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শকদের মনে। পাশাপাশি প্রশংসিত হয়েছেন শাহবাজ সানির অভিনয়। ভিন্ন ধারার অভিনয়ে যেন নিজেকে পুরোটা উজার করে দিয়েছেন তিনি।
নাটকটি দেখে অনুভূতি জানিয়ে স্বপন সরকার নামে এক দর্শক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম হিজরাদের নিয়ে নাটকটি ফানি ছাড়া কিছু হবে না। কিন্তু না আমার দেখা এই ঈদের ব্যতিক্রমী সেরা একটি কাজ ‘মোমের পুতুল’। পুরোটা নাটক জুড়েই বাস্তবতা যা এই করোনাকালীন আমরা সবাই দেখে আসছি, অনুভব করছি। কিন্তু কখনো মাথায় আসেনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা কিভাবে চলছে।’
তিনি আরো লিখেন, ‘নাটকটিতে বঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের উপর সম্মান রেখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তারাও মানুষ। ভালোবাসা তাদের মধ্যেও আছে। শেষ পর্যন্ত চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। পরিচালক ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ এমন ভালো গল্পের একটি নাটক উপহার দেওয়ার জন্য। এভাবেই বাংলা নাটকের পরিবর্তন ও নতুনত্ব আনুন। বাংলা নাটক আরো এগিয়ে যাক বহুদুর।’
এ প্রসঙ্গে নির্মাতা মিফতাহ্ আনান বলেন, ‘মোমের পুতুল’ নাটকের গল্পে সামাজিক চক্ষুলজ্জার কারণে হিজরা সন্তানদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা এবং একজন হিজরার নানান অপমানের অবজ্ঞার পর পরিবার ছেড়ে হিজরাদের সমাজে যোগ দেয়া। তাদের দৈনন্দিন জীবন ও তাদের প্রতি সমাজের নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি এসব বিষয় পর্দায় তুলে আনতে চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনার এ সময়ে সবার মতো তাদেরও আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে জীবন-যাপনের জন্য তাদের খারাপ কাজগুলোতে শামিল হতে হচ্ছে। করোনার এই সময় অনেক বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পর হিজরাদের সেচ্ছাসেবীর টিম বানিয়ে তাদের সেবা করা। মানব ধর্ম পালন করা। সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে মানব ধর্ম সবার আগে। তারাও মানুষ, তাদেরও ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্টের অনুভূতিগুলো সবার মতোই। নাটকটি প্রচারের পর থেকেই বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। অদূর ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব দর্শকদের এমন ভালো কাজ উপহার দেওয়ার।’
নাটকটিতে আরও অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, সাবেরী আলম, জুবায়ের জাহিদ, শাহবাজ সানি, আল-আমিন প্রমুখ।