ইনসাইড থট

ওষুধ খেলেও রোগ সারবে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/10/2017


Thumbnail

তোমরা রোগীর জন্য ডাক্তার ডাকো
অসুখ ও রোগ সারে
যেদিন ডাক্তারকে ধরবে রোগে
ডাকবা তোমরা কারে...?

নকুল কুমার বিশ্বাসের একটি গান। ডাক্তারও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়। ডাক্তার সাহেবেরও মরনের ভয় আছে। কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে যান তার সঠিক সেবায় মাধ্যমে হাজারও রোগী সুস্থ হয়। অথচ অসাধু কিছু ওষুধ কোম্পানির ওষুধ বিক্রেতাদের তাগাদায় পথ হারাচ্ছেন অনেক ডাক্তার। রোগী তার অসুখ সারানোর চেয়ে ভোগান্তিতেই পড়েন বেশি। বিভিন্ন রকম পরীক্ষার আর স্বল্প মেয়াদী ওষুধে স্বাভাবিকভাবে সুস্থ হওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে রোগীরা। তাই এখন ডাক্তারকেও ধরবে রোগে, এটা যেন কাল্পনিক কথন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ডাক্তার ভুলে যাচ্ছে তাদের সততার কথা। একটা সময় ডাক্তাররা কারও ভয়ানক ব্যাধি হলেও সহজে শান্তনা দিতেন, ‘আপনার কিছু হয়নি ভালো হয়ে যাবেন খুব তাড়াতাড়ি।’ আর এখনকার ডাক্তারদের কথা গুলির চেয়েও দ্রুত কলিজায় বিধে। আপনার যে রোগ হয়েছে এই পরীক্ষা সেই পরীক্ষা করতে হবে। পরে ওমুক দিন অস্ত্রোপাচার করতে হবে। এখন আরেক ভয়ানক রীতি এসেছে গেছে যে ডাক্তাররা কথায় কথায় লিখছেন অ্যান্টিবায়োটিক। সামান্য জ্বর হলেও আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে এর। যার ফলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বেশির ভাগই স্বাস্থ্যহানীর ঝুঁকিতে পড়ছে রোগীরা। একদিকে ডাক্তাররা যে অ্যান্টিবায়োটিক লিখেন অনেক সময় অন্যটা দিয়ে বুঝিয়ে দেন ফার্মেসিগুলো। অন্য দিকে বেশির ভাগ সময় তারা অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ ওষুধ না দিয়ে দুই-এক ডোজ দেন। যা একজন রোগীর জন্য মারাত্বক আর এটা এমন মারাত্বক যে, পরবর্তিতে একই রোগের একই অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজে আসবে না রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে। একটি গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী) জীবাণুর মাধ্যমে বছরে মারা যাচ্ছে ৭০ হাজার মানুষ। আর ২০৫০ সাল থেকে বছরে এই সংখ্যা হবে এক কোটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সজনিত মৃত্যু কমাতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে ব্যবহৃত জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধ হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। তবে এ জন্য যথাযথ মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মৃত্যুঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। বাইরের দুনিয়া রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ তো দূরের কথা, ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির কোনো নিয়ম নেই বলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন করেন। অথচ আমাদের দেশে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক উদাসীন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের হাতে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সংক্রামক রোগ বেশি, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনও বেশি। কিন্তু বিশ্বে যত ওষুধ তৈরি হচ্ছে তার মাত্র নয় ভাগ কেনে উন্নয়নশীল দেশগুলো। উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি এখন অসংক্রামক ব্যাধির দিকে। উন্নত দেশগুলো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে খুব একটা আগ্রহী নয়। কাজেই বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে, নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হওয়া প্রয়োজন তেমনি সঙ্গে সঙ্গে সরকার ও সাধারণ মানুষের উচিত অ্যান্টিবায়োটিকের সুব্যবহার নিশ্চিত করা। রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে শুধু রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা এবং পুরো ওষুধ ব্যবহার করা। শারীরিক সুস্থতা অনুভব করলেও অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ণ ব্যবহার সম্পন্ন করা, কোনো বিরুপ কিছু দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণুগুলো ওষুধ প্রতিরোধী এবং ওষুধের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব না হলে অচিরেই খুব সাধারণ সংক্রমণ, সামান্য কাটাছেঁড়ায় মানুষের মৃত্যু হবে। গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বের ১১৪টি দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরী করে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট, ভাইরাস অথবা ছত্রাকজনিত কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ বা ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার ঝুঁকির বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাধারণ স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক ড. কেইজি ফুকুদা।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ এবং এর যৌক্তিক ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, পশু সম্পদ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য পেশাজীবী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর একযোগে কাজ করতে হবে। জিএআরপি বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০টি দেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ক্ষেত্রে পুরো ওষুধ সম্পন্ন করতে হবে। একটু সুস্থ্যতাবোধ করলেও নিয়ম অনুযায়ী পুরো ওষুধ না খেলে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে যেসব জীবাণু থাকে সেগুলো মরে না। এগুলো পরে রোগীর শরীর থেকে বিভিন্ন উপায়ে অন্যের শরীরে প্রবেশ করে। এসব জীবাণুতে অন্য কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তখন একই অ্যান্টিবায়োটিকে আর ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো কাজ করে না। তখন আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়, যেটি মূত্রের সিএস পরীক্ষার পরই দিতে হয়। অ্যান্টিবায়োটিকের অহরহর ও অনিয়মিত ব্যবহার বন্ধ না করতে পারলে মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকবে যার ফলে জীবনহানীর ঘটনাও বাড়বে। বাড়বে স্বাস্থ্যসেবা খরচ। স্বাভাবিক ভাবে সপ্তাহের ওষুধ সপ্তাহেই খেতে হবে। কাম বা বেশি না নির্দিষ্ট সময় নির্দেশিত ওষুধ না খেলে দেহে আর কোনো ওষুধ কাজ করবে না। সুতরাং এখন থেকে শুধু ডাক্তারই না সাধারণ মানুষেরই সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭