ইনসাইড আর্টিকেল

হে নেপোলিয়ন, আপনার শিক্ষিত মায়েদের আজ বড্ড প্রয়োজন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/08/2021


Thumbnail

নেপোলিয়ন বলেছিলেন, আমাকে শিক্ষিত একজন মা দাও। আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো। আজকের দিনে এই কথাটার মর্মার্থ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি আমরা। কেন আসলে শিক্ষিত মা দরকার?

“নাইন্টি’জ কিডস” বলে একটা প্রবাদ আছে। এই নব্বইয়ের দশকের প্রজন্ম নিজেদের নিয়ে নানা নস্টালজিয়াতে ভোগে এখন হায়-হতোস্মি করে। হুট করেই প্রজন্মের মাঝে ঢুকে গেলো ট্রল আর মিম কালচার। বই পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা এখন পড়ে ফেসবুক। পাড়া মহল্লায় মুরুব্বিদের দেখে সালাম দেয়া ছেলেমেয়েরা এখন ফেসবুকে ঢুকে সবার আগে তাদেরকে ব্লক করে, যেন জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বড়রা জেনে না যায়। বইয়ের নেশায় বুঁদ স্লোগানটা এখন ইয়াবা আর এলএসডির নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।

এসব কথা কেন বলছি? আসলে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য স্যাকরার কিছু ঠুকঠুক করা লাগে। আমি এখন সে স্যাকরা হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছি। এরপর কামারের ঘা মারতে শুরু করবো। দেখা যাক, লেখাটা আসলে কোথায় যায়।

তো যা বলছিলাম, এই নব্বইয়ের প্রজন্মের কাছে সেলিব্রিটি বা নায়িকা বলতে বোঝায় অপি করিমের মিষ্টি হাসি, বিপাশা হায়াতের অভিনয়, সুবর্ণা মুস্তাফার ভুবনভোলানো অভিনয় আর হাসি। এছাড়াও আরও অনেকের নাম এখন মনে আসছে। বিজরী বরকতউল্লাহ, দীপা খন্দকার, শীলা আহমেদ, শ্রাবন্তীসহ আরও আরও অনেকে। কেবল অভিনয়ের দিকেই নয়, তাদের ব্যক্তিত্ব যে কতশত মেয়েদের জীবনের চলার পথে অনুপ্রাণিত করেছে, তা বলে বোঝানো মুশকিল। আমি এক পরিচিত আত্মীয়ার কথাই বলতে চাইবো, যিনি চেয়েছিলেন অপি করিমের মতো অভিনেত্রী, শিক্ষিকা চিত্রশিল্পী একইসাথে আরও অনেক কিছু হতে। অপি করিমকেই ধ্যান-জ্ঞান মেনে তিনি নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চেয়েছিলেন। পেরেছেনও, এইজন্য তাকে সাবাশি জানাতেই হয়।

তবে দিনকাল বদলে গিয়েছে আজ। নতুন নতুন চ্যানেল হচ্ছে, ঝাঁকে ঝাঁকে সেলিব্রিটি হচ্ছে। কে কোন জায়গায় সেলিব্রেটেড, তা চিন্তা করতে গেলেও কপালের রেখায় ভাঁজ পড়ে। নারীরা হচ্ছেন সর্বংসহা, দশভূজার প্রতিমা। সব সয়ে নিতে পারে, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে থাকতে পারেন, একইসাথে জগত সংসার সামাল দিতে পারেন।

গত কয়েকদিনে খবরের কাগজ কিংবা গণমাধ্যমে যেসব খবরগুলো আসছে, সেগুলো পড়তে গেলে মাথায় চিন্তার ভাঁজের রেখে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। হেলেনা জাহাঙ্গীর, তথাকথিত মডেল পিয়াসা, মৌ- এদের কর্মকাণ্ড দেখে বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিতে নিজের ভুঁইফোড় অবস্থানের কারণে সরকার মহলকে বিব্রত করা, অভিনয়ের নামে মদ, ইয়াবা, স্বর্ণ, হীরা ইত্যাদি চোরাচালান নানা কাজে নাজেহাল হতে হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার মহল এবং একইসাথে জনগণকে। এমন নয় যে দেশের অবস্থা নব্বইয়ের দশকে ভালো ছিল। সেখানেও নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু বর্তমানে তা যেন একেবারে দুরন্ত ঘুড়ির মতোই সবেগে উড়ে যাচ্ছে আকাশপানে।

কিছুদিন আগেই আলোচিত নায়িকা পরিমনির কথাই ধরা যাক। একজন নারী যখন কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন, এরচেয়ে সেন্সিটিভ ইস্যু আর কিছু হতে পারে না। গণমাধ্যমকে ডেকে প্রেস কনফারেন্স করে সেই বিষয়টিকেই সকলের সামনে আনলেন পরিমনি। অভিযুক্তকে নেয়া হলো কারাগারে। তদন্তে বেরিয়ে গেলো পুরো ঘটনাটাই একেবারে ১৮০ ডিগ্রী উল্টো। যারা পরিমনির পক্ষ নিয়েছিলেন, তারা এবার লজ্জায় মুখ ঢাকলেন। আরেকটি কথা আবারও প্রমাণিত হলো। তা হচ্ছে সেলিব্রিটিদের কোনো ভরসা নেই।

এরপর এলো হেলেনা কাণ্ড। ভুঁইফোড় রাজনৈতিক সংগঠনের মালিকানা নিয়ে তিনি আলোচিত হলেন গণমাধ্যমে। এরপর তার বিপুল সম্পদ ও কাণ্ড কারখানা দেখে আমাদের হতাশ হবার যোগাড়, একইসাথে বিস্মিত। হেলেনা জাহাঙ্গীর কাণ্ড শেষ হতে না হতেই আবার সামনে এলো তথাকথিত মডেল পিয়াসা, মৌ কাণ্ড। বাড়িতে থরে থরে সাজানো মদের বোতল, বিপুল সম্পদের তথ্য, ঝাঁ চকচকে গাড়ি ইত্যাদি দেখে মাঝেমধ্যে মনে হয় আমরা কি বাংলাদেশ নামক তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে বাস করি?

এতদিন জানতাম গরু একটি চতুষ্পদী উপকারী প্রাণী। দুধ মাংস চামড়া দেয়। এই অবলা প্রাণীকে যখন ইয়াবা কিংবা স্বর্ণ চোরাচালানিতে ব্যবহার করা হয়, সেটি আমাদের অবাক করে। গরু মুখে কিছু বলতে পারে না, কিন্তু তাকে যখন ব্যবহার করা হয়, আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি সে নিজেকে মানুষের চেয়ে অনেক উঁচুশ্রেণীর বলেই মনে করে।

আসলে মূল সমস্যাটা কোথায়? আমাদের রোল মডেল নেই, তা একেবারেই বলা যাবে না। এই দেশের নারীরাই বিশ্বমঞ্চে আমাদের মাথা উঁচু করে তুলছেন বার বার। কয়েকদিন আগের মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ফাইনালিস্ট কিশোয়ারের কথাই ধরা যাক। নানী-দাদীদের রান্নাকে বিশ্বমঞ্চে এভাবে উঁচু করে তুলে ধরতে পারে কয় জনা? মুনজেরিনের মতো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে লাখো তরুণীকে অনুপ্রাণিত করতে পারে কয় জনা?

তবু কেন গণমাধ্যমে চাউড় হয়ে যায় হেলেনা-মৌ-পিয়াসাদের মতো নারীরা? তারাও তো নারী। ক্ষমতা আর পয়সার লোভে মানুষ কতটা অন্ধ হয়ে যায়, এদের না দেখলে কি বোঝা যেত? মানুষ কেন এদের নিয়ে মেতে থাকে, সেটিও এখন একটি বড় প্রশ্ন। আসলে মানুষের দরকার কিছু রিলিফ মোমেন্ট। এই রিলিফ মোমেন্টেরই রসদ যোগাতে এসে হাজির হয় হয়ত হেলেনা-মৌ-পিয়াসাদের মতো নর্তকীরা।

আমাদের রিলিফ মোমেন্ট বড্ড বেড়ে যাচ্ছে ইদানীং। নেপোলিয়নের শিক্ষিত মায়েদের দরকার। যারা তাদের সন্তানদের এসব অসুস্থতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সাহায্য করবেন সুস্থ একটি প্রজন্ম গড়তে। সেটিই তো সবার কাম্য, তাই না?  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭