ইনসাইড গ্রাউন্ড

কোড ৭৫ : ম্যান ফ্রম অ্যানাদার প্ল্যানেট


প্রকাশ: 04/09/2021


Thumbnail

ভীনগ্রহের ক্যালেন্ডারে ২০৮৭ সালের শেষভাগের কোনো একটা সময়! ভীন গ্রহের একটি স্থানে তৈরি হচ্ছে একটি টাইম মেশিন। উদ্দেশ্যে ৭৫ নাম্বার কোডধারী এক যাত্রীকে নিয়ে পৃথিবী নামক দূরবর্তী একটি গ্রহ ভ্রমণ করে আসা। টাইম মেশিনটি তৈরি হবার পর ভ্রমণের দিন তারিখ ঠিক করা হলো, সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো পেছনের কোন একটি সময়ে ঘুরে আসবার। টাইম মেশিনের সময়ের ডায়ালে সেট করা হলো ১৯৮৭ ডিজিটটি। যাত্রা শুরু করলো টাইম মেশিন। পৃথিবীর একটি অজ্ঞাত দেশে চুপিসারে এসে থামলো টাইম মেশিন। পৃথিবীর নিয়ম মেনে বিশ্বের একটি উন্নত দেশে ছোট্ট একটা শিশু জন্ম নিলো।

বাবা মায়ের কোলজুড়ে আসা ছেলেটি বড় হতে লাগলো। ছোট্ট শিশুটি যে দেশে জন্মেছিলেন সেই দেশেরই একটি ব্যাংকে চাকরি করতো ছেলেটির বাবা। ছেলেটি বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে একদিন ছেলেটির বাবা আবিষ্কার করলেন যে তার ছেলেটি ক্রিকেটে পারদর্শী। ছেলের এই প্রতিভার কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো গোটা দেশেই। ধীরে ধীরে মূলধারার ক্রিকেটে খুব সহজেই তাই ঢুকে পড়লো ছেলেটি। ছেলেটির দুইটি গুন ছিলো, একইসাথে ছেলেটি করতে পারতো ব্যাটিং ও বোলিং। ন্যাচারাল ক্রিকেট প্রতিভার সাথে সে এমন একটি দেশে জন্মেছিলো যে দেশের ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের ধনী ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম।

তাই ক্যারিয়ারের একদম শুরুতেই ছেলেটি বিশ্বের নামকরা সব ক্রিকেট কোচদের সান্নিধ্য পেতে শুরু করলো। যার ফলে তার সহজাত প্রতিভা নিয়মিত ক্রিকেট কোচিং এর বদৌলতে ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলো এক অনন্য উচ্চতায়। এক সময় অভিষেক হলো দেশটির জাতীয় দলে। নতুন অভিষিক্ত সেই ছেলেটির পাশে থাকলো দেশটির ছোট বড় সব মিডিয়া। ছেলেটির ক্রিকেট প্রতিভা এতোটাই মুগ্ধ করতে লাগলো সবাইকে যে একের পর এক ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে সেই দেশটির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের তকমা লাগাতে শুরু করলো অনেকে। গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম তকমা পাওয়াতে অনেকেই ছেলেটির পূজা করতেও শুরু করলো। চারদিকে শুধুই সেই ক্রিকেটারের বন্দনা। টানটান উত্তেজনায় হুট করে ঘুম ভাঙলো রেজা সাহেবের। হুড়মুড় করে ঘুম ভেঙ্গে লাফিয়ে ওঠাতে ঘুম ভাঙলো পাশে শুয়ে থাকা সন্তান সম্ভবা স্ত্রী শিরীন রেজার। এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লেন রেজা সাহেব। মনে গেঁথে থাকলো স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নটি।

পৃথিবীতে তখন ১৯৮৭ সাল চলমান। বাংলাদেশের মাগুরা নামক জেলায় বসবাস করা রেজা সাহেব চাকরি করেন একটি ব্যাংকে। অন্যান্য দিনের মতো ব্যাংকের ব্যস্ততার মাঝেই বেড়িয়ে পড়তে হলো রেজা সাহেবকে। বাড়ি থেকে খবর এসেছে তাই রেজা সাহেব ছুটলেন বাড়ির দিকে। রেজা সাহেব খুব চিন্তিত, কারণ প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী। কিছুক্ষণ পরে শোনা গেলো একটি সদ্যজাত শিশুর চিৎকার। রেজা দম্পতির কোলজুড়ে আসলো ফুটফুটে এক শিশু। রেজা সাহেব তার নাম রাখলেন সাকিব আল হাসান। ছোট্ট শিশুটি বড় হতে লাগলো। রেজা সাহেব বিকালে ছেলের সাথে ফুটবল খেলতেন আর মনে করতেন সেই রাতে দেখা সেই স্বপ্নটির কথা।

স্কুল পেরিয়ে ফেলা ছেলেটি একটা সময় ঝুকলো ক্রিকেটের দিকে। রেজা সাহেব প্রথমদিকে অবাক হতেন কিছুটা কিন্তু প্রোক্ষণেই ভাবতেন স্বপ্ন কি আর সত্য হয়। একটা সময় সত্যি সত্যি সাকিব নামের সেই ছেলেটি যুক্ত হলো বাংলাদেশ নামক নড়বড়ে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশটির ক্রিকেটের সাথে।

২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের সাথে এক ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হলো রেজা সাহেবের ছেলে সাকিব আল হাসানের। ওই সময়টায় ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো অনেকটাই পিছনে। কালে ভদ্রে পেছনের সারির কিছু দলের সাথে হারতে হারতে জিতে গেলে উল্লসিত হতো এদেশের ক্রিকেট পাগল জনতা। ওই সময়টায় ক্রিকেট মোড়ল দেশগুলো মাঝে মাঝেও আওয়াজ তুলতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সামর্থ্য আর বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে। কিন্তু একজন তো আছেন যিনি হয়তো জন্মেছিলেন ক্রিকেট পাগল এ জাতির কঠিন সময়ের ত্রাণকর্তা হিসাবে।

আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে নিজের ক্রিকেট সামর্থ্য পৌঁছে দিতে শুরু করলেন সাকিব আল হাসান। মাঝে মাঝে ব্যাটিং বোলিং দুই পাশ থেকে একাই দলকে টেনে তুলতেন সাকিব। ফল আসতে শুরু করলো। নিজের প্রাপ্তির সাথে সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট আগাতে লাগলো সামনের দিকে। সাকিবের এই পথচলায় পাশ থেকে অবদান রাখতে শুরু করলেন তামিম, মুশফিক, মাশরাফি আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মতো ক্রিকেটাররা।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোষ্টার বয় হয়ে উঠলেন সাকিব। অন্যদিকে দলের অন্যতম ভরসাও হয়ে উঠলেন সাকিব কারণ যেদিন সাকিব বল হাতে জ্বলে উঠতে পারতেন না সেদিন হাসতো সাকিবের ব্যাট। ফলে উন্নতি হতে লাগলো অলরাউন্ডার সাকিবের। বিশ্বের অনেক নামীদামী ক্রিকেটারদের পেছনে ফেলে ধীরে ধীরে বিশ্বের অলরাউন্ডারদের তালিকার শীর্ষে উঠে আসলেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। একটা সময় তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডারের তকমা নিজের নামের সাথে জুড়ে গেলো জার্সি নাম্বার ৭৫ এর।

কিন্তু বিধি বাম। যে কোনো ইস্যুতে পশ্চাৎ দেশের খাঁজের মতো দুইভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া এ জাতি হয়তো সাকিবের মর্ম বুঝতে শিখবেনা কোনো কালেই। ক্রিকেট পাগল ভক্ত থেকে শুরু করে এ দেশের মিডিয়া কোনোটাই যেন পক্ষে থাকেনা সাকিবের। সাকিব আল হাসানই হয়তো দেশের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি দেশীয় দর্শকের কাছে বেয়াদব নামে পরিচিত। যদিও আজকের বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা কাজ নিজেকে বাজি রেখেছেন বারবার তাদের মধ্যে প্রথমেই থাকবেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এই সাকিবই বাংলাদেশকে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে শিখিয়েছেন। এই সাকিব শিখিয়েছেন কিভাবে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় এগিয়ে থাকতে হয়।

অথচ কোনো ম্যাচে একটু খারাপ করলে, কিংবা ব্যাটে বলে জ্বলে উঠতে না পারলেই শুনতে হয় সাকিবের দিন ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু যার জন্মই হয়তো হয়েছিলো দেশের ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে নিতে সেই সাকিব তো দুয়োধ্বনি শুনে দমে যাবার পাত্র নন। সাকিব বারবার ফিরে আসেন বীরদর্পে। একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গেচুরে নিজের রেকর্ডবুকে যুক্ত করেন রেকর্ডের নতুন নতুন পালক।

কোনো ম্যাচ খারাপ করলে বা টিম বাংলাদেশ হেরে গেলে হয়তো খুব মন খারাপ হয়ে যায় রেজা সাহেবের। কোনো এক মন খারাপের রাতে রেজা সাহেবের হয়তো মনে পড়ে যায় সেই স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্নের কথা। আফসোস করে হয়তো রেজা সাহেব মাঝে মাঝে ভেবে বসেন যে তার ছেলে সাকিব আল হাসান হয়তো ভুল সময়ে অথবা ভুলদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। পাশের দেশ ভারতের মাঝারি মানের কোনো অলরাউন্ডারকে নিয়ে উন্মাদনা দেখে হয়তো নিজের অজান্তেই আফসোসে ভোগেন রেজা সাহেব। ঠিক ওই সময়ে হয়তো মনে পড়ে যায় রেজুয়া সাহেবের দেখা সেই স্বপ্নটির কথা, কারণ স্বপ্নের শেষটা যেমন দেখেছিলেন সেই সময়টা আসতে হয়তো এখনো বেশ খানিকটা সময় বাকী। হয়তো এ জাতি কোনো একটা সময় বুঝতে শিখবে সাকিব আল হাসানের গুরুত্ব আর উচ্চতা। সেটি মিলে গেলে হয়তো অবাক হবেন না রেজা সাহেব। কারণ মাঝরাতে দেখা রেজা সাহেবের সেই ভিনগ্রহের ক্রিকেটারকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটি যে এখনো কাউকে জানাননি তিনি।

ওদিকে ভীনগ্রহ থেকে এ দশকে আসবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি স্পেসশিপ। টাইম মেশিমের সময়ের ডায়াল ফিক্স করার আগে বার কয়েক ভেবে নিচ্ছে ওই গ্রহের বাসিন্দারা। কারণ তাদের ধারনা ৭৫ নাম্বার কোডধারী ভীনগ্রহ থেকে পৃথিবীর বুকে আসা মানুষটির মূল্য দিতে পারেনি পৃথিবীর কোনো এক দেশের বাসিন্দারা। যাত্রা কি তবে শুরু হবে স্পেসশিপের, কে জানে হয়তো হ্যা, হয়তোবা না...

 

বিঃদ্রঃ লেখাটির অনেকটা অংশই কাল্পনিক, বিষয়টি পাঠক দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭