নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 09/09/2021
প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ কাজের চাপ, পারিবারিক জটিলতা ও পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যা ধারা প্রতিনিয়ত জর্জরিত অবস্থায় থাকে। খুব কম মানুষকে পাওয়া সম্ভব যে কিনা নিজেকে সব সময় চাঙ্গা কিংবা সুস্থ অনুভব করেন। এই সব কিছুর মাঝে প্রতিটি মানুষের নিজের শারীরিক সমস্যাকে নানা উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেও মানসিকভাবে নিজেকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারা বেশ শক্ত কাজ। তাই প্রতিদিন নানা ঝামেলার মাঝে নিজের মনকে কিছুটা প্রফুল্ল প্রদান আপনাকে নানা জটিল সমস্যা থেকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে নানাভাবে সহায়তা করতে পারবে।
মানসিক সুস্থতা আমাদের সার্বিক সুস্থতার এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। জিমে যায়, হাঁটতে বেরোই, সাঁতার কাটি বা অন্যান্য খেলাধুলা করি। ঠিক একই রকমভাবে আমরা সুস্থ মানসিকতার অধিকারী হবার চেষ্টা করতে পারি। যাকিনা আমাদের শারীরিক সক্ষমতাকে আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করবে।
আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তার ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। কারণ এটি নিয়ন্ত্রণ করা না হলে জীবনে বিভিন্ন দুঃখ-কষ্ট,ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা ও অন্যান্য মানসিক ব্যাধির উদয় হতে পারে। সুস্থ মনের অধিকারী হলে আমরা নিশ্চিন্তে যেকোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে পারব।এর ফলে আমরা দৈনন্দিন জীবনে আরও কর্মঠ হয়ে উঠতে পারব।
তার উপর আমাদের মানসিক চাপ, কাজের চাপ, সম্পর্কের চড়াই-উতরাই ইত্যাদি আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। এগুলাই হল মনের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মূল কারণ। কিন্তু জীবনে উন্নতি করতে হলে নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেননা বলা হয়, শারীরিক রোগের অনেক গুলোই হয় মানসিক রোগের কারণে। এ ছাড়া মন বিক্ষিপ্ত থাকলে কাজকর্ম সব ব্যাহত হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে আপনি আয়ত্তে থাকা অবস্থাও নিজের নাগালের বাইরে চলে যাবেন।
বেশ অনেকগুলো উপায়ে আমরা আমাদের বিক্ষিপ্ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
১. মেডিটেশনঃ মনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে মেডিটেশনের বিকল্প আর কিছু নেই। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যখন নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে আসে তখন মানসিক দৃঢ়তা, মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস, অনুপ্রেরণা সব কিছু হারিয়ে যায়। তাই এইসব কিছুতে নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য মেডিটেশনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারেনা। নিয়মিত মেডিটেশন আপনাকে আপনার কাজে আরো বেশি মনযোগী ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
২. পর্যাপ্ত ঘুমঃ সব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধানের একটি অন্যতম উপায় পর্যাপ্ত ঘুম। সারাদিন আলসেমি লাগে, শরীরে বিরক্তি কাজ করে এবং মন বিক্ষিপ্ত থাকার মূল কারণ হচ্ছে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। এর ফলে আপনি আপনার কাজে সহজেই মনযোগী হতে পারেন না। শুধু মনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেই নয় সকল ক্ষেত্রেই ঘুম একটি মারাত্মক ঔষধ। তাই চাপে থাকা অবস্থায় আপনি যদি না ঘুমান আপনার মন আরো বিক্ষিপ্ত হবে। এজন্য এ সময় অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো খুব জরুরি।
৩. মন খুলে হাসুনঃ মন ভালো রাখতে হাসির বিকল্প আর কিছুই নেই। হাসি এমন একটি জিনিশ যেটা আপনার শরীর চাঙ্গা করে তুলতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। হাসলে মন খারাপ আপনার থেকে কয়েক শত গজ দূরে পালাবে। হাসির মানসিকতা আপনাকে অনেক জটিল পরিস্থিতি থেকে উতরে যেতে সহায়তা করবে। মন ভালো রাখার জন্য আপনি হাসির অনুষ্ঠানমালা গুলো দেখতে পারেন। প্রিয় চরিত্রগুলোর মজার কাণ্ডকারখানা আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য সহায়তা করবে। এবং সব চাপ নিমিষেই কেটে আপনার মন ভালো হয়ে উঠবে।
৪. শরীরের যত্ন নিনঃ শারীরিক সুস্থতার সাথে মানসিক সুস্থতার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এর জন্য আপনি পুষ্টিকর খাবার খান। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। রোজকার খাবারের সাথে যদি ভিটামিন বি টুয়েলভ, ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার, তাহলে তা আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন গুলোকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে।
৫. প্রিয় মানুষ কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানঃ পছন্দের লোকজনের সাথে সময় কাটান। এতে নিজের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জন্মায়। বন্ধুবান্ধব পরিবার সহকর্মী এবং প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। এর ফলে আপনি সবার সাথে নিজেকে যুক্ত অনুভব করবেন।
৬. দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুনঃ আমাদের সবারই বিভিন্ন লোকজন বা পরিস্থিতির কারণে দুশ্চিন্তা হয়। এ কারণগুলোকে প্রথমে চিহ্নিত করুন। তারপর সেগুলোর উপর পুনরায় বিচার করুন। আপনি সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক সময় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আপনি সেই ব্যক্তিদের বা পরিস্থিতিতে সামলাতে পারেন না এজন্যই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শেখা জরুরী।
৭. আশাবাদী হয়ে উঠতে শিখুনঃ একজন মৃত ব্যক্তিকেও একটুকরো আশা বাঁচিয়ে রাখরে সক্ষম। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের মাঝে আশার আলোকে জ্বালিয়ে রাখুন। আশাবাদী হয়ে উঠলে এটা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর খোরাক হয়ে উঠে। আমাদের অনুপ্রেরণাকে বাঁচিয়ে রাখে। হতাশার কারনগুলোকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে নিজের পজেটিভ দিকগুলোর দিকে নিজর দিন, আশাবাদী হয়ে উঠুন। আর মনে রাখবেন জীবনে উত্থান-পতন আসবেই, আর অশান্ত হলে সামনে এগুনো যাবে না। আর এই কথাটা যদি মনকে বোঝাতে পারেন তাহলেই মন সব সমই শান্ত থাকবে।
৮. নিজের বিশ্বাসগুলো মূল্যায়নঃ প্রত্যেকের নিজের ব্যাপারে কিছু বিশ্বাস ও উন্নয়ন তৈরি হয়। এর মধ্যে থাকে নিজস্ব জীবন ও পৃথিবী সম্পর্কে সাধারণ ধারণা। কেন্দ্রীয় বিশ্বাসগুলো সময় ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। আপনার কেন্দ্রীয় বিশ্বাস নিয়ে সচেতন হন কিংবা না হন, এগুলো আপনার ধারণা, আচরণ ও আবেগের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কখনো কখনো কেন্দ্রীয় বিশ্বাস হয় ভুল ও নেতিবাচক। তাই নিজের বিশ্বাসগুলোকে মূল্যায়ন করুন। নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আপনাকে অনেক বড় থেকে বড় ঝামেলা থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
৯. ইতিবাচক উক্তি পড়ুনঃ প্রতিটি মানুষই ভালো কথা কিংবা ভালো দিক নিয়ে কথা বলতে বা চিন্তা করতে পছন্দ করে। কারো ভালো কথা শুনলে নিজের মাঝে সে বিষয়টি কাজ করতে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। তাই ইতিবাচক চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে ইতিবাচক উক্তি পড়ার বিকল্প আর কিছু নেই। মোটিভেশন ছাড়া জীবনে বেচে থাকা কঠিন। মোটিভেশন আমাদের প্রভাবিত করে, আর এটাকেই আপনাকে কাজে লাগাতে হবে। ইতিবাচক উক্তি পড়লে সেই উক্তি গুলো আমাদের চিন্তাশক্তিকে প্রভাবিত করবে। আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে ইতিবাচক চিন্তা করতে। সঠিক রাস্তা দেখাবে যেই রাস্তা ধরেই সাফল্যের করিডরে পৌঁছানো সম্ভব।
১০. সহ্য করার অনুশীলনঃ মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া মানে মনের আবেগ দেখানো যাবে না, তা নয়। এছাড়া মানসিক সামর্থ্য মানে আপনার আবেগ বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এভাবে কোন অবস্থায় কেমন আচরণ করতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারবেন। মানসিক সামর্থ্য মানে আপনার অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ। অনুভূতি যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। মানসিক সামর্থ্য মানে বিভিন্ন প্রভাবক বুঝে আপনার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। যদি আপনার উদ্বেগের কারণে নতুন কিছু করতে সমস্যা হয়, তাহলে তা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এতে অনুশীলনেও কাজ হতে পারে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭