ইনসাইড থট

কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/09/2021


Thumbnail

বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একজন ছাত্র ভালো রেজাল্ট করতে থাকে তখন ওই শিক্ষার্থীর মনে শিক্ষক হওয়ার বাসনা জাগে। গবেষণা করে কিছু আবিষ্কার করবে এরকম ভাবনাও একজন শিক্ষার্থীর মনে জাগে। সেই বাসনা না থাকলেও বন্ধুরা, বান্ধবী কিংবা শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় একজন শিক্ষক হয়। এমনকি পিতা মাতাও শিক্ষক হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। সুতরাং, কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক হয় এমন যুক্তি অন্ততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় খাটে না। তবে এখানে তদবির আছে। তদবির করে শিক্ষক হওয়া যায়। এই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না।

কিন্তু সরকারি কলেজের শিক্ষক হতে বাংলাদেশে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর মধ্যদিয়ে শিক্ষক হতে হয়।  সেখানে কোনো তদবির চলে বলে আমার জানা নেই। সেখানে বিভিন্ন ক্যাডার আছে। কেউ হয়তো শিক্ষাকে প্রথম পছন্দ দিলেও অধিকাংশ শিক্ষাকে সবচে শেষে দিয়ে থাকে। এই পছন্দর ক্রমকে যদি গুরুত্ব দেয়া হয় তবে কোথাও চান্স না পেয়ে একজন কলেজের শিক্ষক হয়ে থাকে।যিনি শিক্ষক হন তিনি বিসিএস এ কিরকম নম্বর পেয়েছেন সেটা না দেখে কি আমরা বলতে পারি কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক! একজন আমলা কিভাবে একজন শিক্ষককে কান ধরিয়েছে সেটা বোধহয় ভুলে গেছি! আমরা কি তবে আমলাদেরকে দেশের সেরা মানুষ গণ্য করছি?

বিশ্ববিদ্যালয়ে পরাজিত হয়ে একজন আমলা হয়- কথাটা অনেক অংশে সত্য।এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে আমলা হয়েছেন অনেকেই। যদি তাদের প্রশ্ন করি তবে একটি সহজ উত্তর আমরা পাই তাদের কাছ থেকে। একজন অধ্যাপক বড়োজোর গ্রেড ১ বেতন পেতে পারেন। তার ক্লাস বা রুমে ঢুকতে কোনো পাশ লাগে না। আমলা হলে ফেরি আটকিয়ে মানুষ মেরে ফেললেও কোনো শাস্তি হয় না।এমনকি কানাডার বেগম পাড়াতে বাড়িও করা যায়।

একজন শিক্ষক জীবনে একবার বিদেশী কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ৰবন্ধ পড়তে আহবান পেলেও তিনি কোনোমতে একটি ইকোনমি ক্লাসে টিকিট কিনতে হয়রান হয়ে যান।  আর আমলা হলে বিজনেস ক্লাস পর্যন্ত টিকিট পায়। এমনকি এখন একজন উপসচিব হলেই গাড়ি কেনার টাকা মাসে মাসে ৩০ হাজার টাকা তেল -ড্রাইভার পায়। এতো সুযোগ সুবিধা দেখে একজন শিক্ষক না হয়ে আমলা হয়।

প্রাথমিক বা মাধ্যমিকের শিক্ষকরা কি তবে কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক হয়েছেন? যদি হয়েও থাকেন তবে কি আমরা এভাবে বলতে পারি কি ? আমরা তো জানি সংসদে ৩০০ সিট আছে। আমরা জানি ১০০০ আমলার পদ আছে। সুতরাং, কেউ চান্স পাবে আর কেউ পাবে না।

কিন্তু শিক্ষক হয়ে তারা শিক্ষকই হতে চান। অন্তত আমার পরিবার ও আমার শিক্ষকদেরকে আমি জানি। তারা শিক্ষক হয়েছেন এবং শিক্ষকতা করেছেন এবং করছেন শিক্ষকতা পেশার সন্মান বিবেচনা করে। এভাবে শিক্ষকদেরকে তবে কেন দূরে ঠেলে দেয়া? কোনো কোনো শিক্ষকের আচরণে হয়তো আমি কষ্ট পেতে পারি -কিন্তু তাই বলে সকলকে এভাবে?

আমার শিক্ষকদেরকে দায়ী করছি এজন্য যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে নেই। আমরা সকলেই জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো উপাচার্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট মেম্বার সরকার দিয়ে থাকে।আর সেই নিয়োগ কিভাবে পেতে হয় তা ও সকলে জানে। রাজনীতি সেখানে প্রধান পরিচয় হয়ে উঠে। ওই রকম বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাংকিংয়ে নিতে হলে হাত কানে দিয়ে নামাজের যেমন নিয়ত করতে হয় তেমনি করতে হবে যা বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে কি?

এই লেখা যখন লিখছি তখন এমন একজনের একটি ফোন পেলাম যে কিছু তথ্য চেয়ে ফোন করল। সে সেগুলো চায় তার ছাত্রদেরকে দিতে। সে যখন বিসিএস এ আবেদন করেছিল তখন জীবনের সবশেষ বিসিএসে সবশেষে শিক্ষা ক্যাডার দিয়েছিলো। সে কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক হয়ে তিনি বদলে গেছেন।যে তথ্য তিনি আমাকে দিতে বলেছেন তা না দিয়েই শিক্ষকতা তিনি করতে পারেন।

সুতরাং শিক্ষকদেরকে যদি শিক্ষায় নিয়োজিত করতে হয় তবে মেধাবীদেরকে শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। মুখে মুখে শিক্ষকদেরকে সন্মান করি বললেই হবে না। তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে চলবার সুযোগও দিতে হবে। বিগত পে কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব ফরাসউদ্দিন শিক্ষকদের সর্বোচ স্কেল দেয়া নিয়ে বলেছিলেন ব্রিটিশ আমলেও আমলাদের বেতন শিক্ষকদের উপরে ছিল।সেরা আমলা বটে! নিজের বৌ সুন্দর চাই, নিজের সন্তান মেধাবী চাই এবং সেখানে আমাদের সর্বোচ ব্যয় বরাদ্দ রাখি। এমনকি প্রাইভেট শিক্ষক রাখি ভালো ছাত্রটিকে।

দেশে এখন ঘি আর তেলের মূল্য সমান। সেখানে কি আশা করা যায় ? যতদিন আমরা আমলাদেরকে তোষামোদ করবো -মানে সৈয়দ মুজতবা আলীর স্কুল ইন্সপেক্টর যেখানে( সাহেবের তিন পায়া কুকুর সম্পর্কিত  ঘটনা) সালাম পাবে সেখানে শিক্ষক ভালো কিছু দিতে ব্যর্থ হবে। আমাদের সমাজে মেয়েকে  দেয়া হয় মুরগির পাখনা আর বাবাকে দেয়া হয় রান।এই বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় র্যাংকিং একটি স্বপ্ন যাকে কোনোদিন ছোয়া যাবে না।

শিক্ষকরা জাতির মেরুদন্ড নির্মাণে অগ্রপথিক।তাদের সন্মান ক্ষুন্ন করে কি পাওয়া যাবে আমি জানিনা।  তবে জাতি আরও পিছিয়ে পড়বে অনুমান করা যায়।শিক্ষকদেরকে কষ্ট দিয়ে জীবনে কেউ কি সুখী হতে পেরেছেন? মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা কি কোথাও চান্স না পেয়ে শিক্ষক হয়েছেন ? দয়া করে এভাবে শিক্ষকদেরকে কষ্ট না দেয়ার অনুরোধ করতে পারি কি?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭