ইনসাইড থট

বেগম জিয়ার ইতিহাস চর্চা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/11/2017


Thumbnail

বেগম জিয়া ইতিহাস মনস্ক নন। বরং তাঁর অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘অতীত আশ্রয়ী না হয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’বক্তৃতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে এই তিনটি বক্তৃতাই বেগম জিয়ার নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণ। ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ এর নির্বাচন উপলক্ষে বেতার টিভির ভাষণেই তিনি অতীত থেকে মুখ ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার আদালতে চতুর্থ দিনের আত্মপক্ষ সমর্থনে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখা গেল অতীত হাতড়াতে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহ ইতিহাসে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ‘অন্যায়’ মামলার উদাহরণ এনেছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বেগম জিয়া মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অলি আহাদের নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তিনি কাজী নজরুল ইসলামের নামও উচ্চারণ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার এই ইতিহাস মনস্কতার জন্য ধন্যবাদ। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় তিনমাস লণ্ডনে তাঁর পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে থেকে এসেছেন। প্রবাস জীবনে তারেক জিয়া ‘নব্য ইতিহাসবিদ’খেতাব পেয়েছেন। আধা পাঠ করেই তিনি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং অযাচিত বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর এই ইতিহাস চর্চার ধরণ থেকে অর্ধ শিক্ষিতের বিপদ আরেকবার মনে পড়েছে গোটা জাতির। পুত্রের সান্নিধ্যেই বেগম জিয়া সম্ভবত ইতিহাস চর্চার অভ্যেস করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো পুত্রের মতোই বেগম জিয়া বিকৃত এবং অসস্পূর্ণ ইতিহাস জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন।

খুশি হতাম যদি বেগম জিয়া অন্য বিচারগুলোর উদাহরণের সঙ্গে কর্নেল তাহের হত্যার বিচার প্রসঙ্গ আনতেন। তার প্রয়াত স্বামীর নেতৃত্বে ওই বিচার ছিল ইতিহাসের বড় তামাশা। বেগম জিয়া কি বলবেন, কর্নেল তাহেরের বিচার কি যথার্থ ছিল?

খালেদা জিয়া যদি, জিয়ার শাসনামলে দেড় হাজার সেনা অফিসারের প্রহসনের বিচার এবং তাঁদের হত্যার প্রসঙ্গ আনতেন, তাহলে আমরা আশ্বস্থ হতাম।
বিএনপি চেয়ারপারসন যদি বলতেন, ওই সব রায় ইতিহাসের ‘প্রহসন’না ট্রাজেডি তাহলে খুশি হতাম।

বেগম জিয়াও দুবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্লেট চুরির মামলা দিয়েছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যার মামলা ধামাচাপা দিতে জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছেলেন। দুই দফায় ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও তিনি ৭৫ এর ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচারের কোনো ব্যবস্থা করেননি বরং তাঁদের পদোন্নতি দিয়েছেন। ৭৫ এর খুনিদের তিনি পবিত্র জাতীয় সংসদে বসিয়েছেন। বেগম জিয়া তাঁর ক্ষমতাকালীন সময়ে যুদ্ধারাধীদের কোনো বিচার করেননি বরং এই বিচারের দাবি উচ্চারণ করায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামাসহ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা দায়ের করেছিলেন। বেগম জিয়া ক্ষমতায় থেকে সিনেমা হলের অগ্নিসংযোগের মামলায় শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনদের গ্রেপ্তার করে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিলেন। আজ আদালতে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়া বলেছেন ‘প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম, সহিষ্ণুতা সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা আমি বার বার করেছি।’ আহারে, যখন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়াকে হত্যা করা হলো তখন কোথায় ছিল আপনার সংযম?
আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে হত্যা করে কি আপনি সহিষ্ণুতার রাজনীতির সূচনা করতে চেয়েছিলেন? ‘প্রতিহিংসা’ তো আমরা দেখেছি ২০০১ এর ১ অক্টোবর থেকে। নির্বাচনে জয়ের পর। আপনি যেভাবে সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপরে লেলিয়ে দিয়েছিলেন আপনার ক্যাডারদের। আপনি কি ভুলে গেছেন, সেই বিভীষিকা, সেই হত্যা, সেই পৈশাচিকতা?

বেগম জিয়া বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কি চমৎকার! আপনার ২০০১-২০০৬ সালের জঙ্গি সন্ত্রাস শাসনের পরও যে আপনি রাজনীতি করতে পারছেন, তা শেখ হাসিনার ঔদার্য।

আপনার পুত্রের ২১ আগস্টের চরম প্রতিহিংসামূলক গ্রেনেড হামলার পরও আপনি যে লম্বা সাফাই গাইছেন- তা শেখ হাসিনার বদান্যতায়।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে আপনি যে বিভিন্ন আঁতাত করেছিলেন, তা সত্ত্বেও এখনো আপনি জাতিকে জ্ঞান দেন, তা শেখ হাসিনার উদারতা।

কে কাকে ক্ষমা করল?

ইতিহাসকে বিএনপি মাঝে মধ্যেই তামাশা বানায়। হঠাৎ করে ইতিহাস বানিয়ে তা প্রচারও করে। যেমন জিয়াকে ঘোষক বানানো, পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা। এখনো বেগম জিয়া তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনে সেই একই ধারাই রাখছেন। সম্মানিত বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে বিনীত নিবেদন, ইতিহাস চর্চার আগে একবার আয়নায় নিজের মুখ দেখুন। একাকী। দেখবেন আপনি কে?

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭