ইনসাইড টক

‘মেঘ দেখেই ভয় পেলে চলবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/09/2021


Thumbnail

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সত্যি কথা বলতে রাষ্ট্রের বা সরকারের অধিকার আছে নাগরিক হিসাবে আমাদের যে কারও এসেট বা সম্পদের হিসাব তলব করতেই পারে। কিন্তু এই বিষয়টি আমাদের অনেকের মনে একটি প্রশ্নের উদ্ভব ঘটিয়েছে। গণমাধ্যমে যেসব শিরোনাম তৈরি করা হয়েছে, সেখানে শীর্ষ সাংবাদিক বা নেতাদের ব্যাঙ্ক হিসাব এমন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। যাতে শিরোনামটা পড়েই পাঠকদের মনে একটি নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম হয়। তারা মনে করছে এটা বোধহয় একটা দল বা গ্রুপকে ধরে সংবাদটি তৈরি করা হয়েছে। যদি পরেরদিন বা পরবর্তীতে এমন সংবাদ শিরোনাম দেখতাম যে কোনো শীর্ষ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব বা যেসব উপাচার্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন, তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তাহলে বিষয়টি কিন্তু এমন নেতিবাচক হবার কথা ছিল না।

আলোচিত ১১ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করার প্রসঙ্গে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। পাঠকদের জন্য ড. শেখ আবদুস সালাম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক আহনাফ তাহমিদ

উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিরোনামে “তলব” শব্দটি ঠিক আছে, কিন্তু আমি যদি সংবাদটি করতাম, তাহলে শিরোনামটি করতাম “চাওয়া হয়েছে”। তলব করা কিংবা চাওয়া- অর্থ এক হলেও বোধ আলাদা তৈরি করে। আমার মনে হয়, যারা এভাবে সংবাদ শিরোনাম তৈরি করে, তা সাংবাদিকদের ওপর বা এই পেশার ওপর একধরণের চাপ তৈরি করে। আমি জানি না এর উদ্দেশ্য কী বা ভেতরের অন্তর্নিহিত অর্থ কী রয়েছে, তবে আমি মনে করি সাংবাদিক পেশায় যারা আছেন, এমন খবর তাদের প্রতি একধরণের চাপ তৈরি করে এবং এটি এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গল।

এই ধরণের চটকদার সংবাদ তৈরি করে যারা সাংবাদিক পেশাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে এই পেশায় আসা হুমকিস্বরুপ হতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সব পেশারই উত্থান পতন আছে। তবে সাংবাদিকতা পেশায় এই ধরণের ঝুঁকি এবং চাপ বেশি থাকবে। যারা এই পেশায় আসতে চান, তাদেরকে এই ঝুঁকি মেনে নিয়েই কাজটি করে যেতে হবে নিরলসভাবে। তারা মেঘ দেখেই ভয় পেয়ে যাবে, এটি আমি বিশ্বাস করি না। এই ঝুঁকি গ্রহণ করে সাংবাদিকতায় পেশায় আসবার ইচ্ছা যার আছে, সে-ই সাংবাদিকতা পেশা কিংবা যে কোনো পেশায় আসুক বলে আমি মনে করি। তবে এই পেশায় যে একধরণের চাপ তৈরি হয়, এর সাথে আমি একমত।

কোনো নির্দিষ্ট আইনের আওতায় না এনে এই সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব চাওয়ার কারণ কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়ত সরকারের কাছে এমন কোনো তথ্য আছে, যা সম্পর্কে আমরা এখনও ওয়াকিবহাল নই। নাগরিক হিসেবে সরকার ব্যাংক হিসাব তলব করতেই পারে। এখন ফোকাস পড়েছে সাংবাদিকদের ওপর। এটি সরকারের তরফ থেকে করা হয়েছে নাকি সাংবাদিকরা নিজেরাই ব্রতী হয়ে করেছে, এই সম্পর্কে আমি অবগত নই। একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে ব্যাপারটি বোঝাই। কিছুদিন আগেও আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি হচ্ছিল, তখন একটি খবর হলো, যার শিরোনাম- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বোনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এখানে বোনের সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সংযোগ ঘটাবার কী দরকার ছিল? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বোন ছিলেন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সংবাদ শিরোনামটি এমন হতে পারতো যে অমুক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সাংবাদিকরাও অনেক সময় এমনভাবে টিল্ট করে সংবাদ পরিবেশন করে, যাতে একজনের দোষ আরেকজনের কাঁধে গিয়ে চাপে।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করবেন, যাতে তা মানুষের কাছে বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে পৌঁছোয়। এখানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) ফরিদা ইয়াসমিনের নাম উঠে এসেছে। তাহলে সংবাদে তার নামটাই আসুক শিরোনামে। কিন্তু সাংবাদিকরা এমনভাবে সংবাদটি পরিবেশন করেন যেন পুরো পেশাটির ওপরই মানুষের আঙুল ওঠে। মানুষ বোঝে যেন কেবল সাংবাদিকরাই এমন ব্যাংকের সাথে আর্থিক কর্মকাণ্ড বা বেআইনি কিছুর সাথে জড়িত।

নতুন প্রজন্মের যারা সাংবাদিকতায় আসতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে  উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, পেশার প্রতি তাদের কমিটমেন্ট থাকতে হবে। যেমন ধরুন আমি শিক্ষকতা পেশায় আছি। এখন সরকার যদি আমার ব্যাংক হিসাব চায় বা কোনো চাপ সৃষ্টি করে, আমার ভেতরে কমিটমেন্ট থাকতে হবে যে এই চাপটি মেনেই আমি ওই পেশায় যাবো। সাংবাদিকতায় আসতে হলে এই কথাটি আরও বেশি মাথায় থাকতে হবে। আর এই ধরণের চটকদার শিরোনাম তৈরির কাজ যারা করেন, তাদের সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

প্রকাশিত ১১ জন সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব চাওয়ায় যে খবর করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সংবাদ তৈরি করেছেন তো একজন সাংবাদিকই। এখানে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের একটি পরিচয় আছে। এই পরিচয়টিকে সামনে না এনে খবরের ভেতরে রেখেও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা যেতো। এখন জনমনে যে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, সে প্রশ্নগুলো সহজেই তবে এড়ানো যেতো। সরকার তো আর তার পক্ষ থেকে সংবাদ শিরোনাম ঠিক করে দেয় না। তাই শিরোনাম কী হবে, ভেতরের খবর কী হবে, এটিও সাংবাদিকদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সাংবাদিকরা নিজেরাও পেশাগত দিক থেকে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটিয়েছেন বলে আমি মনে করি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭