ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

টিকা রাজনীতি ও পুঁজিবাদী সমাজে তৃতীয় বিশ্বের অসহায়ত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2021


Thumbnail

সারাবিশ্ব এখন করোনা ভাইরাসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। মানিয়ে নিয়েছে বলাটা আসলে ভুল হবে, বরং বলা যায় মানিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। করোনা মহামারির মরণকামড় যখন সারাবিশ্বে ফেনিল বর্ণে বিষময় করতে শুরু করলো, দুনিয়ার তাবত শক্তিধর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো গড়ে তুলল তাদের নিজস্ব টিকা তৈরির কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দেশ, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও টিকা তৈরি করতে শুরু করেছে। ইরান, তুরস্কের মতো দেশগুলোও তাদের দেশের জনগণের জন্য তৈরি করা শুরু করেছে টিকা। এদিকে বিশ্বের তাবত ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একধরণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। সকল দেশগুলোই চাইছে তাদের তৈরি টিকা যেন অন্যদেশে রপ্তানি করে একটা একচেটিয়া বাজার তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে চীনও এগিয়ে গিয়েছে অনেকদূর। সিনোফার্মের তৈরি টিকাগুলো তারা এশিয়া ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে সে দেশগুলোতে একধরণের নীরব আধিপত্যবাদ বিস্তার করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের যে দ্বন্দ্ব, সেটি করোনা মহামারির সময়েও যেন আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে।

তবে এই সময়গুলো লক্ষ্য করলে টিকা রাজনীতিতে পুঁজিবাদী সমাজে তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর সেটি যেন চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়া হয়। অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যারা এখনও তাদের জনগণকে প্রথম ডোজের টিকা দিয়েই শেষ করতে পারেনি, দ্বিতীয় ডোজ দেয়া তো দূরের কথা। টিকা দেয়ার জন্য তারা নির্ভর করে আছে ধনী বিশ্বের দেশগুলোর দিকে। তারা যদি টিকাপ্রদান করে, তাহলে গরীব বিশ্বের দেশগুলো তাদের জনগণকে দেয়ার জন্য টিকা পাবে, নইলে পাবে না। ধনী দেশগুলো এখন যেখানে তাদের জনগণকে বুস্টার ডোজের টিকা দেয়ার ভাবছে, সেখানে তৃতীয় অনুন্নত বিশ্বের দেশগুলো উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে কেবল প্রথম ডোজের টিকার জন্যই।

আবার এমন অনেক দেশ আছে, যাদের হাতে টাকা আছে, কিন্তু টিকা সময়মতো পাচ্ছে না। এদের সারির সাথে দাঁড়াতে গেলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বরং দিনকে দিন আরও পিছিয়ে যাবে। মহামারী হোক কিংবা অন্যকিছু, আসলে ধনী দেশগুলো সবসময়েই বিশ্বে একটি একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে, ২০২৩ সালের আগে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে করোনা টিকা পৌঁছানো সম্ভব নয়। বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে দুই ডোজ শেষ করে বুস্টার ডোজের জন্য অপেক্ষকা করছে, সেখানে আফ্রিকার গরীব দেশগুলোকে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে টিকার জন্য। এমনকি অনেক দেশ আছে, যারা প্রথম ডোজের টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা আর দিতে পারছে না। জাতিসংঘ এসব দেশগুলোর জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে করোনা টিকার জন্য বারংবার তাগাদা দিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

বর্তমান বিশ্বে যত জনসংখ্যা রয়েছে, তাদের ৭০ শতাংশকে সম্পূর্ণভাবে টিকা দিতে মোট ১১ বিলিয়ন ডোজ করোনার টিকা লাগবে। জুলাইয়ের ৪ তারিখ পর্যন্ত ৩.২ বিলিয়ন ডোজ পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যে হারে টিকা দেয়া হচ্ছে, এই হারে যদি টিকা দেয়া হয়, তাহলে সংখ্যাটা বছরের শেষে গিয়ে ৬ বিলিয়নে দাঁড়াতে পারে।

শঙ্কার কথাটা হচ্ছে, যারা অধিক আয় করেন এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই টিকা দেয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা কম আয় করেন, তাদের মাত্র ১ শতাংশ জনগণের টিকাকার্য সম্পন্ন হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকেই বলা যায় যে আয়ব্যয়ের এই তুলনামূলক চিত্রটি দেখলেই বলা যায় বর্তমানে বিশ্ব টিকা কার্যক্রম কোন পর্যায়ে আছে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কতটা অসহায় পুঁজিবাদের পকেটের দৌরাত্ম্যে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭