ইনসাইড পলিটিক্স

নূর কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2021


Thumbnail

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর এখন রাজনীতিতে সরব। প্রায় প্রতিদিনই তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন এমন ঘোষণাও দিচ্ছেন। সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এক ধরনের বিরোধী দলের ভাবমূর্তি তৈরি করছেন নূর। আর সাবেক ডাকসু ভিপি হওয়ার কারণে এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা হওয়ার কারণে ছাত্র সমাজের মধ্যে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বিএনপি এবং অনেক বিরোধী দল নূরের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। নূর আসলে কার সেটি নিয়েও বিএনপির মধ্যে অনেক ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণেই নূরের আন্দোলন বা নূরের সঙ্গে সহযাত্রী হওয়ার ব্যাপারে বিএনপি সংযত এবং নিমরাজি। অনেক ক্ষেত্রেই বিএনপি নূরের সব বক্তব্যকেই সমর্থন করে না। নূর আসলে কার লোক, এ নিয়ে বিএনপির মাঝে যেমন প্রশ্ন রয়েছে তেমনি আওয়ামী লীগের মাঝেও প্রশ্ন রয়েছে।

আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা মনে করেন, নূর আসলে জামায়াতের প্রোডাক্ট। জামায়াতের মাধ্যমেই নূর তৈরি হয়েছে এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জামায়াতের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ছাত্র অধিকার পরিষদ বিভিন্ন সময় যে আন্দোলন, সংগ্রামগুলো করেছে তার মধ্যে জামায়াতের প্রছন্ন প্রভাব রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। আবার কেউ কেউ  মনে করেন যে, নূরের সঙ্গে বিএনপির একটি গোপন যোগাযোগ রয়েছে। যেহেতু ছাত্রদলের অবস্থা একেবারে নিষ্ক্রিয় এবং কোন কর্মকাণ্ড নেই সেজন্য নূরকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, কৌটা বিরোধী আন্দোলনের সময় নূরের সঙ্গে বিএনপির একটি যোগাযোগ ছিল। তাই প্রকাশ্যে নূরের একটি স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকলেও অনেকে মনে করেন নূরের সঙ্গে বিএনপির একটি গোপন যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে যেহেতু নূরদের একটি প্রভাব বলয় রয়েছে যেটি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তৈরি হয়েছিল সেই প্রভাব বলয়কে কাজে লাগিয়ে নূর যেকোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

ইতিমধ্যে নূর এ ধরনের হুমকিও দিয়েছে। ক্যাম্পাস খুললে আন্দোলন করা হবে এ ধরনের কথাবার্তাও বলেছেন। নূরের এ ধরনের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত বলেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে, এজন্য তিনি ছাত্রলীগকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু বিএনপির অনেক নেতাই নূরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন যে, যখন নূর ডাকসুর ভিপি হলো তখন থেকেই নূরকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহের দানা বেঁধে উঠেছে। বিএনপির নেতাদের মতে, ডাকসুর নির্বাচন ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত। সরকার না চাইলে নূর ডাকসুর ভিপি হতে পারে এটা অসম্ভব, অবাস্তব। সরকার একটি পরিকল্পিত নীল নকশার অংশ হিসেবেই নূরকে সৃষ্টি করেছে। নূর অনেকটা ড. কামাল হোসেনের মতো যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে সরকারবিরোধী একটি আবহ নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে এনেছিলেন। একই রকমভাবে নূরকে আওয়ামী লীগই তৈরি করছে বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। তারা বলেন যে, ডাকসুর ভিপি হওয়ার পর যখন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডাকসু নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গেলো তখন নূর সেখানে গিয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত, প্রশংসাসূচক এবং আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছিলেন।

নূর যতই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলুক না কেনো আসলে নূরের শেষ গন্তব্য আওয়ামী লীগই। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোকে ধাঁধায় ফেলার জন্য এ রকম অনেক ব্যক্তিকে রেখেছেন যারা বাস্তবে সরকারের সমালোচনা করে এবং সময় সুযোগ পেলে সরকারের উপকার করবে, বিরোধী দলের আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করবে। একই সঙ্গে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, এত কিছুর পরও নূরকে গ্রেফতার করা হয় না। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যেন নূরের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। বিএনপির নেতারা বলছেন, ভবিষ্যতে অবাক হবো না যদি নূরকে দেখি আমরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে। কাজেই, নূর কার এ নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মাঝেই ধোঁয়াশাচ্ছন প্রশ্ন রয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭