ইনসাইড আর্টিকেল

বারমুডার মতোই আরেক অমীমাংসিত ওয়ালেস কেস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/09/2021


Thumbnail

পৃথিবীর অনেক কিছুই আমাদের জানার বাকি আছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য কি, এরিয়া ফিফটি ওয়ানের ভেতর আমেরিকানরা কি রহস্য লুকিয়ে রেখেছে, পিরামিড তৈরিতে আসলেই ভীনগ্রহবাসীদের হাত ছিল কিনা- এমন নানা ধরণের প্রশ্নবাণে আমাদের মন জর্জরিত হত থাকে। তবে এদের মাঝেও রয়েছে এমন কিছু রহস্য যা আমাদের এখনো আন্দোলিত করে থাকে। কি হয়েছিল, কিভাবে ঘটেছিল, আসলেই কি এমন হয়- এমন সব প্রশ্নের উত্তর আমরাও খুঁজতে থাকি।
আসুন তাহলে আজ এমনই এক ঘটনা সম্পর্কে জানা যাকঃ

 দ্য ওয়ালেস কেসঃ
অপরাধ বিজ্ঞান ও রহস্য নিয়ে জারা কাজ করেন, তাদের কাছে জুলিয়া ওয়ালেস নামক এই গৃহবধূর হত্যারহস্য আকৃষ্ট করে এসেছে অনেকদিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত কোন ধরণের মীমাংসাতেই তারা যেতে পারেন নি। এমনকি জুলিয়াকে নিয়ে লেখা হয়েছে বিস্তর বই এবং ফিকশন। রিসার্চেরও কোন কমতি হয় নি তাকে নিয়ে।
ঘটনাটি ঘটে ১৯৩১ সালে, যুক্তরাজ্যের লিভারপুল শহরে। লিভারপুলের একটি দাবা ক্লাবে জুলিয়ার স্বামী মিস্টার ওয়ালেস একটি চিঠি পান হঠাৎ করেই। সময়টা ছিল জানুয়ারীর ৩১ তারিখ। চিঠিতে তাকে বলা হয়েছিল একটি ঠিকানায় যেতে। সেখানে “মিস্টার কুয়ালট্রাফ” নামক এক ব্যক্তির সাথে তাকে দেখা করতে হবে। ঠিকানাটি হচ্ছে “মেনলাভ গার্ডেন্স ইস্ট” (Menlove Gardens East).
পেশায় একজন ইনস্যুরেন্স সেলসম্যান হবার কারণে ওয়ালেস ভাবেন তাকে হয়ত চাকরি সম্পর্কিত কোন কারণেই এই ঠিকানায় যেতে বলা হচ্ছে। তিনি সেখানে যান এবং গিয়ে দেখেন তাকে ঠিকানায় যে রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে, এমন কোন রাস্তার অস্তিত্বই নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ওয়ালেস বাড়ি ফেরার পর তিনি দেখতে পান তার স্ত্রী জুলিয়া রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পরে আছেন। কেউ একজন তাকে হত্যা করে গিয়েছে।

উইলিয়াম ওয়ালেসকে স্ত্রী হত্যাকারী সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রায়ালে তাকে নেয়া হয় এবং সেখানে তাকে দোষী সাব্যস্তও করা হয়। একটি আপিলের কারণে ওয়ালেসকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রদ করা হয় কারণ, ফাঁসীতে ঝোলাবার মত যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ পুলিশের কাছে ছিল না। কেউ কেউ বলেন, আগাথা ক্রিস্টির কোন গল্প থেকে ওয়ালেস চমৎকার একটি অ্যালিবাই সাজিয়ে তার স্ত্রীকে খুন করেছেন।

আবার কেউ কেউ তাদের বলা থিওরীতে বলেছেন ওয়ালেসের গর্ডন প্যারি একটি প্র্যাংক কল করে ওয়ালেসকে দূর করে দিয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য। বাড়ি থেকে দূরে যাবার কারণে প্যারির জন্য ওয়ালেসের স্ত্রীকে হত্যা করা বেশ সহজ কাজ হয়ে যায়। প্যারি ওয়ালেস পত্নীর কাছে কিছু টাকা পেতেন বিধায় হত্যা করে তিনি তার প্রতিশোধ নিয়েছেন বলে অনেকের বিশ্বাস।

তবে পুলিশের ভাষ্যমতে, গর্ডন প্যারির চাইতে স্বামী ওয়ালেসের হত্যা করবার কারণ আরো যুক্তিযুক্ত ছিল।
২০১৩ সালে ব্রিটিশ ক্রাইম রাইটার পি ডি জেমস দ্য সানডে টাইমস-কে তার একটি লেখায় বলেছেন,
“আমি বিশ্বাস করি, জুলিয়াকে তার স্বামীই হত্যা করেছে। সেদিন রাতে মেনলাভ গার্ডেন্স ইস্টে যাবার যে ফোনকলটি ওয়ালেসের কাছে এসেছিল, সেটি নিছক একটি কাকতালীয় ঘটনা।”

তবে কিছু প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়-
১) যদি প্র্যাংক টেলিফোনটি ওয়ালেস নিজেই অ্যালিবাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে থাকে, তাহলে গর্ডন প্যারির ভূমিকা কি?

২) আরেকটি থিওরীতে বলা হয়েছে, গর্ডন প্যারিকে দিয়ে অ্যালিবাই তৈরি করেছিল উইলিয়াম ওয়ালেস। অফিসের কেরানি জোসেফ মার্সডন খুন করেছিল জুলিয়াকে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সকল ঘটনা আবর্তিত হচ্ছে উইলিয়াম ওয়ালেসকে ঘিরে। জুলিয়া ওয়ালেসের খুন হবার মত কিছু ঘটে নি। তাহলে জুলিয়াকে খুন করার প্রধান কারণ কি ছিল?

৩) প্যারি পুলিশকে দেয়া বয়ানে বলে ঘটনার সময় সে ছিল তার বান্ধবীর বাসায়। আবার তার বান্ধবী পুলিশকে সাক্ষ্য দেয়, প্যারি যে সময়ের কথা বলছে ঐ সময় সে তার পিয়ানো ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। প্রায় তিন ঘন্টার গড়মিল রয়েছে দুজনের ভাষ্যে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় এই হত্যাকান্ডে গর্ডন প্যারিরও প্রত্যক্ষ হাত ছিল?

৪) সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্যারির বাড়ির কাজের লোক দেখেছিল তার গ্যারাজে রক্তমাখা একজোড়া দস্তানা। তবে? কি হয়েছিল হতভাগী জুলিয়ার ভাগ্যে?

জুলিয়া ওয়ালেস খুন হয়েছিলেন। এটাই সত্য, এটাই ইতিহাস। তবে কেন খুন হয়েছিলেন, কার হাতে হয়েছিলেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজো মেলে নি। মেলে নি বলেই হয়ত এখনো গবেষণা হয় জুলিয়া ওয়ালেসের হত্যাকান্ড নিয়ে, চলতে থাকে নানা আড্ডা আলোচনা তর্ক বিতর্ক। আশা করা যায়, একদিন জুলিয়া ওয়ালেসের মৃত্যুর প্রধান কারণ মানুষের সামনে আসবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭