ইনসাইড পলিটিক্স

জাফরুল্লাহকে নিয়ে বিভক্ত বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2021


Thumbnail

জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এক সময় বিএনপির একমাত্র শুভাকাঙ্খী হিসেবে বিবেচিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেন এখন বিএনপিতে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেই পরিচিতি পাচ্ছেন। তাকে নিয়ে বিএনপি এক দিকে বিব্রত। অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন যে তার সমালোচনা করার আগে বিএনপির অনেক কিছু ভাবা উচিত। 

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির কোনো নেতা নন। তিনি গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি। বিএনপিপন্থী একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। বিএনপির সংকটের সময়ে তিনি বিএনপির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোচনায় এসেছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পেছনেও ভূমিকা ছিল  তার। তিনি ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতাও বটে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার ইস্যুতে তাকে নিয়ে বিএনপিতে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর এই বিতর্কের শেষ ধাপে আজ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এরশাদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

রুহুল কবির রিজভীর এই বক্তব্যের পর বিএনপিতে ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা এ ধরণের অশোভন, দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করার জন্য রিজভীকে মৌখিকভাবে বলেছেন। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, রুহুল কবির রিজভীর এই বক্তব্যের পর পরই বিএনপির অন্তত দুই জন নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে এ ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন, অশোভন ‍উক্তি না করার জন্য রিজভীকে বলেছেন। 

এর আগেও জাফরুল্লাহ চৌধুরী তারেক জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সময় এক অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ‍উপস্থিত থাকলে তাকে তিরষ্কার করেন ছাত্রদলের নেতারা। পরে বিষয়টি লন্ডন পর্যন্ত গড়ায় এবং তারেকের নির্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চায় ছাত্রদলের নেতারা। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, জাফরুল্লাহকে নিয়ে তারেক জিয়া অত্যন্ত বিরক্ত। তার একের পর এক বক্তব্যে বিএনপিও বিব্রত এবং বিরক্ত। তারেক জিয়ার নির্দেশেই রুহুল কবির রিজভী এ ধরণের মন্তব্য করেছেন বলে অনেকে মনে করেন।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, লন্ডন থেকে তারেক জিয়া জাফরুল্লার সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছেন। তাকে এই সময়ে বিএনপির সমালোচনা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু জাফরুল্লাহ এটি শোনেননি। এর ফলে বিএনপির নেতারা অত্যন্ত বিরক্ত এবং বিব্রত বলে জানা গেছে। এ জন্যই তারা জাফরুল্লাহর সম্বন্ধে এ ধরণের কথা বলছেন।

তবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তিনি বিবেক বন্ধক দেননি। তার কাছে যেটি সত্য মনে হয়, সেটি তিনি বলবেন। কারো কাছে দায়বদ্ধ থেকে তিনি রাজনীতি করেন না। 

ফলে জাফরুল্লাহর এই ইস্যুটি এখন বিএনপির একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ, বিএনপি যদি এই মূহুর্তে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে চায় তাহলে তাদের সব বিতর্কের উর্ধ্বে থাকতে হবে। অন্য দিকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে যদি তারা সমালোচনায় ব্যস্ত থাকে তাহলে পরে সেই ব্যস্ততা আসলে বিএনপিকেই ক্ষতি করবে। কাজেই জাফরুল্লাহর বিষয়ে নিয়ে একটি উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি। এই ইস্যুতে যদি বিএনপি নীরব থাকে সেটিও তাদের জন্য ক্ষতিকর। আর এই ইস্যু নিয়ে ‍যদি তারা জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন, সেটিও বিএনপির জন্য বিব্রতকর হবে। জাফরুল্লাহ ইস্যু নিয়ে এই উভয় সংকট থেকে বাঁচার উপায় কী, এটি বিএনপির নেতারা এখনো ‍রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেননি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭