ইনসাইড টক

এখন একা কাজ করে তৃপ্তি পাই না: মিশা সওদাগর


প্রকাশ: 23/09/2021


Thumbnail

নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হন। সাধারণত খল অভিনেতাদের বাঁকা চোখে দেখা হলেও তার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বর্তমানে তিনি ঢালিউডের প্রথম সারির খল অভিনেতা। বলা হচ্ছে মিশা সওদাগরের কথা।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বড় পর্দায় দর্শক মাতাচ্ছেন মিশা সওদাগর। এখন পর্যন্ত সাতশ’রও বেশি সিনেমায় অভিনয় করে রেকর্ড গড়েছেন শক্তিমান এই অভিনেতা। সদ্য আমেরিকা গিয়েও নতুন সিনেমার জন্য ফিরতে হয়েছে তাকে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) অংশ নিয়েছেন তপু খান পরিচালিত শাকিব-বুবলী অভিনীত ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার শুটিংয়ে। শুটিংয়ের ফাঁকে সিনেমা ও সমসাময়িক নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের  সাথে কথা বলেছেন তিনি। 

বাংলা ইনসাইডার : চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন আপনাদের বয়কট মিমাংসা করেছে এবং সব সংগঠন মিলিয়ে একটি ফেডারেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই।

মিশা সওদাগর :  একটি ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে, এটা খুবই ভালো। তবে আমি কিন্তু নিয়মিত কাজ করে গেছি। কেউ তো আমার কাজে বাধা প্রয়োগ করেনি। গত বছর দেশে ফিরেই নতুন পাঁচটি সিনেমায় কাজ করি। যারা বয়কট করেছেন তারাই ছিলেন অবৈধ কমিটি। অবৈধ কমিটির কোনো কিছুই বৈধ হবে না। এখন তারা নিজেরাই সংগঠনে নেই, অস্তিত্ব বিলীন। নিষেধাজ্ঞা কারা দিবে? তারা কারা? ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু দুষ্ট লোক থাকবেই। তাদের এড়িয়ে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য ভাবতে হবে। ১৮ কিংবা ৩৮টি সংগঠন থাকলেই হবে না বেশি বেশি নতুন প্রযোজক দরকার। ভালো মানের বেশি সিনেমা হলেই চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে। নতুন আরো অনেক শিল্পী আসতে হবে। দর্শক প্রযুক্তির কারণে এগিয়ে গেছে। আমাদের এখানে সব সেক্টরে নতুন আরো দক্ষ লোক আসতে হবে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখে গবেষনা করে এগিয়ে যেতে হবে। সবকিছু আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আর ফেডারেশনের বিষয়টি বিস্তার অবগত নই। তবে চলচ্চিত্রের স্বার্থে কাজ করবে এমন সবকিছুকেই সবসময় আমার শুভ কামনা।

বাংলা ইনসাইডার :  শাকিব খান ও নায়িকা নিপুণ মিলে শিল্পী সমিতির আগামী নির্বাচনে প্যানেল করছেন। বর্তমান কমিটির হয়ে আপনি আর নির্বাচন করবেন না। ওই প্যানেলে আপনার নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি কতটুকু সত্য?

মিশা সওদাগর :  আমি এখন পর্যন্ত বর্তমান কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তাই এ নিয়ে এখনই পরিস্কার করে কিছু বলতে পারছি না। আমি সিনিয়দের থেকে শিখেছি- বর্তমান কমিটিতে থাকাকালীন তার আগামী দিনের অভিপ্রায় কি সেটি তিনি বলতে পারেন না। নির্বাচনী তারিখ ঘোষণার পরই বিষয়টি পরিস্কার করতে পারব।

বাংলা ইনসাইডার :  ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার কাজ শেষের দিকে। কিন্তু আমেরিকা গিয়ে খুব দ্রুত চলে এসেছেন শাকিব খানের সিনেমায় কাজ করার জন্য। এটি কি একসঙ্গে নির্বাচন করার কোনো ইঙ্গিত?

মিশা সওদাগর :  শুরুর আগ থেকেই পরিচালক আমার সাথে সিনেমাটির জন্য যোগাযোগ করেছে। তখন সবকিছু ব্যাটে বলে না মেলায় কাজটি করার অনাগ্রহ দেখাই। এই সময়ে এসে আমার ভাবনাটা তারা আমার মতো করে ভেবে কাজটি করতে চেয়েছেন। যার কারণে আমি আগ্রহ দেখাই। সবকিছু মিলে যাওয়ায় কাজটি করছি। তাছাড়া আমেরিকা যাওয়ার আগে কাজটি শুরুর কথা ছিল কিন্তু নানান কারণে তখন হয়নি আর আমিও চলে গেলাম। যাওয়ার পর ফেরার জন্য অনুরোধ করে যার কারণে সিনেমার স্বার্থে আসতে বাধ্য হয়েছি। সবাই চেয়েছে আমি কাজটি করি। সবার কথা রাখতে হয়েছে। এসে বিশ্রাম না নিয়েই সিনেমাটির জন্য তৈরি হয়ে যাই। দর্শক ভালো একটি সিনেমা পেতে যাচ্ছে। আমি সব সময় চেয়েছি ভালো সিনেমার সাথে থাকতে। যদিও এখন ভালো সিনেমার সংখ্যা কমে গেছে। তাছাড়া শাকিব-মিশা জুটি বিগত দিনে বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় ও ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছে।

দর্শকের কাছেও আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সবকিছু ভেবে কাজটি করছি। সিনেমার সাথে নির্বাচনের বিন্দু মাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে কোনো কথাও হয়নি। গল্পের প্রয়োজনে আমাকে দরকার ছিল। ভালো জিনিসের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব। পরিচালকও আমার সাথে কাজ করতে খুবই উদগ্রীব ছিল। তাই দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজটি করা।

বাংলা ইনসাইডার :  শিগগিরই শিল্পী সমিতির নির্বাচন। ভোটাধিকার হারানো শিল্পীদের নিয়ে কী ভাবছেন?

মিশা সওদাগর :  আমাদের সর্বশেষ মিটিংয়ে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। ১০ জন করে ইন্টারভিউ নিয়ে যোগ্যদের নেওয়ার জন্য মিটিংয়ে সেসময় পাশ করিয়েছি। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের অনেক কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবছি। নির্বাচনের আগেই যোগ্যদের পূর্ণ সদস্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

বাংলা ইনসাইডার : অনেকেই বলছেন- যদি সিনেমা না থাকে সমিতি কিংবা সংগঠন দিয়ে কি হবে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ভালো সিনেমা দরকার। বিষয়টি নিয়ে আপনার অভিমত?

মিশা সওদাগর : বিষয়টি তাদের হয়ত বোঝার ভুল। সমিতি শিল্পীতের জন্য, চলচ্চিত্রের জন্য নয়। শিল্পী সমিতি শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করে। এটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক একটি সংগঠন। এর সাথে কেউরই স্বার্থ জড়িত নেই। প্রযোজক-পরিচালকরা সিনেমা নিয়ে ভাববেন। আমাদের কাজ হচ্ছে চরিত্রটি ঠিক মতো পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। শিল্পীদের জন্য সমিতি দরকার আছে।

বাংলা ইনসাইডার : প্রায়ই শিল্পীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন? 

মিশা সওদাগর: এদেরকে যত তারাতারি সম্ভব আইনের আওতায় আনা দরকার। গুটি কয়েক লোক ফেসবুক ও ইউটিউবে উদ্ভট শব্দ জুড়ে দিয়ে এমনভাবে রসিয়ে প্রচারণা চালায় যার কোনো সত্যতা নেই। এতে ইন্ডাস্ট্রি ও শিল্পীর বদনাম হয়। তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অনেক সময় এগুলো আমরা সহ্য করে নেই। দেখা গেছে, অভিনেত্রী প্রভা সুন্দর একটি ছবি শেয়ার করলেও সেটি নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। কিছুদিনে আগে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী মায়ের সাথে ছবি শেয়ার করেও এমন পরিস্থির শিকার হতে হয়েছে। মাকে নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলবে আমি মেনে নেব না। সেসময় আমি এর প্রতিবাদ করে নিজ মতামত ব্যক্ত করেছি ফেসবুকে। এটা ঠিক না। এদের প্রতিহত করতে শিল্পীদের এগিয়ে আসতে হবে। আইনি সহায়তা নিতে হবে। যারা এগুলো করে তাদের তীব্র নিন্দা জানাই।

বাংলা ইনসাইডার :  দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে?

মিশা সওদাগর :  আকাঙ্ক্ষা করে লাভ কি? নতুন সিনেমা, শিল্পীর অভাবে ইন্ডাস্ট্রিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! নতুন নতুন লোক না আসলে তো ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে না। হুমায়ুন ফরিদী, মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, এটিএম শামসুজ্জামান, সাদেক বাচ্চু সহ আরো অনেকেই ছিলেন। তখন কাজে অনেক প্রতিযোগিতা হতো। এখন আমি একা কি করব? একজন শিল্পী দিয়ে তো ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কম করে হলেও প্রধান চরিত্রের জন্য ৩০ জন অপরিহার্য শিল্পী লাগবে। এক সময় আনন্দ পেলেও এখন একা কাজ করে তৃপ্তি পাই না। যেখানে সিনেমা নেই, সেখানেও আমার হাতে অসংখ্য নতুন সিনেমার প্রস্তাব। বুধবার এফডিসি প্রবেশ করেই নতুন তিনটি সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি। নতুন আরো শিল্পী আসতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে। সবাই একত্র হয়ে কাজ করলেই ফের ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে।

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭