ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি কি জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য করবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2021


Thumbnail

জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে এখন এরশাদের ছোটভাই জি এম কাদের। রওশন এরশাদ অসুস্থ, রাজনীতিতে কোনো মতামত দেবার অবস্থা তার নেই। নেতারা দুইভাগে বিভক্ত এবং কিছু কিছু নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন। আর কিছু কিছু নেতা অস্বস্তিতে। তারা মনে করেন যে এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত। জি এম কাদের এখন পর্যন্ত একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থানে রয়েছেন। গৃহপালিত বিরোধীদলের অবয়ব থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছেন, যদিও বলছেন যে বিভিন্ন ইস্যুতে গঠনমূলক সমালোচনা করাই তার রাজনীতির লক্ষ্য। এরকম একটি পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটবে কিনা, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানামুখী আলাপ-আলোচনা করছেন।

বিশেষ করে বিএনপি যখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলছে, তখন সে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাদের সহযাত্রী কে হবে, এটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশে এখনও ভোটের হিসেবে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। এখনও জাতীয় পার্টির একটি নিজস্ব ভোট রয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের পকেট রয়েছে। এই বিবেচনায় অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্য করার চেয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য করা ভোটের হিসেবে অনেকটাই লাভজনক। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ মহাজোটে জাতীয় পার্টিকে রেখেছে। 

জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটের দ্বিতীয় প্রধান ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। বিএনপির মধ্যে জাতীয় পার্টি নিয়ে দু`রকমের মতামত রয়েছে। বিএনপির অনেকেই জাতীয় পার্টিকে স্বৈরাচারের দল হিসেবে মনে করেন। তারা মনে করে যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্য করা অসম্ভব ব্যাপার কিন্তু ভোটের কৌশলে আবার অনেকেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে এক হয়ে আন্দোলন করতে চায়। আর এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি কি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করবে? বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে? 
বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যদি বিএনপিকে সফল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার পতনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হয়, তাহলে জাতীয় পার্টিকে বাদ দেয়ার উপায় নেই। জাতীয় পার্টির অনেক নেতার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে এমনটিও তারা বলেন।

কিন্তু জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির রাজনীতিতে মৌলিক কোনো পার্থক্য না থাকলেও বেশ কিছু ইস্যুতে অনেক পার্থক্য রয়েছে। গত এক যুগে জাতীয় পার্টি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, বিএনপির যে মৌলিক দাবি, সে মৌলিক দাবির সঙ্গে জাতীয় পার্টি একমত নয়। বিএনপির একটি মৌলিক দাবি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা কিন্তু জাতীয় পার্টি কখনওই মনে করে না যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি যৌক্তিক।

জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধী অবস্থানে আছেন। বিশেষ করে ৯০`র গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সরকারকে এখনও জাতীয় পার্টি স্বীকার করে না। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির নেতা জি এম কাদের মনে করেন যে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা জরুরী বলেও তারা মনে করেন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

তাই এই মৌলিক পার্থক্যের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টি আর বিএনপির ঐক্য বাস্তবে অসম্ভব বলেই অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি বড় অংশ এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্কিত। এই কারণেই বিএনপির বৃহত্তর রাজনৈতিক জোটে জাতীয় পার্টির থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে অনেকেই মনে করে যে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭