ইনসাইড পলিটিক্স

সরকারের সমন্বয়হীনতা বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/09/2021


Thumbnail

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। তবে তৃতীয় মেয়াদে এসে সরকার যেন ছন্দে নেই। একদিকে করোনার সংক্রমণ, করোনা ঠেকাতে নানামুখী সঙ্কট, অন্যদিকে সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা ক্রমশই যেন প্রকট হয়ে উঠছে। একটি সমন্বয়হীনতার ঘটনা শেষ হতেই আরেকটি সমন্বয়হীনতার ঘটনা ঘটছে। করোনার সময় লকডাউন নিয়ে সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা যেমন দেখা গিয়েছে, এখন করোনার প্রকোপ কমলেও বিভিন্নক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা কমেনি। বরং কোথাও কোথাও সমন্বয়হীনতা বাড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন সপ্তাহ আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে করোনা পরীক্ষার জন্য বিমানবন্দরে আর্টিফিশিয়াল ল্যাব বসাতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুন শর্ত দিয়েছে যে কোনো ব্যক্তিকে সে দেশে প্রবেশ করতে গেলে তার করোনার আর্টিফিশিয়াল টেস্ট নেগেটিভ লাগবে। সেজন্যই বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য আর্টিফিশিয়াল ল্যাব বসানোটা ছিল জরুরী।

এই ল্যাব না থাকার কারণে প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারেননি। তারা কাজকর্ম হারাবার একটি অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে একদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অপরদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এক জটিল টানাপোড়েন এবং সমন্বয়হীনতার নজির স্থাপন করে। তার ফলে গতকাল প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ৪৬জন যাত্রীকে করোনা পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়েছে। আর এই সমন্বয়হীনতা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর আহমেদ কায়কাউসকে নিজে বিমানবন্দরে যেতে হয় এবং সেখানে তিনি দুই মন্ত্রী এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

এখন নেপালের মতো দেশও আর্টিফিশিয়াল ল্যাব বিমানবন্দরে বসিয়েছেন। সমন্বয়হীনতার কারণেই এই আর্টিফিশিয়াল ল্যাব বিমানবন্দরে বসাতে বিলম্ব হচ্ছে। এখনও স্থায়ীভাবে এই ল্যাব বসাতে দশদিন থেকে দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে বলে জানা গেছে। যদি সমন্বিতভাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করতো, তাহলে এইরকম পরিস্থিতির তৈরি হতো না বলেই অনেকে মনে করেন।

একইরকম ঘটনা ঘটেছে ই-কমার্স প্রতারণার ক্ষেত্রেও। একটির পর একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আসছে। সর্বশেষ ই-ভ্যালির কার্যক্রম নিয়ে দেশ এখন সরগরম। প্রতিদিন রাস্তায় ই-কমার্স দ্বারা প্রতারিত ব্যক্তিরা মিছিল করছেন। আজও প্রেসক্লাবের সামনে ই-অরেঞ্জ কর্তৃক প্রতারিত গ্রাহকরা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে পুলিশের সাথে তাদের যুদ্ধ হয়।

ইভ্যালি বা ই-কমার্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এদের প্রতারণা এবং অনিয়ম কে দেখভাল করবে, এ নিয়েও সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা প্রকট হয়েছে। গতকাল এ নিয়ে মন্ত্রীদের ভেতর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী রীতিমতো মুখোমুখি অবস্থান নেন। অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেছেন যে এই ই-কমার্স বাণিজ্যের দায় এড়াতে পারে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন টাকা গিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে, মনিটরিং তারাই করবে। এইরকম একটি প্রকাশ্য বাদানুবাদের ফলে জনগণের মনে একধরণের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জনগণ তাদের টাকা ফেরত পাবে কিনা, তা নিয়ে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গতকাল এ নিয়ে আন্ত:বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সভায় যে সমন্বয়হীনতা দেখা গিয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন যে সরকারকে তার কাজের ক্ষেত্রে আরও সমন্বিত হতে হবে। সমন্বয়হীনতার ফলে সরকারের অনেক ভালো কাজের অর্জন অনুজ্জ্বল হয়ে যেতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭