ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের আগেই ১৪ দলে ভাঙ্গন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2021


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলনের লক্ষ্যে বৃহত্তর জোট করতে চাচ্ছে বিএনপি। বিপরীতে ১৪ দলের সঙ্গে নিত্য নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বিশেষ করে জাসদের ৭৫ এর ভূমিকা নিয়ে কথা উঠেছে শেখ সেলিমসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে। পাশাপাশি পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিয়ে জোটে থাকা শরিক দলগুলোর মধ্যেও আছে বিস্তর হতাশা। ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জটিলতা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে কি করবে না সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একক মন্ত্রীসভা গঠন করে আওয়ামী লীগ। আগের দুই টার্মে সরকারের কেবিনেটে জোটের অন্যান্য দলগুলো থেকে মন্ত্রীত্ব পেলেও এবার একজনও নেই। পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে গত এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থেকেও সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়াতে পারেনি শরিক দলগুলো। বরঞ্চ ক্ষেত্র বিশেষ দুর্বল হয়েছে বলে ভাবতে শুরু করেছে তারা। শরিকদের কেউ বলছেন প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে জোট। আবার কেউ কেউ প্রাসঙ্গিকতা বাড়ার দাবিও করছেন।  

জোটে মোটামুটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বাংলাদেশ জাসদ। তাদেরকে ১৪ দলের কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ জাসদের দলীয় এক অনুষ্ঠানে দলটির সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, আমরা ১৪ দলের কোনো কর্মসূচিতে যাই না। ১৪ দল তো এখন শুধু দিবসভিত্তিক কিছু কর্মসূচি পালন করে থাকে। অন্য কোনো ইস্যুতে তেমন আলাপ নেই। তবে এখনো জোট থেকে বের হয়ে যাননি বলেও দাবি করেন তিনি। 

আরেক শরিক হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের সঙ্গেও বাহাস চলছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এক আলোচনাসভায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও কর্নেল তাহের বাংলাদেশ বেতারে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে এ হত্যাকাণ্ডে তাদেরও দায় আছে মন্তব্য করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদের দায় আছে বলে মন্তব্য করেন। জাসদ নেতারাও তাৎক্ষণিকভাবে শেখ সেলিমের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তারা উলটো আওয়ামী লীগের এই নেতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। শেখ সেলিমের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দলটির দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিও দেয় জাসদ।

১৪ দলে নিজেদের অবস্থান খুঁজে না পাওয়ার দলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নামও আছে। ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ১৪ দল প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের জোট হলো অসম একটি জোট। এখানে কখনোই সবার মতামতের ভিত্তিতে কিছু করার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। বরাবরই আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য। সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ কিভাবে করবে, কী করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তারা যদি নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দিকে ঝোঁকে, তাহলে ১৪ দলের বামদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব বাড়বে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন অন্য কথা। স্বতন্ত্র অবস্থান নেয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি না থাকায় অসন্তোষ নিয়েই শরিক দলগুলো জোটে থাকছে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির বিকল্প কোনো বড় রাজনৈতিক জোট না থাকায় ফলেও তারা জোট ছাড়ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এ দিকে জোটে কোনো ধরণের সংকট আছে বলে মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, আমাদের মধ্যে কোনো সংকট নেই। আস্থা ও বিশ্বাসেও কোনো ঘাটতি নেই। তবে এটা ঠিক করোনার কারণে বৈঠক নেই, দেখা-সাক্ষাৎ নেই, কর্মসূচি নেই। জোটের কারও কারও মনে হতাশা থাকতে পারে। ক্ষোভ থাকতে পারে। কেউ কারও কথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। এসব সাময়িক, সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদকে জড়িয়ে দেয়া শেখ সেলিমের বক্তব্য ১৪ দলীয় জোটকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। দিবসভিত্তিক ভার্চুয়াল সভা-সেমিনার আয়োজন ছাড়া কার্যত নিষ্ক্রিয় এই জোটের দুই শরিকের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়তে থাকলে তার পরিণতি ভাঙনে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি জোট থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মন্ত্রীত্বে না থাকা ও ক্যাসিনো কাণ্ডে নাম আসার পর থেকেই উল্টো গান গাইছেন তিনি। জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও আগামীতে আর ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ভোট না করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। জোটের আরেক শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপিও নিষ্ক্রিয়। শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে জাসদের একটি অংশ বেরিয়ে বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা একটি দল গঠন করেছে প্রায় তিন বছর। তারাও ১৪ দলীয় জোটে আছে, তবে নামমাত্র। প্রত্যাশা আর হতাশা নিয়ে  জোটে আছে দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল। একই অবস্থা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনেরও। জোটের আরও তিন শরিক গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ১৪ দল থাকবে কি থাকবে না সেটিই এখন দেখার বিষয়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছরই ২৩ দফা ঘোষণা দিয়ে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ১১ দলীয় জোট মিলে এই জোট গঠিত হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭