ইনসাইড ইকোনমি

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গাঢ় হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/09/2021


Thumbnail

আজ থেকে চার বছর আগে মার্কিন জ্বালানি প্রতিষ্ঠান শেভরন বাংলাদেশ থেকে যেতে চেয়েছিল। এজন্য শেভরনের চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছিল সেসময়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ভূরাজনৈতিক কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছেড়ে যায়নি শেভরন। বাংলাদেশের কয়েকটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ নিয়ে ২০৩৩-৩৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে রয়েছে শেভরনের। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি এখন বিনোয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

জানা যায়, রানা প্লাজার ঘটনার পর ২০১৩ সালে দেশী-বিদেশীসহ সব মহলই আশঙ্কা করছিল যে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু এ সংক্রান্ত সব আশঙ্কাই ভুল প্রমাণিত করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওনাার নেতৃত্বে সব ধরণের কূটনীতিক জটিলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পোষাক রপ্তানিকারক দেশ। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ত্বত্তাবধানে গত এক দশকে এখান থেকে দেশটির পোশাক ক্রয় বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। এমনকি করোনাকালেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৮ শতাংশের বেশি পোশাক আমদানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। শুধু পোশাক রফতানি নয়, যুক্তরাষ্ট্র এফডিআই, গ্যাস, বীমাসহ আরো বেশকিছু খাতের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। মার্কিন আগ্রহেই জাপান বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে আগের তুলনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিপত্রেও দেখা যায়, আসছে দিনগুলোতে আরো গাঢ় হওয়ার সুযোগ রয়েছে মার্কিন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সাম্প্রতিক নথিতেও বাংলাদেশকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কিন বিনিয়োগের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে। 

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করা হয় , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি  উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমশক্তিও এখন বর্ধনশীল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ বাজারগুলোর সন্ধিস্থলে অবস্থান করায় কৌশলগত সুবিধাও অনেক বেশি বাংলাদেশের। পাশাপাশি অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী এখানকার বেসরকারি খাতও। এফডিআই আকর্ষণে বর্তমানে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এর বিপরীতে একটু একটু করে দূর হচ্ছে বিনিয়োগের বাধাগুলোও। এমনকি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কভিডের জোরালো আঘাত সত্ত্বেও সামনের দিনগুলোতে  বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
 
শেভরন বাংলাদেশের গ্যাস উত্তোলন খাতে একমাত্র মার্কিন কোম্পানি। এই একটি কোম্পানিই হয়ে উঠেছে এখানকার গ্যাস উত্তোলনের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। এর মধ্যে জ্বালানি খাতের শেভরন করছে ৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কোম্পানিটি ২৫ বছর ধরে কাজ করছে বাংলাদেশে। ২০১৭ সালের দিকে কোম্পানিটি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা উঠলেও পরে তা আর এগোয়নি। উল্টো আরো বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ। সামনের দিনগুলোয় তা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল গণমাধ্যমকে জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য শীর্ষ দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বিনিয়োগেও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশের রেমিট্যান্সেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। সব দিক বিবেচনায় দুই দেশের সম্পর্কটা অনেক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের অ্যামচেম থেকেও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও দুই দেশের সম্পর্কে আরো ইতিবাচক গভীরতা দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা করছি। এভারকেয়ারে যে বিনিয়োগ, তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এভিয়েশন খাতে ড্রিমলাইনারগুলোর সবই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আবার বেল হেলিকপ্টারগুলোও তাই। পেমেন্ট খাতেও মার্কিন বিনিয়োগ আছে। সব মিলিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক মনোযোগ বাড়িয়েছে, যা সামনে আরো বাড়বে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম  এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু দেশটির পোশাকপণ্যের বাজারে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, যেগুলো এখন পর্যন্ত কাজে লাগানো যায়নি। দেশটির অনেক ক্রেতা আছেন যারা চীন, ব্রাজিল ও ভিয়েতনাম থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক কেনেন। এ ক্রেতাদের খুঁজে বের করে তাদের বাংলাদেশের সক্ষমতা সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে। এভাবে বর্তমান সম্পর্ক আরো গভীর করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে ভিয়েতনামে অনেক মার্কিন ক্রেতা আছেন, যারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতে পারেন। কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্রেতাদের ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এখনই যদি এ সুযোগ কাজে লাগানো যায়, তাহলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমেই আরো দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কূটনীতিকরা বলছেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কে যে অপারসম্ভাবনা, তার খুব কমই এখন পর্যন্ত কাজে লাগানো গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার। দেশটিতে জিএসপির আওতায় যে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যেত, সেটা আপাতত স্থগিত রয়েছে। এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন কূটনীতিকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭