ইনসাইড টক

‘সব মিলিয়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ফ্লো কমে যায়নি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/10/2021


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, করোনাকালে আমাদের দেশে রেমিটেন্স এর প্রবাহ বেশ বেড়েছিলো, বিশেষ করে গত অর্থবছরে এর পরিমাণ অনেকাংশে বেড়েছিলো তার বড় কারণ বিদেশে বসবাসকারীরা নিজ দেশের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে সেই সময় বেশ চিন্তিত ছিলেন। তাদের সেই সময় মূল লক্ষ ছিলো যেভাবেই হোক দেশে বসবাসকারী নিজ লোকদেরকে অর্থ সরবরাহ করা, তাছাড়া তারা সেই সময় ওই সব দেশ থেকেও প্রণোদনা পেয়েছিলেন সেখান থেকেও তারা অর্থ পাঠিয়েছিলেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারও সেই সময় যারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবেন তাদের জন্য ২ শতাংশ কেশ ইনসেন্টিভের ঘোষণা করে। অনেক প্রবাসী কর্মী ভেবেছিলেন যেসব দেশে তারা কাজ করেন সেখানেও যেহেতু লক ডাউন হচ্ছে সেহেতু তারা তাদের পুরনো সব সঞ্চয় গুটিয়ে নিয়ে দেশে চলে এসেছিলেন। এই সব কারণেই গত বছর দেশে রেমিটেন্স এর প্রবাহ অনেকাংশে বেড়েছিলো।

বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ড. আতিউর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এইসব প্রবাসীদের কিছু নিয়ম নীতিও সহজ করে দিয়েছিলো যেন যারা প্রণোদনার টাকা পাঠায় তারা যেন কাগজ পত্রের জটিলতায় না পড়েন। অনলাইনে পেমেন্টকেও বেশ জোরদার করা হয়েছিলো। যার কারণে গত অর্থ বছরে প্রায় ২৫ (২৪.৮) বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছিলো। কোন কোন ব্যাংক নিজ থেকেই ১ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধা দিয়েছিলো, যেমন অগ্রণী ব্যাংক এই সুবিধা গুলো প্রবাসীদের জন্য বরাদ্দ করেছিলো যাতে করে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশে সাথে আরো এক শতাংশ মোট তিন শতাংশ প্রণোদনা যোগ করে প্রবাসীরা যাতে আরো উৎসাহিত হয় দেশে টাকা পাঠানো ক্ষেত্রে।

তিনি আরও বলেন, তবে এই অর্থ বছরের শুরুতে দেশে রেমিটেন্স এর প্রবাহ কিছুটা কমে এসেছে। গত বছর দেশে প্রথম কোয়াটারে রেমিটেন্স এসেছিলো ৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিন্তু এই বছরের প্রথম কোয়াটারে তার পরিমাণ ৫.৪ ডলার অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রথম কোয়াটারে রেমিটেন্স কমেছে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে রেমিটেন্স যতটা কমেছে তার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ বেড়েছে রপ্তানি আয়, এই অর্থ বছরে আগের বছরের তুলনায় ১.৩৭ শতাংশ বেড়েছে। সেপ্টেম্বরেই বেড়েছে গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ এবং ২.৬ বিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে। তার মানে বছরের প্রথম কোয়াটারে আমরা রেমিটেন্স থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার কম আয় করেছি কিন্তু অন্যদিকে রপ্তানি থেকে আমরা ২.৬ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছি গত অর্থ বছরের তুলনায়। সব মিলিয়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ফ্লো কমে যায় নি। সুতরাং শুধু রেমিটেন্স এর কথা না ভেবে দুটো মিলিয়ে যদি ভাবি তবে আমাদের বৈদেশিক আয় কমেনি বরং বেড়েছে।

ড. আতিউর রহমান বলেছেন, যারা বিদেশ থেকে করোনায় দেশে আটকে গিয়েছিলো তারা আবার বিদেশে ফিরতে শুরু করেছেন। বিমান সেবা চালু হয়েছে, বিমান বন্দরে আরটিপিসি ল্যাব চালু করা হয়েছে, সরকার বিদেশ যাত্রীদের করোনার টেস্টের খরচ বহন করছে সুতরাং এসব কারণে এখন আরও বেশী লোক যাচ্ছে। এবং যে সব দেশের তেলের দাম বেড়ে গেছে। কালকে  আশি ডলার হয়ে গেছে তেলের দাম। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দাম বাড়া মানে কাজকর্মও বাড়বে এবং সেজন্য আবার  আমাদের কর্মীরা যাওয়া শুরু করেছে এবং নতুন করে কাজ পাবে। যাদের বেতন কমে গিয়েছিল তাদের বেতন বাড়বে।  সুতরাং এটা খুব সাময়িক একটা বিষয় রেমিট্যান্স কমে গিয়েছে। আমার নিজের ধারণা আগামী দুই মাসের মধ্যেই হয়তো রেমিট্যান্স পুরনো গতিতে ফিরে আসা শুরু করবে। 

প্রণোদনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তবে এই সময়টায় সরকার আরেকটু প্রণোদনা দেয়া যায় কিনা, বিশেষ করে যারা কম পয়সা পাঠায়, যেমন এক হাজার, দেড়  হাজার ডলার। এমন পরিমাণের জন্য আরও ১% প্রণোদনা সরকার বাড়াতে পারে কিনা ভেবে দেখতে পারে। তাতে করে ফ্লোটা আরও বাড়তো। এখন রেমিট্যান্স আমার নিজের ধারণে বছর শেষে হয়তো ২৫ বিলিয়ন ডলারও হবে না। তবে কাছাকাছি থাকবে ২২-২৩ বিলিয়ন ডলারের কম হবে না আমার নিজের ধারণা। এক কোয়ার্টারে যদি ১ বিলিয়নও কমে, ৪ কোয়ার্টারে ৪ বিলিয়ন কমবে, তাঁর মানে ২১। এর সাথে যদি ইদানীং কালের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তেলের দাম বাড়ছে, মানুষ বেশি বাড়ছে এসব কারণে যদি আরও ১-২ বিলিয়ন বাড়ে তাহলে তো ২২-২৩ বিলিয়ন ডলারটা খুব সহজ। সেটাও আমাদের জন্য কম না। 

ড. আতিউর রহমান বলেছেন, আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ কিন্তু একটুও কমে নি। সর্বশেষ ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ৪৬.১৫ কিন্তু আছে। ৪৬ বিলিয়ন ডলারের উপরেই এখন আমাদের রিজার্ভ। কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, ফিনিশ গুড সবই বাড়ছে। বিশেষ করে রপ্তানি খাতের জন্য যে ধরণের কাঁচামাল দরকার, যে ধরণের যন্ত্রপাতি দরকার সেগুলো অনেকটাই বেড়েছে। আগামীতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে। আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের উপর চাপ পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সেজন্য খানিকটা ডলারের দামও বেড়েছে। এবং বাংলাদেশ ব্যাংক  তাঁর প্রতিক্রিয়ায় ডলার বাজারে বেশি করে বিক্রি করা শুরু করেছে। যেহেতু আমাদের রিজার্ভের অবস্থা ভাল সুতরাং বাংলাদেশ  ব্যাংক এটা করতেই পারে। আমি মনে করি করাটা ঠিক হচ্ছে। বেশি করে ডলার বিক্রি করে দেয়া মানে বাজার থেকে লিকুইডিটি তুলে নিচ্ছে। বাজারে যে অনেক বেশি লিকুইড পজিশন আছে এখন সেটা খানেকটা কমে আসছে। সেটা ভালো মনে করি। ধীরে ধীরে আমাদের যে লিকুইডিটি বাজারে ছেড়েছিলাম আমরা পুনরুদ্ধারের জন্য সেটা কমিয়ে এনে স্বাভাবিক করে ফেলতে হবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাটাকে। দুই দিক থেকেই লাভ হচ্ছে। সুতরাং এই মুহূর্তে আমদানি করার জিনিসপত্রের দাম খানিকটা বাড়ছে, বাড়বে। কিন্তু প্রবৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত প্রয়োজন, মেগা প্রকল্পের জন্য যে আমদানি, রফতানির জন্য যে আমদানি সেটা অব্যাহত থাকুক। তার জন্য যদি ডলার আরও খরচ হয়, রিজার্ভ যদি কমেও যায় কমুক। তবুও এটা চালু থাকুক। আমার মনে হয় যে সব মিলিয়ে আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং আমাদের দেশের ভিতরের ভোগ এবং বিনিয়োগ দুইটিই বাড়বে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭