ইনসাইড পলিটিক্স

বাবর: লুকিং ফর...

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/10/2021


Thumbnail

২০০১ সালের অক্টোবরে লুৎফুজ্জামান বাবর যখন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, বিএনপির অনেকেই ভ্রু কুঁচকে ছিলেন। বিএনপির অনেকেই তাকে ঠিকঠাক মতো চিনতেনও না। যারা চিনতেন তাদের কাছে লুৎফুজ্জামান বাবর এর পরিচয় ছিল অন্যরকম। তারপরও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন অনেকে মনে করেছিলেন যে, যেহেতু এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে প্রতিমন্ত্রী তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু লুৎফুজ্জামান বাবর চমক দেখানোর অপেক্ষায় ছিলেন। কিছুদিন পরেই দেখা গেল যে না, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আসল চালক হলেন বাবরই। প্রথমবার এমপি হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। তারপর এই মন্ত্রণালয়ের কলকাঠি সব তার হাতে। একসময় এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেনকে বিদায় নিতে হলো। বাবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাই চালানো শুরু করলেন। বাবর এর এই উত্থান রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়ে ছিল। কিন্তু এই উত্থান যত দ্রুত গতিতে হয়, পতনও তার চেয়ে দ্রুত গতিতে হয়। এই যে কথাটি তা লুৎফুজ্জামান বাবর এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সবচেয়ে বেশি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর বাবরের সেই উক্তিটি ছিল বহুল আলোচিত, বহুল চর্চিত। 

বাবার বলেছিলেন, ওই আর লুকিং ফর শত্রুজ। বাবরের মতো যারা হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছেন তারা নানা কথা বলে অমরত্ব পেয়েছেন। বাবর এই কথাটার জন্যই অমরত্ব পাবেন। ২০০৭ সালে এক এগারো সরকার আসার পর বাবর অনেকদিন গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছেও তিনি তদবির করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার শেষ রক্ষা হয়নি। অতঃপর বাবর গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হয়। ইতিমধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাকে ২১শে আগস্ট হামলা মামলায় এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তিনি ফাঁসির দণ্ডের দণ্ডিত হয়েছেন নিম্ন আদালত কর্তৃক। এই দুইটি মামলা যেকোনো একটি উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হলেই বাবরের জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। কিন্তু রাজনীতিতে লুৎফুজ্জামান বাবররা কি দিলেন? 

আজ একটি মামলায় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭, মো. শহীদুল ইসলাম আট বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্পদের হিসেব বিবরণী জমা দেয়ার জন্য ২০০৭ সালের পাঁচ জুলাই বাবরকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নোটিশ দিয়েছিল। পরে বাবর ছয় কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসেব জমা দেন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায় যে, গুলশানের একটি ব্যাংকেই তার ছয় কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই টাকা বাবরের ব্যাংক হিসেবে এসেছিল সিঙ্গাপুর থেকে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত করে আদালতে চার্জশীট দেয় দুদক। পরে আজ মামলার রায়ে তাকে আট বছরের দণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। 

লুৎফুজ্জামান বাবররা রাজনীতিতে একটি বড় উদাহরণ। হঠাৎ করে আদর্শ চর্চা ছাড়া শুধু দুর্নীতি এবং অপকর্ম করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না। রাজনীতিতে আসার আগে বাবরের নাম ছিল ক্যাসিও বাবর। বিমান বন্দরের চোরা চালান চক্রের তিনি ছিলেন অন্যতম নেতা। বাংলাদেশে যখন সস্তায় ক্যাসিও ঘড়ির চল এলো, তখন ক্যাসিও ঘড়ি চোরাচালান করেই প্রথম আলোচিত হয়েছিল বাবর। এ রকম একজন দুর্নীতিবাজ এবং দুর্বৃত্তকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল হাওয়া ভবনের ইচ্ছায়। তারেক জিয়া এবং গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের চোরা চালানের সিন্ডিকেট সামাল দেওয়ার জন্যই বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এবং এই সময়েই তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীকে লালন করেছিলেন। রাজনীতির পরিণতি সম্ভবত এ রকমই হয়। যখন কোনো রাজনীতিবিদ আদর্শের বাইরে, জনগণের সেবার বাইরে মতলব নিয়ে রাজনীতি করেন এবং মন্ত্রীত্বকে ব্যবহার করেন ব্যবসা এবং অপকর্মের সিঁড়ি হিসেবে, তখন তার পরিণতি বাবরের মতোই হয়। লুৎফুজ্জামান বাবরের বর্তমান পরিণতি সকলের জন্যই একটি শিক্ষা বটে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭