নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 14/10/2021
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতিবছরই অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা পৃথিবীতেই বিশ্ব দৃষ্টি দিবস পালিত হয়। বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে চোখ নিয়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের মাঝে মানুষের দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা ও দৃষ্টিহীনতা নিয়ে তাদের সামনে চিত্রটি তুলে ধরা। পাশাপাশি বর্তমানে দেশের মানুষের চক্ষু সংক্রান্ত সমস্যা এবং এর নিবারণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
তিনি বলেন, এবারের দৃষ্টি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “আপনার চোখকে ভালোবাসুন”, ইংরেজিতে যা দাঁড়ায় “Love your eyes”। এই মেসেজটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার পাশাপাশি যদি জনগণের মাঝে তাদের চোখের যত্ন নেওয়া বা কিভাবে তারা নিয়মিত রুটিন চেকআপের মাধ্যমে তাদের চোখকে সুস্থ ও ভালো রাখতে পারবে এই সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের উদ্দেশ্য সফল হবে।
আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এবছর এই দিনটি নানান রকমের আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করছে। বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার আদ্যোপান্ত এবং চক্ষু রোগের চিকিৎসায় বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ ও সাফল্য নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় যুক্ত হয়েছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. গোলাম মোস্তফা।
ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উপলক্ষে ন্যাশনাল আই কেয়ারের পক্ষ থেকে অন্যান্য সহযোগীদের সাথে নিয়ে এই দিনটি উদযাপনে প্রচারণামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি যার মধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেওয়া, টিভি স্ক্রল দেওয়া, নানা ধরনের মেসেজ সম্বলিত ভিডিও আমরা এই দিনটিতে প্রচারের ব্যবস্থা করেছি, যার মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিভিন্ন পোস্টার ও র্যালির মাধ্যমে সারাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতাল, প্রতিটি উপজেলার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারসহ চক্ষু চিকিৎসার সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানে এই দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার কাজটি করছি।
তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল আই কেয়ার মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি অপারেশনাল প্ল্যান। যার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে আমরা অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছিলাম। ন্যাশনাল আই কেয়ার সারা বাংলাদেশে নিবারণযোগ্য অন্ধত্ব কমাতে কাজ করে চলেছে। সারাদেশে অন্ধত্বের হার অনেক কমে এসেছে, ন্যাশনাল আই কেয়ারের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে আগের তুলনায় ২৫ ভাগ অন্ধত্বের প্রাদুর্ভাব কমে এসেছে। ন্যাশনাল আই কেয়ার সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসার মান উন্নয়নের জন্য সেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে আসছে।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল আই কেয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের প্রতিটি উপজেলায় এই কমিউনিটি ভিশন সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই দেশের ৯০টি উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার কাজ করছে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলোর মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষকে চক্ষু চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে খুব সহজেই চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে। বিনামূল্যে চশমা থেকে শুরু করে চোখের ছানির অপারেশন সহ সকল ধরনের চক্ষু চিকিৎসা নিতে পারছে জনগণ। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলো পার্শ্ববর্তী মেডিকেল কলেজের সাথে অনলাইনে সংযুক্ত থাকায় ছানি, গ্লুকোমা, বা ডায়বেটিসজনিত কারণে যারা অন্ধত্বের আশঙ্কায় আছেন তারা সরাসরি ওই মেডিকেল কলেজে রেফারেলের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন। এভাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কাজ করছে ন্যাশনাল আই কেয়ারের আওতাধীন কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলো।
ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, বেশকিছু জায়গাতে চক্ষু চিকিৎসকের স্বল্পতার কারণে শতভাগ সেবা হয়তো দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা ,তাই চক্ষু চিকিৎসকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রতিটি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে ন্যাশনাল আই কেয়ার।
তিনি যুক্ত করেন, আমাদের দেশের কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপনের কাজটি পৃথিবীতে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমাদের পথ অনুসরণ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তারা এই কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবার কাজটি শুরু করলেও গত ১৬ বছরে তারা মাত্র ৭৪টি ভিশন সেন্টার তৈরি করতে পেরেছে। যেখানে আমরা ২ বছরের মধ্যে ৯০ টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার করতে পেরেছি এবং এই বছরে আরো ৬০টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কাজ শেষ করে খুব শীঘ্রই আমরা সেগুলো চালু করতে পারবো। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে আমরা ২০০টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করতে পারবো। ভারতে ভিশন সেন্টারগুলোতে টাকার বিনিময়ে সেবা দেবার বিপরীতে আমরা আমদের দেশের জনগণকে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা দিতে পারছি যা সত্যিকার অর্থেই একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে ১০ টাকার বিনিময়ে চক্ষু অপারেশন, ছানির অপারেশন থেকে শুরু করে চোখের সকল জটিল রোগের সেবা পাচ্ছে জনগণ।
ডা. গোলাম মোস্তফা বিশ্ব দৃষ্টি দিবসে জনগণকে চক্ষু নিয়ে সচেতন হবার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে চক্ষু পরীক্ষার আহ্বান জানান। এই রুটিন পরীক্ষা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, কমিউনিটি ভিশন সেন্টার ও জেলা হাসপাতালগুলোতেও বিনামূল্যে দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। তিনি বলেন, চক্ষু সমস্যায় অবশ্যই গনগনকে সচেতন থাকতে হবে, তবেই অর্জিত হবে নিবারণযোগ্য অন্ধত্বমুক্ত বাংলাদেশ নিয়ে ন্যাশনাল আই কেয়ারের সকল উদ্যোগ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭