ইনসাইড থট

আজ কবি রুদ্রের জন্মদিন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2021


Thumbnail

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র আজ জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে(১৬ অক্টোবর) বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে কবি রুদ্র জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে চির বিদায় নেন। কবি রুদ্রের অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের জন্যে একটি অতি বিয়োগান্তক ঘটনা কারন জীবদ্দশায় তিনি ব্যক্তিগত জীবনে যেমন ব্যপক জনপ্রিয় ছিলেন তেমনি তাঁর সাহিত্য-কর্ম, বিশেষ করে কবিতা ছিল দেশপ্রেমের রাজনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ ও একটি আধুনিক ন্যায় সমাজের স্বপ্ন আকাঙ্খায় ভরপুর।  

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বাগেরহাটের তৎকালীন রামপাল উপজেলার (পরবর্তীতে রামপাল ও মোংলা দুই ভাগে বিভক্ত) সাহেবেরমেঠ গ্রামের বিখ্যাত শেখ পরিবারে জন্ম নেন। তাঁর বাবা শেখ মুহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ উক্ত অঞ্চলের একজন খ্যতনামা চিকিৎসক ছিলেন। মোংলা পোর্টের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি পাকিস্তান সেনাদের দ্বারা আটক হন ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত যশোর জেলে কারাবাস করেন।    
রুদ্রের নানা শেখ মুহম্মদ ইসমাইল ছিলেন মোংলা অঞ্চলের একজন খ্যাতনামা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব। এই পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল ব্যাপক। রুদ্রের জীবনেও নানাবাড়ির প্রভাব পড়েছিল। খুব দ্রুত বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো বা দেশের অস্থির রাজনৈতিক বলয়ের নাগপাশ থেকে দেশের মানুষের মুক্তির চিন্তা সমভাবে রুদ্রের জীবনে উপস্থিত ছিল যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। 

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পড়াশুনা শুরু করেন মোংলার মিঠেখালি গ্রামের পাঠশালা থেকে। পরে তিনি মোংলার সেন্ট পলস স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করে সবশেষে ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান)-সহ এম এ পাশ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যথাক্রমে ১৯৮০ ও ১৯৮৩ সালে।

শিক্ষিত, মেধাবী, মার্জিত ও কোমল মনের মানুষ ছিলেন কবি রুদ্র। রাজনৈতিকভাবে ছিলেন গভীর সচেতন। ৭৫ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতি যখন মৌলবাদী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে উঠছিল, তখন শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও রুদ্র তাঁর অমর একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘জাতির পাতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’। এই লাইনটি আজও কতো প্রাসঙ্গিক, পাঠকমাত্রেই তা উপলব্ধি করবেন। তাঁর এই কবিতার অপর একটি চরণ, ‘ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা’! আমাদের জাতীয় পতাকার এমন অবিস্মরণীয় চিত্রকল্প একজন অসধারন সৃজনশীল কবির পক্ষেই রচনা করা সম্ভব। 

তরুণ সমাজের কাছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর কবিতা ও ব্যবহারগুণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কবি রুদ্র তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা ও কাব্য চিন্তা মিলিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে নেতৃত্বের আসন নেন। সেই  সময়ে তাঁর চারপাশের বন্ধুদের কাছেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাঁকে ছাড়া কোন আড্ডাও যেন অপূর্ণ ছিল। বন্ধুদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘রাখাল’ নামে একটি সংগঠন। রাখালের মূল চেতনা বক্তব্য ছিল, ‘কবিতা ও রাজনীতি একই জীবনের দুই রকম উৎসারণ’। 

পরবর্তীকালে জাতীয় কবিতা উৎসব অনুষ্ঠানেরও অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি।
যদিও তাঁর সৃজনশীল রচনার বয়স খুব কম তবুও তাঁর রচনা সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাঁর জীবদ্দশায় মোট বই বেরিয়েছে ৭টি। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় রুদ্রের প্রথম কবিতার বই ‘উপদ্রুত উপকূল’। পরবর্তী ৬টি কবিতার বই হল, ‘ফিরে চাই স্বর্ণ গ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৬), ‘গল্প’ (১৯৮৭), ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮), ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)। তাঁর মৃত্যুর পর পরেই প্রকাশিত হয় ‘এক গ্লাস অন্ধকার’ (১৯৯২) ও একটি নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ (১৯৯২)।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-কে বলা হয় প্রেম ও দ্রোহের কবি। কবিতায় বিদ্রোহ, রাজনীতি, প্রেম ও সামাজিক অসঙ্গতি এলেও তিনি তাঁর কবিতার একটি বড় উপজীব্য করে তুলেছিলেন তাঁর নিজের এলাকা, রামপাল ও মোংলা অঞ্চলের উপদ্রুত জনজীবন, সামাজিক অস্থিরতা ও প্রেম যা হয়ে উঠেছিল এক গুরুত্বপূর্ণ কাব্য পটভূমি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে মৃত্যুর কিছুকাল আগ পর্যন্ত রুদ্র মোংলায় থাকতেন। তিনি বেশ কিছু গানও রচনা করেছেন। মোংলা-রামপালের বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবকদের নিয়ে তিনি ‘অন্তর বাজাও’ নামে একটি গানের দল গঠন করেছিলেন। বেশিরভাগ গানে তিনি নিজেই সুর দিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ‘ভালো আছি ভালো থেকো’–খ্যাত ‘আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’। গানগুলি দুই বাংলায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। 

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র একটি জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। এছাড়া তাঁর রচনা সামগ্রীও প্রকাশিত হয়েছে। রুদ্রের কবিতা নিয়ে অনেক লেখক গবেষক কাজ করেছেন।  
আজ এই বিশেষ দিনে কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।  

রেজা সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুদ্রের সহপাঠী ও পরিচালক, আমাদের গ্রাম
ই-মেইল: rezasalimag@gmail.com



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭