ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আসিয়ানের বৈঠক থেকে বাদ দেওয়া হল মিয়ানমারের জান্তা প্রধানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2021


Thumbnail

মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর গত সাত মাসের মাঝে এই প্রথম মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলো আসিয়ান। আসিয়ানের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাশাসক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং দেশটির প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। তাঁর পরিবর্তে একজন আমলা জোটের শীর্ষ বৈঠকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

গতকাল শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকে এই জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এ মাসের ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ান–এর ৩৮ ও ৩৯তম শীর্ষ সম্মেলন ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে শুক্রবার জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সভাপতির একটি বিবৃতি আজ শনিবার ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিওয়ান ইউসুফ।

সাধারণত সদস্যদেশগুলোর যেকোনো সংকটে যুক্ত থাকা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে অটল থাকার নীতি অনুসরণ করে থাকে আসিয়ান। মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশের সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ কারাবন্দী রাজবন্দীদের সঙ্গে আসিয়ানের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ও ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিওয়ান ইউসুফকে দেখা করতে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এটা জানার পর তিনি তাঁর পূর্বপরিকল্পিত মিয়ানমার সফর গত বৃহস্পতিবার বাতিল ঘোষণা করেন। সফর বাতিলের এক দিন পর অনুষ্ঠিত হয় আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠক। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

কাকতালীয়ভাবে আসিয়ান যখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করছে, তার কাছাকাছি সময়ে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পূর্ব তিমুর ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজ শনিবার একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করেছে। ওই বিবৃতিতে মিয়ানমারের সংকট নিরসনে মিয়ানমারবিষয়ক আসিয়ানের দূতকে সমর্থন জানানো হয়।

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) নামে পরিচিত নির্বাসিত সরকারকে সমর্থনের পর আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত দেশটির সামরিক সরকার যে ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে, এমন ইঙ্গিতই মিলছে। কারণ, নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করার ফলে জেনারেল মিন অং হ্লাইং সরকারের বৈধতা এখন পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মিয়ানমারের চেয়ারটা ফাঁকাই ছিল।

আসিয়ানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতে জোর

আসিয়ানের বৈঠকে মিয়ানমার থেকে সামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। জরুরি বৈঠকে কয়েকটি সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের চলমান সংকট নিরসনে সামরিক সরকারকে আরও সময় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখান। আবার কয়েকটি সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আসিয়ানের শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে মিয়ানমারের বিকল্প সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। শীর্ষ বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিধাবিভক্তির পর সিদ্ধান্ত হয়েছে চলতি মাসের শেষে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ বৈঠকে মিয়ানমারের কর্মকর্তা পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সভাপতির বিবৃতিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মূলত আসিয়ান একটি জোট হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের যে অবস্থান করে নিয়েছে, সেটি রোহিঙ্গা সংকট থেকে শুরু করে সামরিক অভ্যুত্থানসহ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে অভিন্ন মুদ্রা চালুসহ অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির যে প্রয়াস আসিয়ানের ছিল, ২০১৭ সাল থেকে তা ধাক্কা খেয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার আকাঙ্ক্ষা থেকে মালয়েশিয়া ১৯৯৭ সালে মিয়ানমারকে আসিয়ানে যুক্ত করেছিল। এখন মালয়েশিয়াও বুঝতে পেরেছে মিয়ানমার নিয়ে তার অবস্থানের পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি। মিয়ানমারের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুর এখন মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে সমর্থন করছে। কারণ, আসিয়ান দুর্বল হয়ে পড়লে সেটি এই অঞ্চলের সব দশের জন্যই ক্ষতিকর।

জরুরি বৈঠকের চতুর্থ অনুচ্ছেদে তাই স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আঞ্চলিক শান্তির ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আসিয়ান সনদের মূল আদর্শগুলো সমুন্নত রাখার পাশাপাশি জোটের ঐক্য, বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট রাখাটা জরুরি।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭