ইনসাইড পলিটিক্স

দলের চেয়ে বড় নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2021


Thumbnail

বাংলাদেশে মুখ চেনা হলেই যে কেউ খুলে বসেন `রাজনীতির দোকান` বা রাজনৈতিক দল। তারপর কাগুজে এই দোকানে নিবন্ধনের মাধ্যমে মালিকানা নিজের নামে করেন আর নমিনি বা পরের পদটিতে বসান বউকে। তারপর দল চালু। দলটিকে কেউ চিনুক, না চিনুক, পাত্তা দিক বা না দিক, কমিটি থাক বা না থাক, চিন্তার বালাই নেই, এক নেতা থাকলেই চলবে। নেতা একাই সব করতে পারবেন। মানব মুক্তির বার্তা নিয়ে এক নেতা সর্বস্ব এসব দল অনেকদিন ধরেই চলছে!

নাগরিক ঐক্য: ২০১২ সালের ১ জুন `নাগরিক ঐক্য` প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি মোটামুটি জনমহলে পরিচিত। এছাড়া, চাকসুর সাবেক জিএস, এমনকি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। সংস্কারপন্থী হিসেবে যে কয়জন আছেন, এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। উনি নিজে জনমহলে যতটা পরিচিত, ততটাই অপরিচিত তার দল নাগরিক ঐক্য। মাহমুদুর রহমান মান্নার পর এই দলে দ্বিতীয় কেউ আছে কি নাই, তা কেউ জানে না। এই দলটি কিভাবে চলে, কাদের মাধ্যমে চলে, এদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি, স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন পক্ষে অবস্থান করে, কিছুই পরিষ্কার নয়। এদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও নেই। হ্যাঁ, মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা প্রতিদিনই শোনা যায়, তাও মিডিয়ার বদলৌতে, অন্য কোনো দল বা সংস্থার আয়োজিত অনুষ্ঠানে। এভাবে একটি দল চলতে পারে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে রাজনৈতিক মহলে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি: ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। নাম সর্বস্ব এই দলটি বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ। এই দলেরও পরিচিতি নেই। জেলায়, জেলায় কমিটি নেই। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এমনকি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও এখন পুরোদমে প্রেসক্লাব ভিত্তিক রাজনৈতিক ব্যক্তি। প্রেস ক্লাবের এসির ভেতরে সংবাদ সম্মেলনে ওনাকে প্রায়শই দেখা যায়।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি): ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্ণেল অলি আহমেদ সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)। এসময় দলটিতে বিএনপি থেকে আগত ২৪ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যও দলটিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এর পরের বছর, ২০০৭ সালে আদর্শগত কারণে বিকল্প ধারা, এলডিপি থেকে বের হয়ে যায়। বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি। কর্নেল অলি দলটির প্রেসিডেন্ট। আর উনার স্ত্রী দলটির কার্যনির্বাহী প্রেসিডেন্ট। উনি ছাড়া দলটিতে পরিচিত কোনো মুখ নেই। উনার স্ত্রীকেও কেউ চেনে না। একা একাই কর্নেল অলি দল চালাচ্ছেন। এ দলের কোনো কাউন্সিল হচ্ছে বা হবে, এমন কথা শুনা যায় না। দলীয় কর্মকাণ্ডও নেই। দলটি কিভাবে চলে বা এলডিপিকে রাজনৈতিক দল বলা যায় কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে রাজনৈতিক মহলে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব): ২০০২ সালে আ.স.ম. আবদুর রবের নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দলটিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি নামে ডাকে। জেএসডির বর্তমান সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক। এবং স্বভাবতই আবদুল মালেককে কেউ চেনেন না। জাসদের কথা শুনলে এখনো অনেকে আঁতকে উঠেন। 

গণসংহতি আন্দোলন: ২০০২ সালের ২৯ আগস্ট ‘জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার আহ্বান’ দিয়ে যাত্রা শুরু করে গণসংহতি আন্দোলন। দলটির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তারপর কে, কেউ জানে না। কমিটিরও খবর নেই। অনেকেরই অভিযোগ আছে যে, দলটি বর্তমানে জামাত-শিবির এজেন্ট নুরুল হক নুর ও ইসলামি দলগুলোর সাথে জোনায়েদ সাকি রাজনীতি করছেন। অনেকে গণসংহতি আন্দোলন দলটিকেই জামাতপন্থী বলে অভিহিত করছেন। তবে কাগুজে কলমে দলটি বাংলাদেশে বামপন্থীদের জোটবদ্ধ সংগঠন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাথে জোটবদ্ধ। 

এনডিএম: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংক্ষেপে ‘এনডিএম’ নামে দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন হঠাৎ পরিচিতি পাওয়া জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ববি হাজ্জাজ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক টালমাতালের সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যান। বর্তমানে তিনি এখন এই দলটির প্রধান। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কম নেই অর্থের জোর। এই দলের কমিটিতে যারা রয়েছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন পরিচিত কেউ নেই। মূলত ববি হাজ্জাজকে সামনে রেখেই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, নামসর্বস্ব এসব দলের বেশিরভাগেরই নেই কোনো নিজস্ব অফিস। রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে দেখা যায় না। অথচ এসব রাজনৈতিক দলের ব্যানার-পোস্টার রাজধানীজুড়ে ছেয়ে থাকে। এসব পোস্টারে নীতিবাক্যই বেশি থাকে। এসব ধরনের রাজনৈতিক দলের পোস্টার শুধু প্রেস  ক্লাব এলাকায় বেশি দেখা যায়। পোস্টারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সভাপতির বেশি ফোকাস করা হয়ে থাকে। এদের কার্যক্রম শুধু বিভিন্ন দেয়াল ও বাসের গায়ে পোস্টারে সীমাবদ্ধ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে নিবন্ধিত যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তারাও সক্রিয় না। ফলে এসব ‘ভূইফোঁড়’ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। খালি জায়গা অবশ্যই পূর্ণ হয়ে যাবে। নিবন্ধিতরা কাজ করে না বলে অনিবন্ধিতদের আর্বিভাব ঘটে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় কিছু কিছু দল গড়ে উঠছে। এ দলগুলোর আদর্শিক ভিত্তি নেই। এরা দেশের বড় দুই-তিন দল আছে, তাদের সঙ্গে মিলে যায়। ক্ষমতার সুযোগ নেয়ার জন্যই এমনটা করে। অনেক সময় নামসর্বস্ব এসব দল নিয়ে হাস্যরসও তৈরি হয় বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭