ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির ক্যাপসুল ফর্মুলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/10/2021


Thumbnail

কুমিল্লার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়, প্রত্যেকটি ঘটনা একই ফর্মুলায় এবং একই কায়দায় সংঘটিত হচ্ছে। প্রথমে একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই গুজবটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছু মানুষ যেন তৈরিই থাকছেন, এরপর তারা হিন্দু সংখ্যালঘু এলাকায় যাচ্ছে, নির্বিচারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট করে চলে আসছে। এরপর এই ঘটনায় সঙ্গে যারা মূল উদ্যোক্তা তারা গা ঢাকা দিচ্ছেন। এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজব সৃষ্টিকে বলা হয় ক্যাপসুল ফর্মুলা। এই ফর্মুলাটা বিএনপির আবিষ্কার। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি প্রথমে এই ক্যাপসুল ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিল। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ধ্বংস করে দিতে হবে এবং এজন্য বাংলাদেশে ১৪৮ টি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা বিএনপি-জামায়াত চিহ্নিত করেছিল। ১ অক্টোবরের নির্বাচনের রাতেই শুরু হয় এই ক্যাপসুল ফর্মুলা। ক্যাপসুল ফর্মুলার মূল বৈশিষ্ট্য হলো যে, একটি গুজব ছোট আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এবং এই গুজব বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষজনের কাছে পৌঁছানো হবে এবং জনগণকে উত্তেজিত করা হবে। উত্তেজিত জনগণ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা করবে। এই ক্যাপসুল ফর্মুলায় যারা মূল গুজবটি সৃষ্টি করেন তারা ঘটনার আড়ালে থাকেন। এই ক্যাপসুল ফর্মুলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যে, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করা হয়, উত্তেজিত করে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এই সময় বিএনপির পরিকল্পনা ছিল যে, আওয়ামী লীগের প্রধান ভোটব্যাঙ্ক সংখ্যালঘুদের যদি বিতাড়িত করে দেওয়া যায় তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর এজন্যই বিএনপি সেই সময়ে ক্যাপসুল ফর্মুলা চালু করেছিল। তখন বাংলাদেশে এরকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না, ফেসবুক টুইটার ছিল না। সেসময় গুজব ছড়ানো হত কান কথার মত করে একজন একটি আরেকজনকে বলতো। এভাবেই পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হতো। সাধারণত গুজব ছড়ানো হয় দেশব্যাপী কিন্তু বিএনপির এই ক্যাপসুল ফর্মুলায় একটি ছোট্ট গণ্ডিকে ক্যাপসুল এলাকাকে চিহ্নিত করা হতো। যে এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত এবং সেই এলাকায় ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে এমনি হিন্দুদের নিয়ে এসব হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটা অসন্তোষ বা এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। এই সমস্ত এলাকায় এই গুজব ছড়িয়ে দিয়ে মানুষজনকে উত্তেজিত করা হতো এবং আক্রমণের প্রথম ধাপটি পরিচালিত হত কিছু পেশাদার সন্ত্রাসী এবং দুর্বৃত্তদের দিয়ে। তারপর তারা সরে পড়তেন। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে না বুঝে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় নিজেদেরকে যুক্ত করতেন।

ঠিক ২০০১ সালের এই মডেল এবার অনুসরণ করা হয়েছে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এবার গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে আর শারীরিক যোগাযোগের পথ ব্যবহার করা হয়নি, এবার গুজব ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পীরগঞ্জের ঘটনাটি যদি দেখা যায়, সেখানে ফেসবুকে একজন সংখ্যালঘু তরুণ আপত্তিকর বক্তব্য বলেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। আসলে সংখ্যালঘু তরুণ কি ছড়িয়েছে, তার ফেসবুক পেজে কি বলেছে সেটি সম্পর্কে যাচাই-বাছাই ছাড়াই মানুষ উত্তেজিত হয়েছে এবং পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় যেয়ে ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এই ক্যাপসুল ফর্মুলাই এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭