ইনসাইড বাংলাদেশ

সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে নীরব, লোভের রাজনীতিতে সুশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/10/2021


Thumbnail

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজায় কুমিল্লার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ২৪টি জেলায় মণ্ডপে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ সম্প্রতি পীরগঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হতে দেখা যায়নি দেশের কথিত সুশীল সমাজকে। সুশীল সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করা বুদ্ধিজীবীদের কেউ বিবৃতি দেননি, নিন্দাও জানাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন। অথচ এরাই আবার চুন থেকে পান খসলে গণতন্ত্র,-নারী অধিকার, মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, সন্ত্রাস, ধর্ষণ  ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে গালাগাল করেন। কিন্তু এ ধরণের জাতীয় ইস্যুতে সুশীল সমাজের চুপটি থাকার রাজনীতি নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেকসহ শঙ্কাও তৈরি করছে নানা মহলে। দেশে সুশীল সমাজ বা বুদ্ধিজীবী বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এবং সবাই যার যার রাজনীতি ও ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত বলে অনেকেই মনে করছেন।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, মাঝে মাঝে ফোঁস করে ওঠতে হয়। নইলে বদ লোকেরা লাই পেয়ে যায়। চলমান এ সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে  সুশীল সমাজের সেই ‘ফোঁস’ করে ওঠার কথা। কিন্তু এটা অনুপস্থিত। বলা হয়ে থাকে যে, অধুনাতন পুঁজির যুগে বুদ্ধিজীবী হলেন একজন বেতনভোগী শ্রমিক মাত্র। অন্যের কথা টাকার বিনিময়ে যেকোনো সময় বলেন তারা। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ চলমান সাম্প্রদায়িক ইস্যু। এ ইস্যুতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইংরেজি দৈনিক মাহফুজ আনাম দৈব কারণে এ ইস্যুতে জাতিকে বিভক্তির পায়তারা করছেন। যেখানে এদের স্পষ্ট করে বলার কথা, মৌলবাদীদের কোনো দেশ নেই, ঘর নেই, সমাজ নেই। তারা একই সঙ্গে দেশ, সমাজ ও ব্যক্তির শত্রু।  আমরা সকলে এক। আমাদের এক থাকতে হবে। এটা না করে তারা দেখছেন ঘটনাটা কোন দিকে হেললো, কোন দলের অবস্থান ভালো, অর্থাৎ নিজেদের দলীয় সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। আবার এরাই নিজেরা নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে দাবি করেন। বিবৃতি লেখেন, সই করেন। আবার সেই বিবৃতি নিজেদের কাগজেই ছাপান। 

আহমদ ছফা ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ বইয়ে বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন, শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। এখন যা বলছেন তা শুনলে বাংলাদেশের সমাজ-কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে না।’ দিনকে দিন ছফার এই উক্তিটি ধ্রুব সত্য হতে চলেছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলে দাবি করা এখনকার বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীই সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে কোনো কথা বলে না। ভয় পায়। এ ধরণের জাতীয় সংকটে সোচ্চার না হয়ে, কথা না বলে উল্টো এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে ফেলে। কিন্তু একটি সুশীল সমাজ হলো জাতীর বিবেক। এটা আওয়ামী লীগের ইস্যু না, এটা বিএনপিরও না। এটা বাংলাদেশের ইস্যু, বাঙ্গালির অস্তিত্বের ইস্যু। আমরা আগে বাঙ্গালি, পরে ধর্ম। এ রকম সময়ে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে থাকে যে, বুদ্ধিজীবীরা কথা বলবেন, বিভিন্ন মাধ্যমে সরব হবেন, রাজপথে নামবেন, নিপীড়িত মানুষসহ গোটা জাতিকে আশ্বস্ত করবেন। এটা না করে বরং সুশীলরা উল্টো ঘটনাটির রাজনীতিকরণ করছেন। তদন্তের আগেই রায় দিয়ে দিচ্ছেন। সুশীলদের এ ধরণের আচরণের সঙ্গে একমাত্র মতলববাজদের আচরণের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফলে এ ধরণের পরবুদ্ধিজীবীর একমাত্র লক্ষ্য সরকার বিরোধীতা কি না, এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। 

প্রাসঙ্গিক আলোচনার সূত্র ধরে এটা বলা যায় যে, সার্বিক বিবেচনায় আমাদের সুশীল সমাজকে নিয়ে কথা বলার সুযোগ ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। ধর্মের মতো এত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগে যারা অভিযুক্ত তারা কতটা সুশীল সমাজে থাকার যোগ্যতাকে সংরক্ষণ করেন, তা চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। আবার বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়া এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ঘৃণাকে বিস্তারকারী হিসেবে কুখ্যাত, অজ্ঞ, ধর্মহীন ব্যক্তিগুলোর সঙ্গে তাদেরকেও একই বিচারের কাঠগড়ায় তোলা সময়েরই দাবী বলে উল্লেখ করছেন বিশিষ্ট জনেরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭