ইনসাইড টক

‘অনেক শিক্ষক হয়তো ন্যায্য আচরণটা করে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/10/2021


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আত্মহত্যা একটা রোগ। একজন যে কারণে করে যারা একই কারণে হতাশাগ্রস্ত থাকে তারা আবার এটা দ্বারা প্ররোচিত হয়। করোনার কারণে আমাদের দেশে না সারা বিশ্বেই তরুণদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করতেছে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়। যেগুলোকে কারণ হিসেবে বলা হয় যেমন- বহু মানুষ ভালো রেজাল্ট করতে পারে নাই, ব্যবসায় সফল হয়নি তারা কি আত্মহত্যা করেছে। এটা আসলে একটা রোগ। এটার জন্য যেটা দরকার যে, অনেক সময় শিক্ষার্থীরা যে অন্যায্য আচরণ পায় না তা না। অনেক শিক্ষক হয়তো ন্যায্য আচরণটা করে না।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা, কারণ সহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমি বলব যে, এটা যদি ন্যায় সঙ্গত আচরণ হয় শিক্ষার্থীদের প্রতি তাহলে যে গুজব গুলো আসে, সে গুলো হয়তো আসবে না। এ ব্যাপারে শিক্ষকদেরও সচেতন হওয়া উচিৎ। আত্মহত্যা করার লক্ষণগুলো যখন কোন ছাত্রের মাঝে দেখা দেয় সেটা একদিনে হঠাৎ করে দেখা দেয় না। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর আগেও কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক দিন থেকেই তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা বিষয়টি বুঝতে পারে। শিক্ষকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দেখা যাচ্ছে যে কোন একটা ছাত্র  খুব সেন্টিমেন্টাল। পরীক্ষা খারাপ হলো, নাম্বার কম পেলো এতেও যদি সেন্টিমেন্টাল হয়ে যায় সেখানে কাউন্সিলিং করার যে বিষয়টা আছে সেই কাউন্সিলিংটা এখন জোরদার করা দরকার। 

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্রের অবশ্যই নিজস্ব পার্সোনালটি রয়েছে। সেটার মধ্যে তার শিক্ষকের হাত ছিল না, তার পরিবার এবং স্কুল-কলেজ ওইখান থেকে আসছে। আসার পরে যখন বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে বিশেষ করে ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে। ইমোশনের এই ঘটনা গুলো অনেকে সহ্য করতে পারে, অনেকে পারে না। সেক্ষেত্রে যখনই এই ধরনের লক্ষণ ছাত্রদের মাঝে দেখা যাবে, তার বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, শিক্ষকদের এই ব্যাপারে  যত্ন নেয়া উচিৎ এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে এনে মনোবিজ্ঞানের সহায়তায় অথবা যেভাবে সাপোর্ট দিলে সে এটা থেকে বের হয়ে আসতে পারে তেমনটা করা উচিৎ। যখনই এমন লক্ষণ দেখা দিবে ছাত্রদের কাউন্সিলিং এর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে যদি তাকে সাপোর্ট দেয়া হয় তাহলে এই রোগ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমি ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছি। একজন ছাত্রও বলতে পারবে না তার সাথে আমার কোনোরকম সমস্যা হয়েছে। এমনকি শিবিরের নেতা, ছাত্রদলের সভাপতি ওরাও আমার ছাত্র ছিল, তাদের সাথেও কোনো পক্ষপাত করি নি, কখনও কম নাম্বার দেই নি। কোনো শিক্ষকেরই এটা করা উচিত না। আর আমি মনে করি যে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই যখন তার কোনো অবকাঠামো নাই, ল্যাবরেটরি নাই, রিসার্চের লোক নাই, মাস্টার্সে থিসিস নাই সেখান থেকে টিচার বানানো উচিত নয়। আস্তে আস্তে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কালচার ডেভেলপ করা উচিত যেখানে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।

শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে ন্যায়নিষ্ঠ হবে। সে শিক্ষক হিসেবে কাউকে যদি কম নাম্বারও দেয় তার একটা জাস্টিফিকেশন থাকবে। পরীক্ষা দেয়ার পরে নাম্বার দেয়া হলে আমি তো প্রতিটা শিক্ষার্থীর খাতা দিয়ে দিতাম। দেখতে দিতাম, তারা কোথায় ভুল করেছে, কেন ১০ এর মধ্যে একজন ৮ পেয়েছে,  আরেকজন ২ পেয়েছে মিলিয়ে দেখার সুযোগ দিতাম। তবে জনপ্রিয়তার জন্য ও নিজেকে খুব ভালো শিক্ষক প্রমাণের জন্য সবাইকে খুব বেশি করে নাম্বার দিয়ে দেয়াও উচিত না। যে যা পাবে এতে যদি সে আত্মহত্যা করে ফেলে করুক, কিন্তু তাকে ন্যায্য নাম্বার দিতে হবে। তাকে জানতে দিতে হবে কেন সে ফেল করেছে, কেন কম পেয়েছে? কিন্তু তাকে যদি জানতে না দেয়া হয়, তার ভুলগুলো সংশোধনের সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে এটা অন্যায়। সব শিক্ষকের উচিত তাকে বুঝানো এবং একটু কাউন্সেলিং করলে ছাত্ররাও ভালো রেজাল্ট করবে আর আত্মহত্যা প্রবণতাও কমে আসবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭